নিউ ইয়ার্স ইভের কিছু জার্মান প্রথা
জার্মানিতে বর্ষশেষের রাতটিকে বলে ‘সিলভেস্টার’৷ সারা পৃথিবীর মতো এদেশেও নিউ ইয়ার্স ইভ উদযাপন করার কিছু বিশেষ প্রথা আছে৷
‘ভালোভাবে পিছলাবেন!’
জার্মান ‘গুটেন রুট্শ’, এই শুভকামনার অর্থ হলো, পুরনো বছর থেকে নতুন বছর বিনা বাধায় পিছলে যাবেন, এই কামনা করি৷ সেটা শুধু শীতের দিনে বরফের জন্য নয়৷ ইহুদিদের ঈডিশ ভাষায় ‘রশ হাশানা’ মানে নববর্ষ; আবার প্রাচীন জার্মানে ‘রুট্শ’ কথাটার মানে হলো ‘যাত্রা’৷
লাকি চার্ম
জার্মানরা যদি নিউ ইয়ার্স ইভে এ ধরনের কোনো উপহার দেন, তাহলে তা দেখতে যত খারাপই হোক না কেন, মনে রাখবেন, উপহারটি একটি লাকি চার্ম, নববর্ষে আপনাকে সৌভাগ্য এনে দেবে৷ ছবিতে যা দেখছেন, জার্মানে তাকে বলে ‘গ্ল্যুক্সপিলৎস’, অর্থাৎ ‘গ্ল্যুক’ বা সৌভাগ্য এনে দেবে এমন ‘পিলৎস’ বা ব্যাঙের ছাতা৷
‘পাঞ্চ বোওল’
ইংরেজিতে পাঞ্চ বলতে যা বোঝায়, জার্মানিতে ‘বোওল’ কথাটার মানেও তাই৷ জার্মানরা কথাটা নিয়েছেন ইংরেজি ‘বোওল’ বা পাত্র শব্দটি থেকে৷ হার্ড ড্রিঙ্কের সঙ্গে ফল আর ফলের রস মিশিয়ে তৈরি এই পানীয়টি ছাড়া জার্মানদের নিউ ইয়ার্স ইভের পার্টি জমে না৷
ফিঙ্গার ফুড
নিউ ইয়ার্স ইভের পার্টিতে যদি শুধু বুফে আর ফিঙ্গার ফুড থাকে, তাহলে আপত্তি নেই, কেননা পার্টি চলবে রাত বারোটার পরেও৷ অনেকক্ষণ ধরে খাবার গরম থাকে, যদি সুইশ কায়দায় ‘ফন্ডিউ’ করা যায়: একটি পাত্রে চিজ গলতে থাকে; অতিথিরা যে যার কাঁটা দিয়ে তাতে মাংস বা সবজির টুকরো ডুবিয়ে ডুবিয়া খান৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সুইশ ‘রাক্লেট’, যা কিনা একটা নীচু আঁচের টেবলটপ গ্রিল৷ এই ধরনের খাওয়ার মজা হলো, তা অনেকক্ষণ ধরে চলে৷
‘ব্লাইগিসেন’
ছোট একটা চামচে অল্প কিছুটা সিসা বা টিন গলিয়ে, তা ঠান্ডা জলে ফেলে দেখা হয়, সেটার কী চেহারা দাঁড়ায়৷ সেই চেহারা দেখে নাকি ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়, যার সিসা, আগামী বছরটা তার কেমন যাবে৷ এ এক ধরনের অপটু ও অপেশাদারি জ্যোতিষ, যেখানে কাজের চেয়ে মজাই বেশি৷ জার্মানে ‘ব্লাই’ মানে সিসা আর ‘গিসেন’ মানে ঢালা৷
‘ফ্রোহেস নয়েস ইয়ার’
পুরনো বছরের শেষ মুহূর্তগুলো মানুষজন ‘দশ, নয়, আট, সাত, ছয়...’ করে গোনেন৷ ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বারোটার সময় কাছের মানুষদের চুমু খাওয়া চলে, দূরের মানুষদের টেলিফোন করতে হয় আর পাশের মানুষদের ‘ফ্রোহেস নয়েস ইয়ার’ মানে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলতে হয়৷ ছবিতে মহিলা ফুলঝুরি জ্বালিয়েছেন বটে, কিন্তু আসল বাজি পোড়ানোটা হয় বাড়ির বাইরে৷
বাজি ফাটছে যেন যুদ্ধ বেঁধেছে!
ঠিক বারোটার সময় সারা জার্মানি কেঁপে ওঠে হাউই-এর হুশ হুশ শব্দ আর একটানা বাজি ফাটার শব্দে৷ জার্মানিতে শুধু বছরের শেষ তিন দিন আতশবাজি বিক্রি করা যায়৷ নববর্ষে বাজি ফাটানো এসেছে এভাবে ভূত-প্রেত তাড়ানোর সুপ্রাচীন প্রথা থেকে৷
‘জেক্ট’, মানে স্পার্কলিং ওয়াইন
ওয়াইনের সঙ্গে সোডা মেশালে যেরকম হয়, সেরকম স্বাদ পানীয়টির৷ বস্তুত শ্যাম্পেনের মতো এক দামে ছাড়া, কেননা ‘জেক্ট’ অতটা মহার্ঘ নয়৷ যা-ই হোক, এই ‘জেক্ট’-এর গেলাস উঠিয়ে ‘প্রোসিট নয়ইয়ার’ বলতে হয়৷ ‘প্রোসিট’ কথাটা এসেছে ল্যাটিন থেকে; অর্থ হলো, ‘যেন সফল হয়’৷ সব মিলিয়ে: আপনাদের নববর্ষ যেন সফল হয়৷
প্রতিবেদন: এলিজাবেথ গ্রেনিয়ার/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী