1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যেও প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোতে এখন প্রতিমা বানানোর কাজ চলছে৷ কিন্তু এরইমধ্যে দেশের কয়েকটি এলাকায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/4l7Iu
Bangladesch | Unbekannte wüten in zwei Tempeln in Bhanga Bazar im Bhanga Upazila in Faridpur
ছবি: Ramjan Shikder

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও ঘটনা ঘটছে৷

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোর রাত চারটার দিকে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মধ্যবাজারে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে এক যুবককে আটক করেছে৷

গৌরীপুর মধ্যবাজার পূজা কমিটির সাবেক সভাপতি পীযূষ রায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ২০ দিন ধরে মন্দিরটিতে প্রতিমা বানানোর কাজ চলছিল৷ শুধু প্রতিমার রঙের কাজ করা বাকি ছিল৷ পূজা শুরুর এক দিন আগে মন্দির থেকে মণ্ডপে প্রতিমা নেওয়ার কথা ছিল৷ ‘‘কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর রাত চারটার দিকে এক তরুণ মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙচুর করেন৷ সেখান থেকে ভাঙা প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় মন্দিরের পাশের বাড়ির ডলি রানি দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন৷ এ সময় অখিল চন্দ্র বিশ্বশর্মা ও বিপুল ঘোষ এসে তরুণকে ধরে ফেলেন৷ পরে সকালে এসে পুলিশ নিয়ে যায়,'' বলে জানান তিনি৷ পীযূষ রায় জানান, আগে তাদের মন্দিরে কখনো প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি৷

১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে দুইটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷ ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারের গুড়পট্টি এলাকায় অবস্থিত ‘ভাঙ্গা বাজার সার্বজনীন হরি মন্দির' এবং ভাঙ্গা থানার সামনে অবস্থিত ‘ভাঙ্গা সার্বজনীন কালি মন্দির'-এ এই ঘটনা ঘটে৷ ৭৫ বছর ধরে ওই মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে৷ মন্দির দুইটিতে প্রতিমা ভাঙার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ প্রথমে তাকে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রচার চালিয়েছিল৷ পরে অবশ্য দেখা যায় তিনি ঐ এলাকার বাসিন্দা এবং বাংলাদেশি নাগরিক৷

‘আশ্বস্ত হতে পারছি না'

গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের গলাচিপা গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ মন্দিরটির সভাপতি বিপুল সমাদ্দার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে৷ সকালে মন্দিরে গেলে বিষয়টি নজরে আসে৷ পরে সবাইকে জানানো হয়৷ এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ চার-পাঁচটি প্রতিমা ভাঙা হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে মামলা করেছি৷ কিন্তু এখানো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের নিরপত্তার আশ্বাস দিয়েছে৷ কিন্তু আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না৷''

বিপুল সমাদ্দার জানান, ‘‘এখন যে প্রতিমাগুলো ভাঙা হচ্ছে সেগুলো নির্মাণের শেষ পর্যায়ে৷ এখন নতুন করে প্রতিমা নির্মাণ বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷''

এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে কেউ পূজাকে কেন্দ্র করে অশান্তির চেষ্টা করতে পারবে না: এআইজি ইনামুল হক সাগর

উত্তরা মাঠে এবার পূজা হচ্ছে না

খেলার মাঠে দুর্গাপূজা করার বিরুদ্ধে কিছু লোক অবস্থান নেওয়ায় এবার ওই পূজা হবে উত্তরার ‘মুগ্ধ চত্বরে'৷

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিবছরই উত্তরা মাঠে দুর্গাপূজা হতো৷ এবার কী এমন হলো যে সেখানে করা যাবে না৷ এ থেকে আমরা অদৃশ্য চাপ অনুভব করছি৷''

তিনি জানান, ‘‘এরইমধ্যে ফরিদপুর, বরগুনা, নিলফামারী, লক্ষীপুরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ এমনকি একদিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷''

দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সরকারের সব পর্যায়ে বৈঠক করেছি৷ তারা আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করছেন৷ কিন্তু আমরা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছি না৷ আর এটা শুধু পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ এর জন্য দরকার সমাজের সব মানুষের সহযোগিতা৷''

কলাবাগান মাঠে এবার পূজা হবে

বাংলাদেশ পূজা উযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘‘উত্তরায় যেটা হয়েছে, আমরা আলোচনার ভিত্তিতেই মাঠ থেকে পূজা আরেক জায়গায় সরিয়ে নিয়েছি৷ এটা নিয়ে আর কোনো সমস্যা নাই৷ আর কলাবাগান মাঠে পূজা বন্ধ করেছিলেন সাবেক মেয়র তাপস৷ এবার কলাবাগান মাঠে পূজা হবে৷''

তিনি জানান, ‘‘সারাদেশে কতগুলো মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে তার সঠিক হিসাব আমাদের কাছে এখনো নেই৷ তবে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি৷ অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই করে আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই তথ্য প্রকাশ করব৷ কবে ৫ আগস্ট থেকে এপর্যন্ত আমরা মন্দিরে হামলাসহ নানা ধরনের হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়েছি দেড় হাজারের বেশি৷''

সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের পূজার নিরাপত্তা চেয়েছি৷ এখন পর্যন্ত সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে আমরা আশ্বস্ত৷''

তিনি জানান, ‘‘এবার সরকারি হিসাবে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে৷ তবে আমরা বলছি ৩২ হাজার প্লাস৷ আমরা চেষ্টা করছি যেন পূজা উৎসব মুখর পরিবেশে হয়৷''

আমরা অদৃশ্য চাপ অনুভব করছি: অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ

তিন স্তরের নিরাপত্তা

এবার পূজায় তিন স্তরের নিরাপত্তার কথা বলছে পুলিশ৷ পূজার আগে, পূজার সময় ও পূজার পরে৷ পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরইমধ্যে পূজা ও পূজা মণ্ডপের প্রথম স্তরের নিরাপত্তার কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ আমাদের অবস্থান হলো, এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে কেউ যেন পূজাকে কেন্দ্র করে অশান্তির চেষ্টা না করতে পারে৷ সেজন্য আমরা কঠোর অবস্থানে আছি৷ কেউ চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আমরা আইনের আওতায় আনছি৷ ওইসব মন্দিরে বিশেষ নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে৷ আর নতুন করে যাতে কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা নজরদারি আরো বাড়িয়েছি৷ আর কারুর কাছে যদি এই ধরনের কোনো তথ্য থাকে আমাদের জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি৷ আমরা তথ্য পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেব৷ এই ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি৷''

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আসলে আমরা প্রতিটি হামলার বিচার চাই৷ এপর্যন্ত যত ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিচার হলে এই পরিস্থিতি হতো না৷''

ছবিঘরে ২০২৩ সালের দুর্গা পূজা