1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলানিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের কাছে চ্যাম্পিয়নদের নয় উইকেটে হার

৫ অক্টোবর ২০২৩

২০১৯ লর্ডস আর ২০২৩ আহমেদাবাদ- চার বছরে বদলে গেল কত কিছু! আগের বিশ্বকাপ যেখানে শেষ, আজ ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে যেন সেখান থেকেই শুরু হলো বিশ্বকাপের আসর। কিন্তু দুই ম্যাচে কত অমিল!

https://p.dw.com/p/4XAXC
কনওয়ে আর রাচিন কোনো সুযোগই দেননি ইংল্যান্ডকে
কনওয়ে আর রাচিন কোনো সুযোগই দেননি ইংল্যান্ডকেছবি: ANDREW BOYERS/REUTERS

সেই ফাইনালে ইংল্যান্ড জিতেছিল রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পর। কিন্তু এবার নিউজিল্যান্ড যেন ‘প্রতিশোধ' নিলো আহমেদাবাদের রাস্তায় বাদাম চিবুতে চিবুতে। ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য খুব ছোটও ছিল না, কিন্তু ডেভন কনওয়ে আর রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে সেটা অনায়াসেই টপকে গেল ১৩.৪ ওভার ও ৯ উইকেট হাতে রেখে। কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রানে, রাচিন ৯৬ বলে ১২৩ রানে। ৯ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপের শুরুতেই চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে নিউজিল্যান্ড জানান দিলো, তারা এবারও শেষ পর্যন্ত যাওয়ার দাবি রাখে।

আহমেদাবাদের আজকের ম্যাচটা ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কথাও তো মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেবারও ভারতে বিশ্বকাপেরই প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি এই ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড। কী অদ্ভুত কাকতাল, সেই ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন এক ওপেনার- নাথান অ্যাস্টল। আজ সেটা করলেন কনওয়ে। মিল এখানেই শেষ হচ্ছে না, সেই ম্যাচটাও নিউজিল্যান্ড জিতেছিল।

কনওয়ের মতো রবীন্দ্র ওপেনার হলে আরেকটু বেশি মিলতো। তবে ভারতের মাঠে তার বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেঞ্চুরি পাওয়াটা আরেক দিক দিয়ে কাব্যিক বটে। রাচিনের ভারতীয় বাবা বহুকাল আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে, তবে ক্রিকেটপ্রেমটা মরে যায়নি। ছেলের নাম রাচিন রেখেছিলেন দুই ভারত কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড় আর শচীন টেন্ডুলকারের নামের অংশ থেকে নিয়ে। সেই ভারতে রাচিন খেললেন রাহুল আর শচীনের মতোই। বাঁহাতি বলে অবশ্য ধারাভাষ্যকার মিল খুঁজে পেলেন ব্রায়ান লারার সাথেই বেশি।

তা লারার মতোই খেলেছেন রাচিন। কাট, পুল, হুকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান যুবরাজকে। রাচিনের তিনে উঠে আসাটাই ছিল বড় চমক, এমনিতে ব্যাট করেন লোয়ার অর্ডার। তবে খেলা দেখে সেটা মনে হয়নি একবারও।

ম্যাচ জেতানোর পথে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছেন কনওয়ে-রাচিন
ম্যাচ জেতানোর পথে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছেন কনওয়ে-রাচিনছবি: ANDREW BOYERS/REUTERS

নিউজিল্যান্ডের শুরুটা অবশ্য একদমই ভালো হয়নি। দ্বিতীয় ওভারেই কারানের বলে ‘গোল্ডেন ডাক'-এ ফিরে গেলেন উইল ইয়াং। এরপর কনওয়ে আর রাচিন কোনো সুযোগই দেননি ইংল্যান্ডকে। ওকস লাইন খুঁজে পেতে জেরবার হয়েছেন, উডের তোপে পাল্টা কামান দেগেছেন কনওয়ে-রাচিন। স্যাম কারানও কিছু করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অধিনায়ক জস বাটলার আনেন স্পিন। লাভ হয়নি সেখানেও। আদিল রশিদ, মঈন আলীদের স্লগ সুইপ করে সীমানাছাড়া করেছেন কনওয়ে-রাচিন।

দুজনের ইনিংসে মিলও আছে, দুজনেই ফিফটি পেয়েছেন ৩৬ বলে। এরপর কনওয়ে একটু বেশি স্ট্রাইক পেয়েছেন, তার সেঞ্চুরিও হয়ে গেছে আগে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে গত কয়েক বছরে সম্ভবত সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান তিনি, আজ দেখিয়েছেন এই বিশ্বকাপ নিজের করে নিতে পারেন। আর রাচিন তো নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অভাব বুঝতেই দেননি। ৮৩ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন কনওয়ে, খানিক পর ৮২ বলে সেঞ্চুরি করে সেটা ভেঙে দিয়েছেন রাচিন! আরেকটি রেকর্ড অবশ্য রাচিন করেছেন, যেটা চট করে ভাঙতে পারবেন না কেউ। ২৩ বছর বয়সে সেঞ্চুরিটা নিউজিল্যান্ডের কারো বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি।

