নিজ নগরে নৈরাজ্য
২০ মার্চ ২০১৮নগরসাংবাদিকরা বরাবরই এসব দিকে নজর রাখেন৷ খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট নিয়ে প্রতিবেদন লেখেন৷ হরহামেশাই সেগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ কিন্তু রাস্তা সমতল হলেই কি সেটা ভালো রাস্তা হয়ে যায়? নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী বা সড়ক বিশেষজ্ঞ না হয়েও নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি, ‘হয় না'৷
রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে প্রায় সব অলিগলিতেই এতদিনে হাঁটা হয়ে গেছে৷ এইদিক একটু ভালো থাকে তো অন্যদিকের অবস্থা খারাপ৷ বর্ষায় জলাবদ্ধতা তো গরমে ধুলো৷ পূর্ণাঙ্গ বা মানসম্পন্ন রাস্তার দেখা কখনোই মেলে না৷ বলা যায় সবগুলো সড়কই যেন চরিত্রহীন৷
ঢাকার মূল শহরে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার রাস্তা আছে৷ প্রধান সড়কগুলোর প্রশস্ততার কোথাও ঠিক নেই৷ কোথাও চওড়া তো কোথাও সরু৷ যদি বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত বাদ দেই আর ভিআইপি কিছু এলাকা ছাড়া সর্বত্রই রাস্তার নকশা কোকাকোলার বোতলের মতো৷ কোথাও ৩০ ফুট প্রশস্ত হলে কিছু দূর পরেই সেটা হয়ে যায় ২০ ফুট৷ আবার কোথাও ৩৫ ফুট৷ তাহলে লেনই বা তৈরি হবে কীভাবে? আর সঠিকভাবে লেন না থাকলে গাড়ি লেন ধরে চলবেই বা কীভাবে? সঠিক লেন বিন্যাস না থাকার কারণে গাড়িগুলো সুন্দরভাবে লেন ধরে চলতে পারে না৷ অথচ সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচলের জন্য লেন অপরিহার্য৷ সেটা তো ঢাকা শহরে একেবারেই নেই৷ তার ওপর আছে লোকাল বাস আর লেগুনা চালকদের রাজপথে গাড়ি চালানোর স্বেচ্ছাচারিতা৷ ইচ্ছেমতো রাস্তার মাঝে যাত্রী ওঠা-নামার দৃশ্য তো নগরে নিত্য৷
গণপরিবহণগুলো যে নির্দিষ্ট স্থানে থামবে তার জন্য নেই কোনো বাস স্টপ (দুয়েকটি পয়েন্ট ছাড়া)৷ কাজেই গণপরিবহণগুলোও রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামায়, তোলে৷ সড়ক বিভাজকগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েও নগরবাসীকে নিয়মবহির্ভূত রাস্তা পারাপার থেকে বিরত রাখা যায় না৷ এমনকি কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর দিয়ে পিঠে কাঁটা ফুটিয়ে জামা ছিড়ে ব্যস্ত ফার্মগেট এলাকায় হরহামেশা পথচারীদের রাস্তা পার হতে দেখা যায়৷ অদূরে ফুটওভারব্রিজ থাকলেও সামান্যতম পরিশ্রম করতে চান না নগরবাসী৷ ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে শিশুদের নিয়ে রাস্তাও পার হতে দেখা যায় খোদ অভিভাবকদের৷ দুর্ঘটনাও যে দুয়েকটা ঘটছে না, তা নয়৷ তারপরও জনসচেতনতা বাড়ে না৷ এই দায় অবশ্য কোনো সংস্থার ওপর চাপানো যায় না৷ নিখাদ অভদ্র ‘বাঙাল' বলেই আমরা এটা করি৷
রাস্তার সংযোগস্থলগুলোতেই দেখা যায় রাস্তা কেমন যেন আরো সংকুচিত হয়ে আছে৷ সেখানকার ফুটপাতে দোকানের অভাব নেই৷ সেখানেই দেখা যায় জমির মালিক রাস্তার দিকে বাড়িয়ে তৈরি করেছেন বহুতল ভবন বা মার্কেট৷ চৌরাস্তার মতো সংযোগস্থলে চার কোণের চারটি প্লট ফাঁকা রেখে ভবন তোলার কথা, যাতে যানবাহনগুলো বাঁয়ের লেন ধরে এগিয়ে যেতে পারে৷ এ চিত্র ঢাকা শহরের কেবল গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর ছাড়া কোথাও চোখে পড়ে না৷
