নতুন বছরেও অস্তিত্বের লড়াইয়ে ইউক্রেন
৩০ ডিসেম্বর ২০২২সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ইউক্রেন স্বাধীনতার শুরুতেই নিজস্ব ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র মস্কোর হাতে তুলে দিয়েছিল৷ রাশিয়াও সে দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা মেনে নিয়েছিল৷ রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য করতে চায় নি৷ অথচ বিনা প্ররোচনায় ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং পূবের ডনবাস অঞ্চলের বড় অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে আনতে সাহায্য করে৷ তারপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গোটা ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে আসছে সে দেশ৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন অতীতের স্বীকৃতি অস্বীকার করে এখন আর ইউক্রেনের অস্তিত্বই মানতে রাজি নন৷
২০১৪ সালের মতো এবার আর ইউক্রেনের উপর হামলা মেনে নিতে প্রস্তুত নয় পশ্চিমা বিশ্ব৷ সে যাত্রায় রাশিয়ার উপর সামান্য কিছু নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা ও পুটিনকে এড়িয়ে চলার মতো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন পশ্চিমা নেতারা৷ কিন্তু এবারের হামলা ইউরোপ ও অ্যামেরিকার জন্য অশনি সংকেত হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে৷ কারণ সোভিয়েত আমলের ‘গৌরব' ফিরিয়ে আনতে পুটিন শুধু ইউক্রেন নয়, বাল্টিক ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির উপরেও নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ চাপানোর চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইউরোপের কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেবার এমন প্রচেষ্টা কোনোমতেই সফল হতে দেওয়া যায় না – সে বিষয়ে জোরালো ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে৷
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার এই বছরে পশ্চিমা বিশ্ব অভূতপূর্ব ঐক্য দেখিয়ে এসেছে৷ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি আর্থিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তার ঢল নেমেছে ইউক্রেনে৷ ইউক্রেনের সরকার, সেনাবাহিনী ও জনগণ সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে মস্কোর সামনে নতি স্বীকার করে নি৷ বরং চমকপ্রদ সাফল্য দেখিয়ে রুশ হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশের অনেক অংশ পুনরুদ্ধার করেছে৷ লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় জ্বালানি ও নাগরিক পরিষেবা কাঠামো বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মনোবল অটুট রয়েছে৷
ইউক্রেনের প্রতি যাবতীয় সংহতি সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাত এড়িয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ ইউক্রেনের অনুরোধ সত্ত্বেও সে দেশকে এমন অনেক অস্ত্র সরবরাহ করা হয় নি, যেগুলি রাশিয়ার উপর পালটা হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে৷ রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক অস্ত্রের সেই সীমারেখা অস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে নি৷
অভূতপূর্ব পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও একের পর এক সামরিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে আসছে৷ তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি বাবদ আয় কাজে লাগিয়ে মস্কো তার সামরিক যন্ত্র চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ রণক্ষেত্রে যাবার চাপ এড়াতে অসংখ্য তরুণ রাশিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন৷ নতুন বছরেও রাশিয়া সেই চাপ সামলে আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পারবে কিনা, সে দিকেই সবার নজর থাকবে৷ ধারাবাহিক হামলার মুখে ইউক্রেনের ক্ষমতা ও মনোবলও আরও কতদিন অটুট থাকবে, সেই প্রশ্নও উঠে আসছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি আরও বিপর্যস্ত হবার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)