ধর্ষণের কারণে জন্ম নেয়া শিশুদের কী দোষ?
১ মে ২০১৯ইসলাম ধর্মের সঙ্গে ইয়াজিদিদের অনুসরণ করা ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্য থাকার অভিযোগে আইএস ইয়াজিদি সম্প্রদায়কে সমূলে উৎপাটন করতে চেয়েছিল৷ তাই তারা ইয়াজিদি পুরুষদের হত্যা করেছে, আর কিশোর ও তরুণদের জোর করে আইএস যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেছে৷ এছাড়া নারী ও তরুণীদের যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে আইএস জঙ্গিরা৷
এসব কারণে ইয়াজিদি নারীদের গর্ভে যেসব শিশু জন্ম নিয়েছে তাদের সমাজে গ্রহণ করা হবে না, বলে শনিবার জানিয়েছে ইয়াজিদিদের ‘সুপ্রিম স্পিরিচুয়াল কাউন্সিল'৷
এই সিদ্ধান্তের কারণে ধর্ষণের কারণে জন্ম নেয়া শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷
জানা গেছে, যৌন দাসী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়া প্রায় তিন হাজার ইয়াজিদি নারী বর্তমানে সন্তানসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে৷ এদের মধ্যে একটি অংশ জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে গেছেন৷ এছাড়া কেউ কেউ সন্তানদের ছেড়ে ইয়াজিদি সমাজে ফিরে গেছেন৷ বাকি যাঁরা এখনো শিবিরে আছেন, তাঁরা কী করবেন, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷
ইয়াজিদিদের নিয়ম অনুযায়ী, ইয়াজিদিও নন-ইয়াজিদির মধ্যে বিয়ে ও সন্তান ধারণের বিষয়টির স্বীকৃতি দেয়া হয় না৷ ফলে আইএস জঙ্গিরা যেহেতু ইয়াজিদি গোত্রের কেউ নন, সে কারণে ইয়াজিদি সুপ্রিম কাউন্সিল ধর্ষণের কারণে জন্ম নেয়া শিশুদের মেনে নিতে চাইছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
এছাড়া ইয়াজিদিদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘ইয়াজদা'র উপ-পরিচালক আহমেদ বুর্জুস বলছেন, ইয়াজিদি গোত্রের জন্য অন্যতম বেদনার বিষয় হচ্ছে, এই শিশুরা এমন সব ব্যক্তির কারণে জন্মেছে, যারা কিনা ইয়াজিদি গোত্রের উপর গণহত্যা চালিয়েছে, ঘরবাড়ি লুট করেছে৷
আহমেদ বুর্জুস বলেন, ইয়াজিদি গোত্রের অনেকে মনে করেন, এই শিশুরা আসলে ভবিষ্যতে আইএস-এর নির্যাতনের শিকারদের প্রতিহিংসার শিকার হতে পারে৷ এছাড়া ইরাকের আইনের কারণে এই শিশুদের ইয়াজিদি হিসাবে নিবন্ধনও কঠিন হবে৷ কারণ, আইন বলছে, কোনো শিশুর মা-বাবার একজন যদি মুসলিম হয়, তাহলে সেই শিশুকে মুসলমান হিসেবে নিবন্ধন করা হবে৷
অ্যাক্টিভিস্টরা যা বলছেন
নোবেলজয়ী ইয়াজিদি অ্যাক্টিভিস্ট নাদিয়া মুরাদ বলছেন, ধর্ষণের শিকার মায়েরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে ফিরবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তাঁদের পরিবারই নিতে পারেন৷ এক্ষেত্রে অন্যদের সিদ্ধান্ত দেয়ার কোনো অধিকার নেই৷
আরেক অ্যাক্টিভিস্ট ও ইরাকের সাবেক সাংসদ আমিনা সৈয়দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের পরিবারেরই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷ ‘‘একজন মা হিসেবে আমি অন্য নারীরা কী অনুভব করছেন, তা বুঝতে পারি,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
গোত্রের প্রতিক্রিয়াও তিনি অনুভব করতে পারেন জানিয়ে আমিনা সৈয়দ বলেন, ‘‘কিন্তু তাঁরা তো (ধর্ষণের শিকার নারী) ভুক্তভোগী৷ আমরা যদি তাঁদের জন্য সব দরজা বন্ধ করে দেই, তাহলে তাঁদের দ্বিতীয়বারের মতো শাস্তি দেয়া হবে৷''
‘ইয়াজদা'র উপ-পরিচালক আহমেদ বুর্জুস একটি প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, সবচেয়ে ভালো হয় যদি এই নারীদের ইরাকের বাইরে অন্য কোনো দেশে পুনর্বাসন করা যায় এবং তাঁদের সম্মানের জীবন দেয়া যায়৷
টম আলিনসন/জেডএইচ