1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাইন-ইলেভেনের এক দশক পর আল-কায়েদা দিশাহারা

১০ সেপ্টেম্বর ২০১১

অ্যামেরিকা ও ইউরোপের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন ভূখণ্ডে অভাবনীয় হামলা চালানোর এক দশক পর আল কায়েদা আর আগের অবস্থায় নেই৷ তবে বিপদ পুরোপুরি কাটে নি৷

https://p.dw.com/p/12W9z
সেই বিখ্যাত হামলাছবি: AP

আল কায়েদার কাঠামোয় পরিবর্তন

আল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গেছে, বড় আকারের হামলা চালানোর ক্ষমতা আর নেই৷ কিন্তু সেটাকে আবার ঠিক সুখবরও বলা যায় না৷ কারণ দিশাহারা এই নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ কোনো নির্দেশের পরোয়া না করে নিজেরাই মারাত্মক হামলার ছক কষছে৷ অথবা কেউ কেউ আল কায়েদা থেকে বেরিয়ে এসে হিংসার নতুন পথ খুঁজছে৷ এমনকি ঠিক ১১ই সেপ্টেম্বরের দিনটিতেই আবার নতুন করে নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংনের উপর হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত আছে তারা – এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট না হলেও হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় যেসব নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যেও এমন হামলার আভাস পাওয়া গেছে৷ বিন লাদেন স্বয়ং নাইন-ইলেভেনের এক দশক পূর্তির সময় আবার সেই দুই শহরে হামলা চালানোর বিষয়ে বেশ আগ্রহী ছিল৷ কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র কার্যকর করার লক্ষ্যে আল কায়েদা কতটা প্রস্তুত ছিল বা আছে, সেবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি৷

NO FLASH Aiman al-Sawahiri
আল কায়েদার নতুন প্রধান জাওয়াহিরিছবি: dapd

হোয়াইট হাউস'এর প্রাক্তন সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক উপদেষ্টা রজার ক্রেসি আল-কায়েদার আজকের অবস্থার একটা চালচিত্র তুলে ধরেছেন৷ তিনি বলেন, আল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এর আগে কখনো এত দুর্বল ছিল না৷ সিআইএ'র ক্রমাগত ড্রোন হামলার ফলে তারা বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে৷ দশ বছর আগে এই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই আল কায়েদার সহযোগী ও ব়্যাডিকাল ভাবধারায় দীক্ষিত কিছু ব্যক্তি সন্ত্রাসী হামলা চালাতো৷ এখন গোটা কাঠামোটা একেবারে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ব্যক্তিবিশেষই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আল কায়েদার নেতৃত্ব তাদের বাহবা জানাচ্ছে৷ ইন্টারনেটেও তাদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে৷ শুধু আরব উপদ্বীপ ও উত্তর আফ্রিকায় আল কায়েদার শাখা সংগঠন শক্তিশালী রয়ে গেছে৷

আল কায়েদার বিবর্তন

১৯৮০র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে যোগ দিয়েছিল ওসামা বিন লাদেন সহ একদল আরব যোদ্ধা৷ সেই সংগ্রামই পরে আল-কায়েদার জন্ম দেয়৷ এর পরের ঘটনা সবার জানা৷ আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ড্রোন হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে আল কায়েদার নেতৃত্ব৷ তারপর চলতি বছরের ২রা মে পাকিস্তানে গোপন অভিযানে চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন ‘নেভি সিল' বাহিনীর কমান্ডোরা৷ সেখানেই শেষ নয়৷ গত মাসে পাকিস্তানে আরেক মার্কিন ড্রোন হামলায় প্রাণ হারায় আল কায়েদার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা আতিয়া আব্দ আল রহমান৷ এক নম্বর নেতা এইমন আল জাওয়াহিরি অবশ্য এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছে বলে অনুমান করা হয়৷ রহমানের হত্যাকাণ্ডের বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছে মার্কিন গোয়েন্দা কাঠামো৷ কারণ বিন লাদেনের মতো আব্দ আল রহমান মোটেই তেমন পরিচিত ছিল না৷ সে অত্যন্ত গোপনে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির চোখ এড়িয়ে কাজ চালিয়ে যেত৷ তার পরেও তাকে চিহ্নিত করে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে৷ প্রায় আড়াই বছর আগে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আল কায়েদার অর্ধেকের বেশি নেতাদের হত্যা করা হয়েছে৷

Osama bin Laden / Video / USA
সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনছবি: AP

বিপদের আশঙ্কা

এই সাফল্য সত্ত্বেও দুশ্চিন্তা কাটছে না৷ যারা আল কায়েদা নেটওয়ার্কের মধ্যে থেকে কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করা অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ৷ কিন্তু কোনো ব্যক্তি আল কায়েদা থেকে প্রেরণা পেয়ে একাই কোনো ষড়যন্ত্র করলে বা হামলা চালাতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া খুবই কঠিন কাজ৷ সবার অলক্ষ্যে সে গাড়ি বোঝাই বিস্ফোরক অথবা মেশিন গান নিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করতে পারে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলাগুলি নাইন-ইলেভেন'এর মতো এত নাটকীয় হবে না৷

সিআইএ ও এনএসএ'র প্রাক্তন প্রধান – জেনারেল মাইকেল হেডেন মনে করেন, অ্যামেরিকার উপর ভবিষ্যৎ হামলাগুলি হবে কম জটিল৷ হামলাগুলির পেছনে তেমন সাংগঠনিক প্রস্তুতি থাকবে না৷ সব'কটি ষড়যন্ত্র সফল হবে না এবং সফল হলেও তেমন জোরালো হবে না৷ কিন্তু হামলার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক