নতুন নজির, বাবা-মেয়ে এক জেলে
১ মে ২০২৩বেশ কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা সত্ত্বেও ইডি-র মুখোমুখি হননি সুকন্যা। তারপর গত বুধবার সুকন্যাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইডির হেফাজতে। রোববার ভার্চুয়াল শুনানিতে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক সুকন্যাকে ১২ দিন তিহার জেলে রাখার নির্দেশ দেন।
ফলে বাবা, মেয়ে এখন একই জেলে। দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বেআইনিভাবে বাংলাদেশে গরুপাচারকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।
সুকন্যা পেশায় প্রাথমিক শিক্ষিকা। তা সত্ত্বেও তার নামে বিপুল সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে ইডি। সূত্র জানাচ্ছে, ইডির তদন্তে গরুপাচারের সঙ্গে সুকন্যার যোগের তথ্য তাদের হাতে এসেছে।
আদালতে কী বললেন সুকন্যা
সুকন্যা বিচারককে বলেছেন, তিনি তিহারে দিনে দশ মিনিট করে বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান। বান্ধবী সুতপার সঙ্গেও ফোনে কথা বলতে চান। আর জেলে যেন তাকে কিছু ধর্মগ্রন্থ দেয়া হয়। ইডির হেফাজতে সুকন্যার সঙ্গী ছিল দুটি বই। 'শ্রীশ্রী মায়ের কথা' এবং 'স্বামী বিবেকানন্দের পত্রাবলী'।
ইডি-র তরফ থেকে কোনো বিষয়েই আপত্তি জানানো হয়নি। বিচারক বলেছেন, এক্ষেত্রে জেলের নিয়ম কার্যকর হবে এবং জেল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
আলাদা জায়গায়
বাবা-মেয়ে দুজনেই তিহারে থাকলেও আলাদা জায়গায় থাকবেন। সুকন্যা মেয়েদের ব্যারাকে। আর অনুব্রত অন্য ওয়ার্ডে।
জেলের নিয়ম হলো, সপ্তাহে একদিন বন্দি তার আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। সেক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে সপ্তাহে একদিন বাবা-মেয়ের কথা হতে পারে। তাছাড়া ইডি বাবা, মেয়েকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করতে পারে।
গত মার্চ থেকে অনুব্রত তিহারে। এছাড়াও তার হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারি, বিএসএফ কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমার, মূল অভিযুক্ত এনামুল হক, অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেনও তিহারে আছে।
সুকন্যার সম্পত্তি
ইডি সূত্রে জানাচ্ছে, সুকন্য়ার ২৬টির মতো সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে প্রচুর জমি আছে। চালকল আছে। আড়াই কোটি টাকার জমি ৭৫ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। তিন কোটি টাকার জমি দেড় কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। এভাবে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে মনে করছে ইডি।
এবিপি আনন্দ জানাচ্ছে, রোববার ভার্চুয়াল শুনানিতে ইডির তরফ থেকে বলা হয়েছে, সুকন্যার এক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
তাছাড়া গরুপাচারকাণ্ডের আরেক অভিযুক্ত সায়গলের সঙ্গে সুকন্যার সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
'তৃণমূলের খেলা'
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''এ হলো তৃণমূলের খেলা। এই প্রথম সবংশ চুরির দায়ে জেলে। তৃণমূল নতুন খেলা দেখালো।''
সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ''কেউ ওকে বাঘ বলছে, বীর বলছে। আমরা বলছি, সব অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে।''
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ''আইন আইনের মতো চলুক। শুধু একটা মানবিক দিক খেয়াল রাখা হোক। কয়েক মাস আগে সুকন্যা মা-কে হারিয়েছে। বাবাও জেলে। তাকে আটকে রাখার দরকার আছে কি না, সেটা দেখা হোক।''
এর ফলে জনমানসে কী প্রবাব পড়ছে? প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এর একটা প্রতিফলন তো দলের উপরে তো পড়বেই। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন এতটা হইচই হচ্ছে, সেখানে গরুপাচার, কয়লাপাচারে তৃণমূলের একজন বড় নেতা নিজে শুধু নয়, তার মেয়ে-সহ জেলে বসে আছেন, এটা তো খুব ভালো বার্তা নয়। পারিবারিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।'' জয়ন্ত মনে করেন, ''রাজনীতি হলো ধারণার খেলা। মানুষের ধারণাটা কিন্তু তৃণমূলের প্রতি কোনোমতেই ভালো হচ্ছে না। ''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)