উত্তরাধিকার
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২এটা যেমন একদিকে কর্তৃপক্ষের কাঁধে বোঝা, অন্যদিকে অনেক সময় আর্থিক লাভও নিয়ে আসে৷
জার্মানির জনসংখ্যা দিন দিন বুড়িয়ে যাচ্ছে এটা গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানই বলে দেয়৷ তাদের অনেকেই কোন উত্তরাধিকারী বা আত্মীয় না রেখেই এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিচ্ছে৷ প্রতি বছর এভাবে মারা যাচ্ছে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ৷ আর এসব মৃতদের কবর দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দায়িত্ব চলে আসে কর্তৃপক্ষের কাছে৷ এইসব সম্পত্তি দেখাশোনার খরচটাও তখন সরকারকে বহন করতে হয়৷
সাধারণত মৃত ব্যক্তি যে এলাকাতে থাকেন সেখানকার স্থানীয় আদালত এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন৷ তারা খোঁজ করে দেখেন মৃত ব্যক্তির কোন ছেলেমেয়ে কিংবা আত্মীয় স্বজন রয়েছেন কিনা৷ এরপর তারা সেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সরকারি আদালতের কাছে এই ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়ে দেন৷ যেমন জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার আর্ন্সব্যার্গ শহরের কর্তৃপক্ষের জন্য কাজ করেন টোমাস পেপারহোফে৷ তিনি বলেন, ‘‘ নিয়মানুযায়ী আমাদের কাছে বিষয়টি আসে যখন কারো কোন উত্তরাধিকারী থাকে না৷ দুটি ক্ষেত্রে এটি ঘটে, হয় মৃতের কোন উত্তরাধিকারী নেই, অথবা মৃতের ঘাড়ে এত দেনা চেপেছে যে তার উত্তরাধিকারী সেটির দায় দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না৷''
কারো দায়দেনা কে নিতে চায়? ছেলেমেয়ে নিতে না চাইলে এড়িয়ে যেতে পারে, তবে আইন অনুযায়ী সরকার সেটি পারে না৷ তাই টোমাস পেপারহোফে চাইলেও এই ধরণের কেস প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না৷ তাই শেষ পর্যন্ত মৃতের উত্তরাধিকার জোর করেই রাষ্ট্রকে নিতে হয়৷ যেমনটি তিনি বললেন, ‘‘খারাপ লাগলেও সত্যি, কারণ এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে যে রাষ্ট্রকে এগুলোর দেখাশোনা করতে হবে৷ তাই কারো উত্তরাধিকারী না থাকলে সেটার দায়িত্ব জোর করেই আমাদের নিতে হয়৷''
এই ধরণের ঘটনার বেশিরভাগ ঘটে জমিজমার বেলায়৷ এছাড়া অনেক সময় স্থাবর সম্পত্তিও দেখাশোনা করতে হয়, যেমন কারো পুড়ে যাওয়া বাড়ি, গুদামঘর ইত্যাদি৷ আর এগুলো দেখাশোনার জন্য যে খরচ হয় সেগুলো তো জনগণের পয়সা থেকেই আসে৷ যেমন কারো শীত গ্রীষ্মে বাড়িটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা, আবার জমির চারদিকে বেড়া দেওয়া যাতে অন্য কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে৷ এতসব কাজের জন্য পেপারহোফে আর তার চারজন সহকারীকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়৷ গত দশ বছরে এই ধরণের চেপে বসা উত্তরাধিকারের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷
তবে এই ধরণের কাজে আর্থিক লাভও হয় অনেক সময়৷ যেমন কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যুর সময় প্রচুর সম্পত্তি রেখে যান, তাহলে তার সেইসব সম্পত্তি সরকারের হস্তগত হয়৷ যেমন এই বছর তেমনই একটি ঘটনার কথা জানালেন টোমাস পেপারহোফে৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বছর তেমন একটি ঘটনায় আমরা ১২ লাখ ইউরো পেয়েছি৷ মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকারী ছিলো না৷ এবং আমরা দুই বছর ধরে খোঁজ খবর নেওয়ার পরও কাউকে পাইনি৷''
জার্মানির অনেক মানুষ অবসরে চলে যাওয়ার পর ভিনদেশে গিয়ে বসবাস শুরু করেন৷ এমন অনেক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাদের সহায় সম্পত্তির দায়িত্বও জার্মানির কর্তৃপক্ষের ওপর চলে আসে৷ এবং দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে৷ যেমন ২০০১ সালে এমন ঘটনা ছিলো ৯৬টি, আর গত বছর ছিলো ২৪৬টি৷ এই বছর সেটি আরও বাড়বে বলে মনে করেন পেপারহোফে৷ তার ভাষায়, ‘‘চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষেই এই ধরণের ১৮০টি ঘটনা আমরা পেয়েছি৷ তার মানে হচ্ছে বছরের বাকি সময়গুলোতেও যদি এইভাবে আসতে থাকে তাহলে প্রথমবারের মত এই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে৷''
বিদেশে কোন জার্মান মারা গেলে সেটি নিয়েও জটিলতা আছে৷ যেমন তার বিষয়-আশয় কি সেখানকার আইন অনুযায়ী দেখা হবে নাকি জার্মান আইন অনুযায়ী হবে সেটি নিয়েও চিন্তাভাবনা করতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে৷
প্রতিবেদন: ক্লাউস ডয়স/আরআই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন