নির্বাচন বন্ধের আহ্বান...
৩ জানুয়ারি ২০১৪
বিএনপি নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানালেও, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু তাঁর বেতার টেলিভিশন ভাষণে দেশবাসীকে উত্সবমূখর পরিবেশে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
নির্বাচনের দু'দিন আগে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক তাঁর গুলশানের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ এই নির্বাচনে দেশের মানুষের কোনো আগ্রহ নাই৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতিমধ্যে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ তারপরও প্রধানমন্ত্রী একগুঁয়েমির পথ থেকে ফিরে আসছেন না৷''
তিনি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘এখনো সময় আছে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য সংলাপের ব্যবস্থা নিন৷ এই প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মানবে না৷ কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবে না৷''
ড. ওসমান ফারুকের দাবি, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে৷ আর সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে তার নীলনকশা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে দেশকে আজ দলীয় সন্ত্রাসের লীলাভূমিতে পরিণত করা হয়েছে৷ মানবতা পিষ্ট হচ্ছে যৌথবাহিনীর বুটের তলায়৷
তাই তিনি জনগণের প্রতি বিএনপির চেয়ারপার্সনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে ‘না' বলার আহ্বান জানান৷
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেতার ও টেলিভিশনে তাঁর নির্বাচনি ভাষণে বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করেছিলাম জনগণের ওপর আস্থা রেখে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে৷ কিন্তু আমাদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নাই৷'' তিনি বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের জন্য নানাভাবে চেষ্টা হয়েছে৷ তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে নিজে টেলিফোন করেছেন৷ শেষ পর্যন্ত মহাচিব পর্যায়েও বৈঠক হয়েছে৷ তারপরও বিএনপি নির্বাচনে আসেনি৷ দেশের সংবিধান সমুন্নত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহ রাখতে এই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটকে নির্বাচিত করেছিল৷ নির্বাচনে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ তা পূরণের চেষ্টা করেছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচনি ওয়াদার চেয়েও বেশি কাজ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবে৷'' এ জন্য দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন আশা করেন তিনি৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল আন্দোলনের নামে, হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে৷ ককটেল আর পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে৷ রাস্তা কেটে, রেললাইন উপড়ে ফেলে, কাছ কেটে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করেছে৷
শেখ হাসিনা ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে স্থানীয় সরকার এবং উপ-নির্বাচনে আপনারা যেভাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছেন, সেভাবেই আগামী ৫ই জানুয়ারি উত্সবমূখর পরিবেশে ভোট দেবেন৷ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবেন৷''
উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৩৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২৫টি দল এই নির্বাবচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে৷