নগর পরিকল্পনা তাজা বাতাস প্রবাহের চাবিকাঠি
২৬ নভেম্বর ২০২০বাধার মুখে বাতাসের প্রবাহের আচরণ কী হয়? সুইজারল্যান্ডের আন্দ্রেয়াস রুবিন গবেষণাগারে একটি খালের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে পানির মধ্যে ভাসমান সাদা কণা দৃশ্যমান করে তুলছেন৷ ফলে খালি চোখেই প্রবাহের গতিপথ দেখা যাচ্ছে৷ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুবিন বলেন, ‘‘এখানে প্রবাহ বিনা বাধায় এগিয়ে চলেছে৷ তারপর সেটি একটি ভবনে ধাক্কা খাচ্ছে৷ দেখা যাচ্ছে বাড়ির সামনে ঘূর্ণি সৃষ্টি হচ্ছে এবং উপর দিয়ে পানির প্রবাহ চলে যাচ্ছে৷ পেছনে এক ‘সোয়ার্ল জোন’ তৈরি হচ্ছ৷ এই ভবনটির গায়ে এভাবে প্রবাহে পরিবর্তন ঘটছে৷ এখানে একটিমাত্র ভবনে এমনটা ঘটছে৷ শহরে অসংখ্য বাড়ির কারণে স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রবাহ দেখা যাবে৷’’
কোনো ভবনের উপর অথবা সেটির আশেপাশে শীতল বাতাসের প্রবাহ কেমন হয়? রুবিন সেই প্রবাহও দৃশ্যমান করে তুলেছেন৷ কিন্তু পথে বাধা সৃষ্টি হলে বাস্তবে ঠিক কী ঘটে? তিনি বলেন, ‘‘ভবনটি বাতাসের গতির দিকে থাকলে অবশ্যই প্রস্থ ও উচ্চতার উপর বাধা নির্ভর করে৷ ভবন যত উঁচু হবে, বাধাও তত বেশি হবে৷ এবার আমি আরও একটি বাধা সৃষ্টি করছি৷ দুটি বাধার মধ্যে জায়গায় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল হচ্ছে না৷ কারণ সামনে থেকে বাতাস এলে দুটি বাড়ির উপর দিয়ে চলে যাবে৷ মাঝের অংশে বাতাস চলাচল কম হবে৷ সেই প্রভাব দূর করতে আমরা বাতাসের যাত্রাপথ বরাবর তৃতীয় একটি বাড়ি বসিয়েছি৷ ফলে বাতাস এখন বাড়ির কাছ দিয়ে বয়ে যেতে পারছে৷’’
এই পরীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবন কোন দিকে মুখ করে থাকবে, নগর পরিকল্পনারসময়ে সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷ পাহাড়ের ধারে বাড়ি হলে শীতল বাতাস আটকে যাবে এবং বেশিদূর যেতে পারবে না৷ বাড়িগুলির আড়াআড়িভাবে উপত্যকার দিকে বসানো হলে সব দিকেই শীতল বাতাস বয়ে যাবে৷ বিষয়টি এতই সহজ৷
এমনকি বহুতল ভবনগুলিও শহরে বাতাস চলাচল তরান্বিত করতে অবদান রাখতে পারে৷ আন্দ্রেয়াস রুবিন বলেন, ‘‘বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে যেটা ঘটে, সেটা হলো বাতাসের প্রবাহ প্রথম ভবনের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ভবনের সামনে নীচে নেমে আসে৷ ফলে মাঝের অংশে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়৷ এভাবে শহরের মাঝে বাতাসের প্রবাহের উপর প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব৷ ভবনগুলির বিন্যাস অনুযায়ী শহরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা সম্ভব৷’’
বড় ভবন ছোট ভবন ঢেকে দিলে অবশ্য ছোট ভবনটি শীতল হতে পারে না৷ দূরত্ব বেশি রাখলে তবেই সেটা সম্ভব হয়৷
ক্রিস্টিয়ান সেভাল্ড/এসবি