দুজন এত সহজে দলকে জিতিয়েছেন, সেখানে ম্যাচের বর্ণনা বাহুল্য মনে হচ্ছে। তারপরও কতটা অনায়াসে টপকে গেছেন, সেটা কিছু সংখ্যা দিয়ে বোঝা যেতে পারে। দুজন ১০০ রান তুলেছেন মাত্র ১২.১ ওভারে, ২০০ রান মাত্র ২৬.৫ ওভারে। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের জুটিও গড়েছেন দুজন, ভেঙেছেন ১৯৯৬ বিশ্বকাপে লি জারমন-ক্রিস হ্যারিসের রেকর্ড। ভেঙেছেন দ্বিতীয় উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ওয়ানদের রেকর্ডও।

১২১ বলে হার না মানা ১৫২ রানের ইনিংস খেলা ডেভন কনওয়ে
১২১ বলে হার না মানা ১৫২ রানের ইনিংস খেলা ডেভন কনওয়েছবি: Rafiq Maqbool/AP/picture alliance

ইংল্যান্ডের কোনো বোলারই আজ সুবিধা করতে পারেননি। স্যাম কারান একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন, বাকিরা নিজেদের বোলিং ফিগার ভুলে যেতে চাইবেন দ্রুত।

অথচ তার আগে প্রথম ইনিংস শেষে জমজমাট একটা লড়াইয়েরই আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

টসে জিতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। প্রথম ওভারেই ছয়-চার মেরে শুরু করেন জনি বেয়ারস্টো, জানিয়ে দেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ‘বাজবল' খেলতেই এসেছে।  তবে বেয়ারস্টো আগ্রাসী শুরু করলেও উইকেট হারাতে দেরি হয়নি ইংল্যান্ডের। শুরু থেকেই ভালো বল করতে থাকা ম্যাট হেনরির অফ স্টাম্পের বাইরের একটা বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ডাভিড মালান। আউট হয়ে যান ২৪ বলে ১৪ রান করে।

খানিক পর এই বিশ্বকাপের প্রথম মনে রাখার মতো শটটা খেলেন জো রুট, রিভার্স স্কুপ করে ট্রেন্ট বোল্টকে উইকেটের পেছন দিকে ছয় মেরে। তবে খেলার ধারার বিপরীতে এরপর আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো, মিচেল স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে  গিয়ে ক্যাচ দেন ৩৫ বলে ৩৩ রান করে।

রাচিন রবীন্দ্র : ৯৬ বলে ১২৩ রানে অপরাজিত
রাচিন রবীন্দ্র : ৯৬ বলে ১২৩ রানে অপরাজিতছবি: PUNIT PARANJPE/AFP

তবে ইংল্যান্ডের যে কৌশল, সেখান থেকে সরে আসেনি তারা। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে খেলতেই চলে যায় আরেকটি উইকেট। রাচিন রাভীন্দ্রের বলে দুই চার ও এক ছয়ের পর হ্যারি ব্রুক আরেকটি বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে আসেন ১৬ বলে ২৫ রান করে। মঈন আলীও এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি, ১১ রান করে বোল্ড হয়ে যান অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপ্সের বলে।

এরপর রুটের সাথে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক জস বাটলার। দুজনের জুটিতে ৭০ রান চলে আসে ৭২ বলে। বাটলার খেলছিলেন দারুণ, কিন্তু ৪২ বলে ৪৩ রান করে শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। লিয়াম লিভিংস্টোন শেষের দিকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন, তবে বোল্টের নাকল বলে লং অনে ক্যাচ দেন ২০ রান করেই।

এরপর ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছেন পার্টটাইমার ফিলিপ্স। ৪১তম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই তুলে নেন জো রুটকে, রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট প্যাডের ফাঁক বলে বোল্ড হয়ে যান রুট। থেমে যেতে হয় ৭৭ রানেই।

ইংল্যান্ডের ৩০০র আশাও শেষ ওখানেই। শেষদিকের ব্যাটসম্যানরা দুই অংক ছুঁলে ২৮২ পর্যন্ত গিয়েছিল। আহমেদাবাদে স্কোরটা খারাপ মনে হচ্ছিল না। কিন্তু কে জানতো, এই স্কোরও এক ফুৎকারে জয় করে নেবেন কনওয়ে-রাচিন?

ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ২৮২/৯ (রুট ৭৭, বাটলার ৪৩, বেয়ারস্টো ৩৩; হেনরি ৩/৪৮, ফিলিপ্স ২/১৭)

নিউজিল্যান্ড ৪০.১ ওভারে ২৮৩ (কনওয়ে ১৫২*, রাচিন ১২৩*; কারান ১/৪৭)

ফল : নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে জয়ী