এদিকে সংযোগস্থলের পাশেই রাজউক দিয়ে যাচ্ছে বহুতল ভবনের অনুমোদন৷ এমনকি এ সব ক্ষেত্রে নকশায় পাশে প্রয়োজনীয় জমিও ছাড়ছেন না প্রভাবশালীরা৷ এ সবই সম্ভব হচ্ছে রাজউক কর্তাদের উৎকোচ দিয়ে৷
দু-চারটা দেশ যখন ঘুরেছি, রাস্তার চরিত্রটা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করেছি৷ একটি লেন যখন আরেকটি রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হয়, সেখান থেকে ওই সড়ক আরো ততটাই প্রশস্ত হয়ে যায়৷ একটি লেন বাঁয়ে নেমে গেলে মূল সড়কের প্রশস্ততা ততটাই কমে যায়৷ ঢাকা শহরের কোথাও এ চরিত্র নেই৷ এমনকি বাংলাদেশের কোথাওই এই চরিত্র চোখে পড়েনি৷ এখানে লেন যুক্ত হলেও রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ে না৷ লেন বিয়োগ হলেও কমে না৷
সার্ভিস রোড বলে একটা কথার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই পরিচিত৷ ঢাকা শহরের উত্তরার যৎকিঞ্চিৎ এলাকা ছাড়া কোথাও সার্ভিস রোডের দেখা পাইনি৷ আর ডাকটাইল লেন? সেটা শুনছি পূর্বাচলে করা হবে৷ সকল ইউটিলিটি সার্ভিস ওই ডাকটাইল লেনের মধ্য দিয়ে যাবে৷ যখন-তখন রাস্তা খোঁড়া লাগবে না৷ কিন্তু পূর্বাচলেও দেখছি দিব্যি বিদ্যুতের পোলগুলো রাস্তার পাশে তাল গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ তাহলে এই একুশ শতকে এসেও আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদরা মান্ধাতা আমলের পরিকল্পনা করে এগোবেন? বিদ্যুতের পোলগুলোতে কি নগরবাসী আবারও দেখবে বিভিন্ন ক্যাবল লাইনের তারের ঝুপড়ি?
রাস্তার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ফুটপাত৷ সেই ফুটপাতেরও সুন্দর চরিত্র নেই৷ হকার, দোকানপাট, বাজার প্রভৃতি বসছে পথচারীদের ফুটপাত দখল করে৷ গুলিস্তান, নিউমার্কেট, মহাখালীর ফুটপাত দিয়ে কেউ হাঁটার চিন্তাই করতে পারেন না৷ এদিকে দুই সিটি কর্পোরেশনই ফুটপাতকে ইচ্ছেমতো ভাঙছে-গড়ছে৷ গড়ার কিছু দিন পর যে অংশ ভেঙে যাচ্ছে, সেটা আর ঠিক করা হয় না৷ এক পর্যায়ে নতুন করে পুরোটা ফুটপাতই তৈরির জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়৷ মডেলও পালটে ফেলা হয়৷ ফলে আগের ভালো থাকার টাইলস-ব্লকগুলোও ব্যবহার থেকে বাদ পড়ে৷ অথচ ভাঙা অংশ মেরামত করে দিলে অনেক আর্থিক সাশ্রয় হয়৷ সে কথা কেউ ভাবে না৷ মিডিয়ানের ক্ষেত্রেও প্রায় একই কথা প্রযোজ্য৷ আন্তর্জাতিক মানের কোনো আয়োজন হলেই নতুন করে সজ্জিত করা হয়৷ সেটাকে দেখভাল না করে নতুন আরেক আয়োজনে নতুন করে আবার সজ্জার প্রস্তুতি চলে৷ নেয়া হয় বড় অর্থের প্রকল্প৷ কিন্তু এই টাকা তো জনগণের বা নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকা৷ নীতিনির্ধারকরা বরাবরই দেখছি সেটা ভুলে যায়৷
