1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নিজামীর মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য’

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৮ অক্টোবর ২০১৪

‘‘মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর একমাত্র শাস্তি৷ একাত্তরে তার নৃসংশতা যে কী ভয়াবহ ছিল, তা যারা দেখেছে শুধু তারাই জানে৷’’ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন আহমেদ জালাল৷

https://p.dw.com/p/1DdDN
Rahman Nizami
ছবি: Reuters

সবাই তাঁকে ‘বিচ্ছু জালাল' হিসেবে চেনেন৷ কমান্ডার খালেদ মোশাররফ মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁকে এই উপাধি দিয়েছিলেন৷ নিজামীর মামলায় আদালতে যাঁরা সাক্ষী দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে জহির উদ্দিন অন্যতম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানা, ‘‘চোখের সামনে এক হিন্দু নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে ঐ নিজামী৷ ওই নারীর চিৎকার এখনো যেন কানে ভেসে আসে আমার৷ শুধু তাই নয়, আমাকে তেজগাঁওয়ের এমপি হোস্টেলের পেছনে ধরে নেয়ার পর, টেবিলের দু'দিকে বসে আমি আর নিজামী কথা বলছিলাম৷ আমার হাত ছিল টেবিলের উপর৷ এক পর্যায়ে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়ে আমার একটি আঙুল কেটে ফেলে সে৷ এরপর রাইফেলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মুহূর্তে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই৷''

অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অপেক্ষমাণ রায় বুধবার ঘোষণা করা হচ্ছে৷ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ মঙ্গলবার এই দিন ধার্য করেন৷ এই রায়ের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা মামলাটির নিষ্পত্তি হবে৷ গত ২৪শে জুন এই মামলার অপেক্ষমাণ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিল৷ কিন্তু ওই দিন কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীকে হাজির না করে তিনি অসুস্থ বলে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন পাঠায়৷

Bangladesh Matiur Rahman Nizami
‘একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়ে আমার একটি আঙুল কেটে ফেলে নিজামী’ছবি: picture alliance/AP Photo

ট্রাইব্যুনালে সবচেয়ে বেশি সময়, প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা মামলা এটি৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ ২০১২ সালের ২৮শে মে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়৷ সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত বছরের ১৩ই নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়৷ তবে রায় ঘোষণার আগেই, অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বর অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল ১-এর তত্‍কালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর৷ এর প্রায় দু'মাস পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার পর, পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল ১ দ্বিতীয় দফায় মামলার সমাপনী যুক্তি শোনে৷ ২৪শে মার্চ মামলাটি দ্বিতীয় দফায় রায়ের জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়৷ এর তিন মাস পর, গত ২৪শে জুন, মামলাটির রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য ছিল৷

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ৷ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিজামীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের মতো অভিযোগ রয়েছে৷ একাত্তরে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার দু'টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪শ' মানুষকে হত্যা ও রাজধানীর নাখালপাড়ায় পুরাতন এমপি হোস্টেলে আটক মুক্তিযোদ্ধা রুমী, বদি, জালাল, সুরকার আলতাফ মাহমুদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজামীর সংশ্লিষ্টতা ছিল৷ এছাড়া মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজে স্থাপিত রাজাকার-আলবদরের ক্যাম্পে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের যে নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়, তার সঙ্গে নিজামীর সম্পৃক্ততা ছিল৷ নিজামীর বিরুদ্ধে আনা সবকটি অভিযোগই আমরা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি৷''

তবে নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘কথায় কথায় মৃত্যুদণ্ড চাওয়াটা প্রসিকিউশনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে৷ আসলে নিজামী জামায়াতের আমির না হলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই উঠতো না৷ নিজামীর বিরুদ্ধে আনিত একটি অভিযোগও প্রসিকিউশন সঠিকভাবে প্রমাণ করতে পারেনি৷'' তাই আদালত যদি সব কিছু বিবেচনা করে রায় দেন, তবে নিজামী বেকসুর খালাস পাবে বলেও দাবি করেন এই আইনজীবী৷

প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়ার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নিজামী একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের (জামায়াতের তত্‍কালীন ছাত্র সংগঠন, বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির) সভাপতি ছিলেন৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর ২রা আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ এর আগে গত ৩০শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ে নিজামীসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য