নিম্নবিত্তের স্কুল রক্ষা পেল
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭সেদিন ওদের পরীক্ষা ছিল৷ কিন্তু স্কুলের সামনে এসে চোখে জল এসে গিয়েছিল ওদের৷ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওদের ক্লাসঘর, চেয়ার-টেবিল, ডেস্ক ভেঙে চুরমার৷ মাথার ছাদ ভেঙে পড়েছে, ধসে পড়েছে দেওয়াল৷ পড়ুয়া বাচ্চাদের হাউমাউ কান্নার মধ্যেই ক্কমশ পরিষ্কার হয় পুরো ব্যাপারটা৷ রাজারহাট রোডের ওপর, দশদ্রোণ এলাকায় যে জমির ওপর ১৯৯৭ সালে তৈরি হয়েছিল লীলাবতী মেমোরিয়াল নামে এই স্কুলটা, সেই জমিটির মালিকানা বদল হয়েছে সম্প্রতি৷ প্রোমোটার মিজানুর রহমানের সঙ্গে জমির মালিকের চুক্তি হয়েছিল, নতুন জমিতে নতুন স্কুলবাড়ি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে৷ বিকল্প জায়গার সংস্থানও হয়েছিল, কিন্তু তর সয়নি প্রোমোটারের৷ ভোররাতে ক্রেন, বুলডোজার নিয়ে এসে স্কুলবাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছিল৷
খবর পেয়ে দৌড়ে যান প্রধানশিক্ষক কৌশিক ভট্টাচার্য৷ প্রোমোটারের গুণ্ডাবাহিনীর পাহারায় তখন ভাঙচুর চলছে৷ বাধা দিতে গেলে রাস্তায় ফেলে প্রচণ্ড মারধর করা হয় কৌশিকবাবুকে৷ এদিকে খবর ছড়ায় মুখে মুখে৷ স্থানীয় মানুষ, স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা এসে ভিড় জমাতে শুরু করলে সদলে গা ঢাকা দেয় ওই প্রোমোটার৷
কিন্তু ততক্ষণে গণরোষের বিস্ফোরণ ঘটেছে৷ রাজারহাট রোড অবরোধ করে বসে পড়েন মানুষজন৷ তাঁদের মধ্যে যেমন অভিভাবকরা ছিলেন, তেমন অসংখ্য স্থানীয় মানুষও সামিল ছিলেন৷ তাঁরা সবাই দাবি তোলেন, প্রোমোটার মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ ভেঙে দেওয়া স্কুলবাড়ি নতুন করে বানিয়ে দিতে হবে৷ এর মধ্যেই খবর যায় রাজ্য সচিবালয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও পৌঁছে যায় এই ঘটনার কথা৷ এর পরই তৎপর হয় পুলিশ৷ গ্রেপ্তার হয় ওই প্রোমোটার এবং স্কুলশিক্ষা দপ্তরের হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত হয়, ওই ভেঙে দেওয়া স্কুলবাড়িতেই আবার ক্লাস বসবে৷ বলা বাহুল্য, এই সিদ্ধান্ত অনেকটাই প্রতীকী ছিল৷ কারণ, ভেঙে দেওয়া স্কুলবাড়িতে পড়ানোর মতো পরিস্থিতি আর ছিল না৷ তবু ত্রিপলের অস্থায়ী ছাউনি টাঙিয়ে একদিন সকালে ক্লাসও হয় বাচ্চাদের৷ তারপর, নিরাপত্তার কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত হয়, যতদিন না ফের ক্লাসঘর তৈরি হচ্ছে, স্কুল ছুটি থাকবে৷ ততক্ষণে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন, ওই জায়গাতেই হবে স্কুল৷ সরে যেতে হবে প্রোমাটারকে, বাতিল করতে হবে স্কুলের জমিতে তার উচ্চবিত্ত আবাসন গড়ার পরিকল্পনাকে৷
আপাতভাবে স্থানীয় এই ঘটনা সারা রাজ্যের জন্যেই এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে জমিলোভী প্রোমোটারকে রুখে দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষ এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য তৈরি এক স্কুলের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে সরকার৷ স্কুলটি সরকার অনুমোদিত হলেও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত নয়৷ পড়ুয়াদের থেকে মাসে মাত্র ১০০ টাকা মাইনে নিয়ে কায়ক্লেশে চলত এই স্কুল৷ হঠাৎই সেই অনামী স্কুলটি হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের প্রতীক৷