নদীই জীবন, নদীই মরন
১৪ নভেম্বর ২০০৮একসময়ের ভরা নদীর বুকে এখন জেগে থাকে শুকনো চর৷ আবার বর্ষাকালে সে নদী দু কুল উপচে পরিণত হয় মানুষের মরণফাঁদে৷ এর ওপর প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনের ফলে পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ৷
কিন্তু এই বন্যার কারণ কি? নদীর পাড়ই বা কেন প্রতিবছর ভেঙ্গে চলেছে? পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, চারটি কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা হয়ে থাকে৷ এর প্রধান কারণ হলো বর্ষা মৌসুমে নদীগুলোর পানি দু কুল উপচে পড়া৷ কিন্তু নদীর কুল উপচে পড়ার কারণ কি? বিশেষজ্ঞদের মতে পানির অভাবে বাংলাদেশের অনেক নদীই এখন শুকিয়ে গেছে৷ ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া, ভৈরব, বাঙ্গালী, সুরমা, কুশিয়ারা সহ অনেক নদীই শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে শুকিয়ে যায়৷
পানির অভাবে এসব নদীতে চর জেগে ওঠায় নদীর তলাও অনেক উপরে উঠে আসে৷ ফলে বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে পানি চলে আসে তখন তা ধারণ করার মত জায়গা থাকে না এসব নদীগুলোর৷ ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়৷ বন্যার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে প্রচুর রাস্তাঘাট হয়েছে৷ কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এসব রাস্তা তৈরী না হওয়ায় পানির স্বাভাবিক গতিপথে তা বাধার সৃষ্টি করে৷ এছাড়া খাল বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না৷ তাই এটাও বন্যার আরেকটি কারণ৷
তৃতীয় কারণ হচ্ছে, পাহাড়ি ঢল থেকে নামা পানির প্রবাহ৷ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল সহ পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে প্রতিবছর এ ধরণের বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ এছাড়া জলোচ্ছাসের কারণে উপকুলে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তার ফলেও বন্যা হয়৷ বর্ষা মৌসুমে বন্যা ছাড়াও অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের ঘটনাও এখন স্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে৷
বাংলাদেশের পরিবেশ ও ভৌগোলিক তথ্য কেন্দ্র বা সিইজিআইএস এর হিসেব অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনা নদীর অববাহিকার কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে৷ কেবল আগামী বছরে এ তিনটি নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত ২৯ হাজার লোক পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে বলে আশংকা করছে সিইজিআইএস৷
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন ভারত থেকে আসা নদীগুলোর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অবস্থিত ৫৪ টি নদীর উত্স ভারতে অবস্থিত৷