1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নেতৃত্বে আসছেন খেটে খাওয়া মানুষ 

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

খেটে খাওয়া মানুষেরা ক্রমেই এগিয়ে আসছেন রাজনীতির মঞ্চে। বিধানসভা নির্বাচনে সেই ছবি আগেই দেখা গিয়েছিল। এবার পুরসভা নির্বাচনে টোটোচালক থেকে গৃহপরিচারিকা হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী।

https://p.dw.com/p/47ARU
Indien - Gewalt bei den Wahlen in Westbengalen
ছবি: Subrata Goswami/DW

গত বিধানসভা নির্বাচনে শালতোড়ার চন্দনা বাউরি এবং আউশগ্রামের বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি ছিলেন অন্যতম চমক। চন্দনার রাজমিস্ত্রি স্বামী জোগাড়ের কাজ করেন, তার দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা। তাতেই সংসার টানতে হয় চন্দনাকে। সেখান থেকে শালতোড়ার চন্দনা ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছেন। এই উত্তরণ সমাজের আরো অনেককে স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম আসানসোলের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী তারকনাথ ধীবর। আসানসোলের রাস্তায় টোটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা তারকনাথকে পুরভোটে টিকিট দিয়ে নজর কেড়েছিল বিজেপি। মাত্র পাঁচ ভোটের ব্যবধানে জিতে তিনিই এখন এলাকার কাউন্সিলর। আবার কলিতা মাঝির মতো অন্যের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন শান্তি পাসোয়ান। সেই শান্তিই এবার উত্তর দিনাজপুরের পুরভোটে বড় চমক। ডালখোলার শান্তিপাড়ার এই বাসিন্দা এখন পুরভোটে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী। টোটো চালক থেকে কাউন্সিলর বাঁকুড়ার শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা এসেছিলেন আসানসোলের তারকনাথের পক্ষে ভোট প্রচারে। চন্দনাকে অনুপ্রেরণা মনে করেন ২৪ বছরের তারকনাথ। তাই ভোটে জিতে প্রথম ফোনটাই তিনি বিধায়ক দিদিকে করেন। চন্দনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "উনি আসলে আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, এটা বলা ঠিক নয়। উনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। ওর জয় দেখে আমি আনন্দিত। ওর প্রচারে আমি গিয়েছিলাম ঠিকই। তবে মানুষই ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন।" কেন মানুষ তারকনাথকে ভোট দিলেন? চন্দনার বক্তব্য, "সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ লড়াই করতে পারেন। মানুষের মনে হয়েছে, খেটে খাওয়া টোটো চালক তাদের ন্যায্য দাবি তুলে ধরতে পারবেন।" তারকনাথের বাবা পেশায় মৎস্যজীবী। মাধ্যমিক পাশ তারকনাথ নিজের টোটো নিয়েই বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার করেছিলেন। মাসে আয় হাজার চারেক টাকা। টোটোও তার নিজের নয়, ভাড়া করা। সেজন্য টোটোর মালিককে ভাড়া বাবদ রোজ ২৫০ টাকা দিতে হয়। ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন তারক।

তারকনাথ ধীবর

যেখানে তৃণমূলের জয়জয়কার, সেখানে তিনি পদ্ম প্রতীকে মাত্র পাঁচ ভোটের ব্যবধানে জিতে কাউন্সিলর। এলাকার উন্নয়ন কীভাবে করবেন? তারকনাথ বলেন, "আমাদের এলাকায় উন্নতি কিছুই হয়নি। বৃদ্ধদের বার্ধক্যভাতা নেই। এমন প্রবীণ মানুষ এলাকায় আছেন যাকে অন্যের বাড়ি বাসন মেজে খাবার জোগাড় করতে হয়। অনেকের প্রয়োজন থাকলেও আবাস যোজনায় বাড়ি পাচ্ছেন না। পেলেও কাটমানি বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে শাসক দলকে।" তারক মাটির বাড়িতে থাকেন। ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। টোটো চালানোর আগে তারকনাথ অন্য কাজ খুঁজেছেন। সাবেক কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করেও কোনও সুরাহা পাননি। এর প্রতিবাদে লড়াইয়ে নেমে তিনি নিজেই তরুণের স্বপ্ন পূরণ করার শপথ নিয়েছেন। গৃহ পরিচারিকা কি হতে পারবেন জনপ্রতিনিধি? ডালখোলার শান্তির বয়স যখন ১২ বছর, তখন বাবা মারা যান। তারপর থেকে শুরু হয়েছে জীবন সংগ্রাম। উত্তরপ্রদেশে শ্বশুরবাড়ি হলেও তিনি বাপেরবাড়ি ডালখোলাতেই থেকে যান। কিন্তু অসুস্থ স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বছর চল্লিশের শান্তির জীবনের সংগ্রাম ফুরোয় না যেন। শিক্ষা, অর্থের অভাব যে তাদের অপমান, অবহেলা আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি! তিনি বলেন, "আগে তিন-চার বাড়ি কাজ করতাম। এখন আর পারি না। তাই দুই বাড়ি কাজ করি। কবে যে সমাজ অশিক্ষিতদের মান-সম্মান দেবে, আর কবে যে দুটো ভালোমন্দ খেতে পাব, জানি না।" ২৭ ফেব্রুয়ারি ডালখোলা পৌরসভার ভোট। তাই পরিচারিকার কাজ থেকে ছুটি নিয়ে জোরকদমে প্রচারে নেমে মানুষের অভিযোগ শুনছেন শান্তি। জয় পেলে গরিব মানুষদের সব সমস্যার সমাধান করতে চান। এলাকায় ঠিকঠাক রাস্তাঘাট নেই, অধিকাংশ লোকের বাড়ি, শৌচাগার নেই। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি হয়েছে, তবে সেটা নিছক মাথা গোঁজার জন্য। অধিকাংশ কাজই বাকি। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে থাকার পরে অবশেষে টিকিট পেলেন। একজোড়া কানের দুল এবং পায়ের তোড়া বন্ধক রেখে টাকার ব্যবস্থা করেছেন। বিজেপির আগে তৃণমূলের শিবিরে যাতায়াত করে কোনো সুবিধা পাননি। ডয়চে ভেলেকে জীবনের লড়াই বর্ণনা করতে করতে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, "কিছুই তো হল না। কিছুই পাইনি। তিন-চার দিন না খেয়ে থাকি, কেউ দেখে না। স্বামীর জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারিনি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও পেলাম না। শুধু আমি নয়, এরকম অনেক মহিলা কষ্ট পাচ্ছেন। ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব মানুষরা কিছুই পায় না।" উল্টোদিকে হেভিওয়েট প্রার্থী তৃণমূলের রাকেশ সরকারের বাড়িতে দুধ দিতে যান শান্তি। এবার তার বিরুদ্ধেই ভোটের ময়দানে লড়াই।