নেপথ্যে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়ার সাইবার যুদ্ধ
৯ মে ২০২২এ পর্যন্ত হ্যাকারদের এমন বাহিনী কখনো দেখা যায়নি৷ ইউক্রেনকে রাশিয়ার ডিজিটাল হামলারও মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ ইউক্রেনের উপ প্রধানমন্ত্রী ও ডিজিটাল বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মিখাইলো ফেডেরভের ডাকে সাড়া দিয়ে আড়াই লাখেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সে দেশের আই-টি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন৷ রাশিয়ার উপর সাইবার হামলাই তাঁদের লক্ষ্য৷ অক্সফোর্ড ইনফরমেশন ল্যাবসের জর্জিয়া অসবোর্ন বলেন, ‘‘সেই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দেশপ্রেমী হ্যাকিং অ্যাক্টিভিস্ট রয়েছে৷ তারা কখনো বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, কখনো বা সরকারের ওয়েবসাইট বিকল করে লজ্জাজনক অবস্থা সৃষ্টি করছে৷ কিন্তু আমার মতে সাইবার যুদ্ধের ঘোষণা তারা করে নি, বরং বিবৃত করছে৷''
মূলত অস্ত্রের জোরেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে৷ শহরে বোমাবর্ষণ, আবাসন ধ্বংসের কারণে মানুষকে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে হচ্ছে৷ দৃশ্যমান সেই যুদ্ধের পাশাপাশি দুই পক্ষই অনলাইন ও ডিজিটাল হামলাও চালাচ্ছে৷ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্টেফান দুগ্যাঁ মনে করেন, ‘‘সাইবার হামলা ঘটলে পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটে৷ সংঘাতের ঝুঁকির মধ্যে আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি৷''
তবে পথে ট্যাংক নামার আগেই হ্যাকাররা ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়েছে৷ সরকার ও ব্যাংকের ওয়েবসাইট বিকল করে দেওয়া হয়েছে এবং সংক্রমিত কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার তথ্য নষ্ট করে দিয়েছে৷
২০১৪ সালে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপর বড় আকারের সাইবার হামলা ঘটেছিল৷ ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হ্যাকাররা শীতের মাঝে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের একটা অংশ বন্ধ করে দিয়েছিল৷ ২০১৭ সালে এক সাবোটাজ সফটওয়্যার হার্ড ডিস্ক ও সার্ভার মুছে দিয়েছিল৷ জর্জিয়া অসবোর্ন বলেন, ‘‘২০১৭ সালে নোটপেটিয়া নামের বড় আকারের এক হামলার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্পজগতের ক্ষতি হয়েছিল৷ মেয়ার্স্ক নামের জাহাজ কোম্পানিও সেই ধাক্কা সামলেছে৷ অনেক শিল্পের উপর এমন হামলায় গোটা বিশ্বে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার অংকের ক্ষতি হয়েছে৷ অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী এর বড় প্রভাব টের পাওয়া গেছে৷''
রাশিয়া থেকে সন্দেহভাজন সাইবার হামলা আজও বন্ধ হয়নি৷ গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তথ্য চুরি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো অবকাঠামোর উপর ডিজিটাল হামলা ঘটছে৷ সামরিক বাহিনীর যোগাযোগও লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে৷ গিসেকে ও ডেভরিয়েন্ট কোম্পানির কর্ণধার রাল্ফ ভিন্টারগ্যার্স্ট বলেন, ‘‘ভুলবেন না, আজ প্রতিটি ট্যাংক, প্রত্যেকটি বিমানে উন্নত কম্পিউটার বসানো রয়েছে, যেগুলি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত৷ সেই সব যন্ত্রের মধ্যে বড় আকারের সাইবার প্রযুক্তি রয়েছে৷''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইউক্রেন রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করছে৷ ডিজিটাল মন্ত্রী মিখাইলো ফেডেরভ তাঁর যুদ্ধবিরোধী অভিযানে টুইটার ব্যবহার করছেন৷ ইন্টারনেট চালু রাখতে তিনি ইলন মাস্ককে অনুরোধ করেছেন৷ মাস্ক সেই অনুরোধে সাড়াও দিয়েছেন৷
তিনি বিদেশি কোম্পানিগুলির উদ্দেশ্যে রাশিয়াকে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন৷ ইতোমধ্যে অসংখ্য কোম্পানি সে দেশ ত্যাগ করেছে৷ অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা বিশাল হয়ে উঠছে৷ অক্সফোর্ড ইনফরমেশন ল্যাবসের জর্জিয়া অসবোর্ন বলেন, ‘‘ডিজিটাল মন্ত্রী হিসেবে ফেডেরভ টুইটারে অত্যন্ত সক্রিয়৷ তিনি রাশিয়ার ব্যবসাবাণিজ্য বয়কট করতে কোম্পানি প্রধানদের উপর চাপ দিচ্ছেন৷''
কম্পিউটার ভাইরাসের তুলনায় বোমার কারণে ধ্বংসলীলার মাত্রা অনেক বেশি হলেও আজ সমান্তরালভাবে বাস্তব ও ডিজিটাল যুদ্ধ চলছে৷
প্রতিবেদন: হ্যুটার/লাৎসাক/এসবি