চলে গেলেন বয়াতি
২০ আগস্ট ২০১৩শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আবদুর রহমান বয়াতির জন্ম ১৯৩৬ সালে, ঢাকার সূত্রাপুরে৷ কিংবদন্তিতুল্য লোকসংগীত শিল্পী আব্দুল আলিমের সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গেয়ে প্রথম দৃষ্টি কেড়েছিলেন সেই ১৯৭২ সালে৷ তারপর একটা সময় বাংলাদেশের বাউল সংগীতের আকাশে আবদুর রহমান বয়াতি ছিলেন উজ্জ্বলতম নাম৷ ফুসফুসের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে শয্যাশায়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত অসংখ্য গান দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন, বাংলা লোকসংগীতকে নিয়ে গেছেন দেশের সীমানার বাইরে৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র)-এর আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসেও সংগীত পরিবেশন করেছিলেন৷ সোমবার সকালে সেই শিল্পীরই জীবনাবসান ঢাকার জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে৷
তাঁর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে স্বাভাবিকভাবেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া৷ শোক জানাতে গিয়ে প্রায় সবাইকেই বলতে হয়েছে রহমান বয়াতির শেষ জীবনের চরম দুর্ভোগের কথাও৷ জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতাল তাঁর বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা দিলেও, ওষুধ-পথ্য কিনতে হতো নিজেকেই৷ তা কিনতে গিয়ে সহায়-সম্বল হারিয়েছে, ঋণগ্রস্থও হয়ে পড়েছে আবদুর রহমান বয়াতির পরিবার৷ অভিমানী শিল্পী নাকি শেষ দিকে চিকিৎসাই করাতে চাইতেননা! সরকার এবং সমাজের অন্য সব অঙ্গন থেকে প্রাপ্য মর্যাদা, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়াতেই শিল্পীর এই অভিমান, অভিমানের ছলে জানিয়ে যাওয়া নিরব ক্ষোভ৷
কিন্তু আবদুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবদুল কুদ্দুস বয়াতির ক্ষোভটা আর নিরব থাকেনি৷ প্রয়াত শিল্পীর চার চারবার একুশে পদকের জন্য আর্জি জানিয়েও কাঙ্খিত স্বীকৃতি না পাওয়ার অভিজ্ঞতা, চরম অবহেলা আর দারিদ্র্যে জীবন যাপনের পর জীবনান্তে শিল্পীদের সবার শ্রদ্ধা-সম্মান এবং স্বীকৃতিতে ভেসে যাওয়া-এসব বাস্তবতা মনে করে কুদ্দুস বয়াতি সরাসরি একটা মন্তব্যই করেছেন, ‘‘বাংলাদেশে শিল্পীরা হলো অভিশাপ৷''
‘মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি কোন মিস্তরি বানাইয়াছে', ‘ওরে ভুলে আছো মায়াজালে, আপন দেশের খবর রাখলানা, দিন থাকতে ভাবোরে সেই বিয়ার ভাবনা', ‘আমি ভুলি ভুলি মনে করি প্রাণে ধৈর্য মানে না', ‘পাগল মন মনরে মন কেনে এত কথা বলে', ‘রাখো কিবা মারো এই দযা করো, থাকিনা যেন তোমারে ভুলিয়া', ‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই রবে,সুন্দর এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে', ‘দিন গেলে আর দিন পাবি না'- আবদুর রহমান বয়াতির এমন অনেক গানই এখনো জনপ্রিয়৷ শেষ জীবনে তাঁর মতো শিল্পীও সুস্থ জীবনে ফেরার জন্য সবার কাছ থেকে উপযুক্ত সহযোগিতা পেলেন না- এ কথা মনে করে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কুদ্দুস বয়াতি জানতে চেয়েছেন, ‘‘না খেয়ে মরার পর শিল্পীদের সম্মান দিলে কী লাভ?''