1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ

জেনিফার ফ্রাচেক/আরবি১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসে অনুষ্ঠিত হলো নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক ক্যাম্পেইন, ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’ অর্থাৎ এক বিলিয়ন উঠে দাঁড়াও৷ জার্মানির বিভিন্ন শহরের মেয়েরাও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেন দিনটি৷

https://p.dw.com/p/17gti
ছবি: DW/Rosa Muñoz Lima

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক তথ্য অনুযায়ী প্রতি তিনজনের একজন মেয়ে, অর্থাৎ এক বিলিয়ন নারী অন্তত পক্ষে একবার শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ বিশ্বব্যাপী নারী পুরুষের সমানাধিকার ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্যই ছিল এই কর্মসূচি ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং৷'

বিশ্বের ২০০ দেশের নারীরা শান্তিপূর্ণভাবে নানাভাবে জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিবাদ৷ এই উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান, আত্মরক্ষার কলাকৌশল নিয়ে সেমিনার ও বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আর সেই সাথে অনুষ্ঠিত হয় নাচের মাধ্যমে প্রতিবাদ ও ফ্ল্যাশ মব৷

সারা বিশ্বে আন্দোলন

ভারতে এক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে হাজার হাজার নারী প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন৷ আর সেই প্রতিবাদের রেশ ধরে ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং' এর ডাকে দিল্লির সংসদ ভবনের কাছে দুই হাজার নারী জড়ো হন৷ নৃত্যের তালে তালে প্রতিবাদ জানান নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে৷

One Billion Rising Aktion gegen Gewalt gegen Frauen
মুম্বইতে কর্মসূচি পালনছবি: Reuters

আফ্রিকার কঙ্গোতেও এই কর্সূচিতে অংশ নেন মেয়েরা৷ নাচতে নাচতে নারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ জানান তাঁরা৷ ফিলিপাইনের মেয়েরা একটানা ২৪ ঘণ্টা নেচেছেন৷

রোমে এই ক্যাম্পেইনের আয়োজক গ্রেটশেন ব্লুম বলেন, ‘‘প্রতি তিনজনের একজন মেয়ে জীবনে অন্তত একবার শারীরিক বা মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন৷ এই সংখ্যাটা বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়ন৷ আর সারা পৃথিবীর এক বিলিয়ন মেয়ে ও পুরুষ যদি আজ প্রতিবাদ করেন ও বলেন অনেক হয়েছে আর নয়৷ তাহলে হয়তো কিছু পরিবর্তন হবে৷''

নারী অধিকারবাদীর আহ্বান

নিউইয়র্কের শিল্পী ও নারী অধিকারবাদী ইভ এন্সলারের আহ্বানে জেগে ওঠে এই ক্যাম্পেইন৷ ‘ভ্যাজাইনা মোনোলোগ' নামের একটি বই লিখে সাড়া জাগান তিনি৷ ১৫ বছর আগে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ‘ভিক্টোরি ডে' আন্দোলন গড়ে তোলেন ইভ৷ ব্রিটেনের দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘‘তখন থেকে এক্ষেত্রে অনেক সাফল্য দেখা গেলেও নারী নির্যাতন এখনও শেষ হয়নি৷ তাই এক্ষেত্রে আরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ ভিক্টোরি ডে একই সাথে ঘৃণা ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ৷ মেয়েদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদাত্ত আহ্বান৷''

One Billion Rising Aktion gegen Gewalt gegen Frauen
ছবি: Reuters

ইন্টারনেটে ক্যাম্পেইন

গত বছর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং' ক্যাম্পেইনের আহ্বান জানান ইভ৷ তারপরও নারী নিপীড়নের ভয়ানক কিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, শিহরণ জাগিয়েছে বিশ্বের মানুষকে৷ কিছু কিছু ঘটনার ছবি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তুলেও রাখা হয়েছে৷ উন্নত মানের স্কুল শিক্ষার দাবি করায় পাকিস্তানি কিশোরী মালালাকে হামলার শিকার হতে হয়েছে৷ ভারতে বাসে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে এক তরুণীকে৷

মোদ্দা কথা হলো, নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর হয়নি৷ এখনও মেয়েরা যৌন পাচারের শিকার৷ এছাড়া পারিবারিক হিংসা, অনার কিলিং, ধর্ষণ, কন্যাভ্রূণ হত্যা, এসিড নিক্ষেপ ও যৌতুক প্রথার শিকার হচ্ছেন মেয়েরা৷

শুধু উন্নয়নশীল দেশের সমস্যাই নয়

তবে নারী নির্যাতন শুধু উন্নয়নশীল দেশেরই সমস্যা নয়৷ শিল্পোন্নত দেশেও এই সমস্যা বিদ্যমান৷ ইভ এন্সলারের ভাষায়, ‘‘নারী নির্যাতন বিশ্বব্যাপী এক সমস্যা৷ কোনো দেশ বা সংস্কৃতিতে এটা আবদ্ধ নয়৷ এই সমস্যা আমাদের সবার৷''

One Billion Rising Aktion gegen Gewalt gegen Frauen
ছবি: Reuters

জার্মান পরিবার মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতন, মারধর, মানসিক অত্যাচার অনেক পরিবারেই ঘটে থাকে৷ এ সম্পর্কে ১০ হাজারেরও বেশি মেয়েকে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ উত্তরদাতাদের ৫৮ শতাংশ অন্তত একবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ প্রতি তিন জনে একজন মেয়ে শারীরিক নির্যাতন এবং প্রতি আট জনে একজন মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷

অন্যান্য দেশের মতো জার্মানির নানা শহরেও দিনটিকে ঘিরে বহু সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ বন শহরে ‘ব্রেক দ্য চেন' গানের সাথে নাচের তাল ধরেন মেয়েরা৷ নিপীড়িত নারীদের শৃঙ্খলা খুলে বের হয়ে আসতে আহ্বান জানান৷

এতে অংশগ্রহণকারী রোজেমারি মোইৎসিস জানান, ‘‘যেসব মেয়ে নিজ শক্তিতে সহিংসতাকে প্রতিরোধ করতে পারে না, তাদের সাহায্য করা এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য৷’’

আরেক অংশগ্রহণকারী ভেরা পিটশমান বলেন, ‘‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের পরস্পরের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি পাবে৷ পরস্পরের প্রতি মনোযোগী হবে তারা৷’’

অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই নারী৷ যদিও বিষয়টি পুরুষদের নিয়েও৷ বনের অনুষ্ঠানে পুরুষরা ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়৷ তবে কেউ কেউ নাচেও অংশ নিয়েছেন৷ তাদের একজন শ্টেফান ক্রপ৷ তিনি জানান, ‘‘আমি বিস্মিত হয়েছি এই দেখে যে, কত মানুষকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে আনা যায়৷ আর কী সুন্দর একটা টিমের পরিবেশ এখানে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য