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়েছে৷ এখন চলছে মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ৷ সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে হবে রেললাইন৷ এ জন্য রাস্তা সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে৷ ফলে ব্যবহারযোগ্য রাস্তা অনেক কম৷ সেই রাস্তাটুকু ভালো থাকলে কথা ছিল না৷ কিন্তু সেটুকুরও কোথাও গর্ত, কোথাও খানাখন্দ, ম্যানহোলের ঢাকনা নেই৷ সেটা চিহ্নিত করার জন্য দেয়া আছে গাছের ডাল৷ তার ওপর উলটোপথে রিকশা-গাড়ি চলাচল তো আছেই৷ রাস্তার ত্রুটিগুলোর কথা নগরপরিকল্পনাবিদ না হয়েও ভুক্তভোগীরা বোঝেন৷ কেবল বোঝেন না আমাদের দায়িত্বশীলরা৷ তাদের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, উন্নয়ন কাজ কি এভাবে করতে হয়? প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েও বলতে পারি, উন্নয়ন কাজ এভাবে হয় না৷ এ প্রসঙ্গ তুললে দায়িত্বশীলরা এটাকে উন্নয়নের ভোগান্তি বলে এড়িয়ে যান৷ উন্নয়ন কাজ কি কেবল বাংলাদেশেই হচ্ছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে হয় না?
শাখাসড়ক বা অলিগলির চরিত্র তো আরো ভয়াবহ৷ কেউ বলতে পারবেন ঢাকা মহানগরীর কতগুলো শাখা সড়কে দু'টো গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না? কতগুলো সড়কে আগুন নেভানোর ফায়ার সার্ভিস বা পানির গাড়ি ঢুকতে পারে না? কতগুলো সড়কে পাশাপাশি দু'টো রিকশা চলতে পারে না? আমার মনে হয়, বলা কঠিন৷ রাজধানীতে এ রকম অলিগলির অভাব নেই৷ অথচ ল্যান্ড রি-ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে এসব এলাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব৷ আশির দশকে কেবল পশ্চিম ধানমন্ডির শঙ্কর এলাকার সামান্য এলাকা রি-ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ে পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত এলাকার রি-ডেভলপমেন্টের উদ্যোগ নিয়ে রাজউক বাতিল করেছে৷ অথচ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাওয়া সিঙ্গাপুর এ পদ্ধতিইে পুরো দেশটাকে সর্বাধুনিক শহরে পরিণত করেছে৷ সিঙ্গাপুরের এখন নাম সিটি ইন দ্য গার্ডেন৷
সম্প্রতি রাজধানীর প্রধান সড়কের সড়ক বিভাজকের দু'পাশে ভিআইপিদের জন্য দু'টি পৃথক লেনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ এমনিতেই ঢাকা শহরের রাস্তা আছে মোট ভূমির ২৫ শতাংশের স্থলে ৭ শতাংশ৷ এর ওপর প্রধান সড়কে দু'টি লেন ভিআইপি ও জরুরি সেবার নামে সংরক্ষণ করা হলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? এটা বোঝার জন্যও নগর পরিকল্পনাবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ এ ধরনের উদ্ভট পরিকল্পনা যাদের মস্তিষ্ক থেকে বের হয়, জানি না তারা রাজধানীবাসীর কল্যাণে কাজ করছেন, না তাদের ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশের কথা ভাবছেন৷
বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়৷ মধ্য আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে৷ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল নির্মাণযজ্ঞ হচ্ছে৷ বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাথে চলছে বাংলাদেশ৷ তাহলে দুই কোটি নাগরিকের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি দিনে যা প্রয়োজন, সেই রাস্তার চরিত্র কেন সৎ করতে পারছি না?
ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) পরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত (!) এলাকা গড়ে তুলেছে৷ বনানী, গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সর্বশেষ পূর্বাচল-ঝিলমিল নতুন সংযোজন৷ এক সময় প্লট বরাদ্দ দিয়ে করা হয়েছিল এসব পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা৷ প্রতিটি আবাসিক এলাকা তার চরিত্র হারিয়েছে৷ আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম৷ সেই সঙ্গে উঠেছে বড় বড় ইমারত৷ বেড়েছে বিপুল জনবসতি৷ এক পর্যায়ে এসব এলাকার উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠগুলোকেও প্লট আকারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ ফলে বাসযোগ্য আবাসিক এলাকা আর নেই৷ বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) তৈরির কোনো জায়গা নেই৷ যারা পরিকল্পনা করেছিলেন, তারাও এসব এলাকায় গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলার জন্য কোনো জায়গা রাখেননি৷ এই শহর যে বিশ্বের বাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় আজ শীর্ষে উঠে গেছে সেই দায় নগরপরিকল্পনাবিদদেরও এড়ানোর সুযোগ নেই৷ পঞ্চাশের দশকের তেজগাঁও শিল্প এলাকা এখন শহরের প্রাণকেন্দ্রে চলে এসেছে৷ যারা পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা কি একশ' বছর পরের ঢাকা শহরের চিত্রের কথা ভাবেননি? সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার কর্মকর্তা ও যারা পরিকল্পনা করেছিলেন তারা কি বুঝতে পারেননি একশ বছর পর কেমন ব্যাসের গ্যাস-পানির পাইপের প্রয়োজন পড়বে এই নগরে৷ এখন সেই ভুল পরিকল্পনার মাশুল দিতে হচ্ছে দুই কোটি মানুষকে৷
রাজউকের নামের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ববোধের কথা উল্লেখ আছে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, পরিকল্পিত নগরায়নের চেয়ে প্লট ও ফ্ল্যাট ব্যবসার দিকেই রাজউকের আগ্রহ বেশি৷ প্লট ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন করলেই রাজউক বলছে, আর প্লট বরাদ্দ দিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু লোককে কোটিপতি বানিয়ে দেবে না রাজউক৷ প্রয়োজনে ফ্ল্যাট বানিয়ে স্বল্প স্থানে বহু মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করবে৷ কিন্তু এরই মাঝে শুনতে পেলাম, রাজউক আরো দু'টি আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে – কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়ায়৷ অনেক মন্ত্রী-এমপির নাকি প্লট নেই৷ এ জন্যই এ প্রকল্প৷ গণমাধ্যমের চাপে অবেশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে আবেদনের শর্ত৷ কিন্তু আশুলিয়ায় ভূমিদস্যুরা রাতের আঁধারে জলাশয় ভরাট করছে৷ এটা ঠেকাতেই ওই জায়গা অধিগ্রহণ করে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজউকের এই উদ্যোগ৷ তাহলে যেখানেই ভূমিদস্যুরা জলাশয় ভরাট করবে, সেখানেই কি সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে? ভূমিদস্যুরা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? রাজধানী ও আশপাশের খাল-জলাশয় ভরাটের মাশুল তো নগরবাসী দিতে শুরু করেছে এক যুগ পার হলো৷ ফি বছর বর্ষা মৌসুমে রাজপথে নৌকা চলার দৃশ্য দেখছি৷ এরপরও কি রাজউক পরিকল্পিত নগরের দিকে নজর না দিয়ে বসে থাকবে? এরপরও ইট কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হওয়া রাজধানীকে টেনে তুলবেন না দায়িত্বশীলরা? যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে তো এই ঢাকা মৃত নগরীতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না৷
নারায়ণগঞ্জের হাল আমলের সুবর্ণগ্রাম ছিল ঈশা খাঁর রাজধানী৷ মাত্র কয়েক শতকে তা এক বিলুপ্ত নগরীর স্মৃতি৷ ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ছিল – এটা বলতে আর কয়েক শতক লাগবে না৷ সেই আলামতও পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায়৷ গত ১০ বছরে ঢাকা শহরে যানবাহনের ঘণ্টায় গড় গতি ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যা হাঁটার গতির চেয়ে সামান্য বেশি৷ ডেনমার্কের গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার বলছে, গণপরিবহনের গতি ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারের নীচে নেমে এলেই সেই শহরকে মৃত নগরী বলা যায়৷ ঢাকায় বর্তমানে যানবাহনের ঘণ্টায় গতিবেগ ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার৷ তাহলে আমরা এখন ঢাকা শহরকে কী বলব?
আপনার কিছুর বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