নতুন আইনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সম্ভব?
২৮ জানুয়ারি ২০২২আইনটি পাসের আগে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১২ জন সংসদ সদস্য বিতর্কে অংশ নেন৷ বিএনপির সংসদ সদস্যরা আইনটির সমালোচনা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন৷ বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘‘অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে৷ বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে৷’’
বিএনপির সাংসদদের এমন সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘ওনারা তালগাছ চান৷ তালগাছটা নিজেদের না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছুই মানেন না৷’’
‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে’
আইনটি বিশ্লেষণ করে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক শুক্রবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই আইনে সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশনই গঠিত হবে৷ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে৷ রকিব ও হুদা কমিশন স্বচ্ছ নির্বাচন করতে না পারায় জনগণের আস্থা হারিয়েছে৷ আর এখন কমিশন গঠন করার আগেই জনগণ মনে করছে অনুগত কমিশন হবে৷’’
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘সার্চ কমিটি গঠনের যে পদ্ধতি করা হয়েছে তাতে সরকারের অনুগত লোকজনই থাকবে৷ বিশিষ্ট দুইজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়োগ দেবেন৷ তাহলে পুরোটাই সরকারের হয়ে গেল৷ আর সার্চ কমিটি কমিশনে যাদের নাম প্রস্তাব করবেন তা গোপন থাকবে৷ ফলে দেশের মানুষ জানতেও পারবে না তারা কারা৷’’
তার মতে, সার্চ কমিটিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থাকলে এবং নাগরিকদের মধ্য থেকে দুইজন প্রতিনিধি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দিলে সার্চ কমিটির স্বচ্ছতা থাকত৷ এখন আর সেটা নেই৷
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন তাদের আদ্যোপান্ত আগেই পাবলিক করার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা৷ তাহলে অনেকটা গ্রহণযোগ্য হতো৷ তারপর প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেই রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগ দিতেন৷ তাও হলো না৷’’ তার ভাষায়, ‘‘এখন যেটা হয়েছে তা হলো, আগামী নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল নিশ্চিতকরণ আইন৷’’
‘অন্য দলগুলোর ভূমিকার সুযোগই রাখা হয়নি’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ‘‘সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর মতামত নেয়ার যে বিধান আছে সেটা অক্ষুন্ন রেখেও একটি ভালো নির্বাচন কমিশন আইন করা সম্ভব ছিলো৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা ভালো নির্বাচন কমিশন আইন করতে চেয়েছেন কিনা৷’’
তার মতে, এটা সার্চ কমিটির আইন৷ এখানে সরকার ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি৷ সার্চ কমিটি যাদের নাম দেবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই তাদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন করবেন৷ আর সার্চ কমিটির যে বিধান রয়েছে তাতে সরকারের বাইরের লোকজনের সেখানে যাওয়ার সুযোগ নেই৷
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘বিশ্বের যেসব দেশে আইন আছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং সংসদে অন্যান্য দলের সদস্যদের নির্বাচন কমিশন গঠনে অংশগ্রহণের বিধান আছে৷ এই আইনে সবার অংশগ্রহণ নাই৷’’
তার মতে, ‘‘এই আইনটি ওয়ান স্টেপ৷ তারা দুই স্টেপের আইনের প্রস্তাব করেছিলেন৷ যেখানে সংসদে সরকারি দল, বিরোধী দল, স্পিকার সবাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে কমিশন গঠন শুরু করবেন৷ এরপর যাদের কমিশনে নেয়া হবে তাদের বিস্তারিত প্রকাশ করে আলাপ আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে৷’’
‘সরকারের সুবিধাভোগীরা, অনুগতরা ঠাঁই পাবে’
সুসাশনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, আইন যাই হোক না কেন নির্বাচনকালীন সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ নির্বাচনকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয় তাহলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷
তিনি বলেন, ‘‘এখন যে আইন হয়েছে তাতে নির্বাচন কমিশনে সরকারের সুবিধাভোগীরা, অনুগতরা ঠাঁই পাবে৷ আসলে সদিচ্ছাই বড় কথা৷ আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন৷’’