1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্মের মুখোশের আড়ালে অপরাধী

ক্যার্স্টেন ক্নিপ/এসবি৩ আগস্ট ২০১৫

এক বছর আগে ‘ইসলামিক স্টেট' ইরাকের উত্তরে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছিল৷নারীদের ব্যাপক মর্যাদাহানি ঘটেছিল৷ ডয়চে ভেলের ক্যার্স্টেন ক্নিপ মনে করেন, এর মাধ্যমে আইএস-এর নৈরাশ্যবাদী পুরুষতান্ত্রিক চরিত্র ফুটে ওঠে৷

https://p.dw.com/p/1G8wt
Irak Mossul Jesiden Flüchtlinge Frauen
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz

অপরাধের সপক্ষে যুক্তিগুলি নানা মন্তব্যের মধ্যে প্রকাশ পায়৷ বছর খানেক আগে আইএস ইরাকের উত্তরে ইরাকের উত্তরে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ভিটেমাটির উপর হামলা চালিয়েছিল৷ প্রাক-ইসলামি যুগের এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পুরুষদের হাজারে-হাজারে হত্যা করে তারা৷ নারীদের অপহরণ, বিক্রি, ধর্ষণ ও আবার বিক্রি করা হয়েছে৷ কিছু ইয়াজিদি পুরুষকে মৃত্যুর বদলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল৷ অনেকেই বাধ্য হয়ে সেই সুযোগ গ্রহণ করেছে৷ ইন্টারনেটে গণ ধর্মান্তকরণের ছবি প্রকাশিত হয়েছে৷ ভয়ার্ত কণ্ঠে তারা বলেছে, ‘‘অন্ধকারে ছিলাম, এবার আলোকিত জীবন পেলাম৷''

‘‘আমরা এখন আলোকিত জীবন পেয়েছি'' – জিহাদিদের বিশ্বাসের ভিত্তি এই বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায়৷ বিশেষ করে ইয়াজিদিদের নিপীড়নের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, যে যারা ‘আলোকিত জীবন'-এর মধ্যে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কার্যত সবকিছুর অনুমতি রয়েছে৷ পবিত্র কোরান সেই মাত্রা পর্যন্ত বিকৃত করা হয়, যতক্ষণ না জিহাদিদের কার্যকলাপের অনুমোদন পাওয়া যায় – চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধও সেই তালিকায় রয়েছে৷

‘‘আমরাই তোমাদের ঈশ্বর''

অত্যাচারীদের হাত থেকে পালিয়ে আসা এক ইয়াজিদি নারী বলেন, ‘‘ওরা আমাদের সঙ্গে কী না করেছে!'' এর বেশি তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু বিভিন্ন ভিডিও থেকে ইয়াজিদি নারীদের মর্মান্তিক দশা বোঝা যায়৷ এমনকি সাত-আট বছরের বালিকাদের ৩০-৪০ বছরের লোকেদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে৷ যে সব নারীরা ধর্ষণে বাধা দিয়েছে, তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ অনেকে নিজেদের কামনা-বাসনা মিটিয়ে নারীদের বিক্রি করে দিয়েছে৷ কয়েকজন ইয়াজিদি নারী জানিয়েছেন, তাঁদের ২০ বারেরও বেশি বিক্রি করা হয়েছে৷ অনেকে নিজেদের ধর্মকে আঁকড়ে ধরে কিছুটা শান্তি পাবার চেষ্টা করেছেন৷ ‘মালিক'-রা তাদের অবজ্ঞা করে বলেছে, ‘‘তোমাদের ধর্ম ভুলে যাও৷ আমরাই তোমাদের ঈশ্বর৷''

‘‘আমরাই তোমাদের ঈশ্বর'' – এই বাক্যটি ভালো করে ভেবে দেখা উচিত৷ জিহাদিরা কীভাবে নিজেদের হাতে মাত্রাহীন ক্ষমতা সঁপে দিয়েছে, এর চেয়ে স্পষ্ট ও নিষ্ঠুরভাবে তা বোঝানো সম্ভব নয়৷ এই বাক্য অপরাধীদের আর কোনো সীমারেখা রাখেনি৷ জিহাদিরা মুখে যাই বলুক, আসলে তারা কোনো ঈশ্বরকে মানে না – তারা নিজেরাই ঈশ্বরের ভূমিকায় অভিনয় করছে৷ আইএস আসলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে নাস্তিকদের এক আন্দোলন৷ আধুনিক যুগে এমন ‘সিনিকাল' বা নৈরাশ্যবাদী প্রবণতার সহজে তুলনা মেলে না৷ জার্মানিতে এমন এক নিপীড়নকারীকে হাড়ে হাড়ে চেনা যায়৷ সে ৭৫ বছর আগে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তার কাজ চালিয়েছে৷ যারা তার নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের দুর্দশা দেশে সেও বড় তৃপ্তি পেত৷ সেই সব মানুষও তাদের নিপীড়নকারীদের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তার সঙ্গে ইয়াজিদিদের বর্ণনার আশ্চর্য মিল পাওয়া যায়৷

Knipp Kersten Kommentarbild App
ক্যার্স্টেন ক্নিপ, ডয়চে ভেলে

সুযোগ পেলে কঠিন অপরাধ

আইএস এক আন্তর্জাতিক সংগঠন৷ সদস্যরা একাধিক দেশ থেকে এসেছে৷ শিল্পোন্নত থেকে শুরু করে কৃষিভিত্তিক অনুন্নত দেশও তার মধ্যে রয়েছে৷ কেউ এসেছে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে, কেউ বা স্বৈরতন্ত্র থেকে৷ মোটকথা অপরাধীদের পরিচয় একেবারই এক নয়৷ তাদের কোনো একটি ছাঁচে ফেলা কঠিন৷ বিশেষ করে যাঁরা বলেন, যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বীকৃতির অভাব থেকেই জিহাদি জীবন শুরু হয়, তাদের যুক্তি আর ধোপে টিকছে না৷ তার বদলে অন্য এক অনুমান আরও যুক্তিগ্রাহ্য মনে হচ্ছে৷ অনেক তরুণ মারাত্মক অপরাধী হয়ে উঠছে, কারণ তারা এই সুযোগ পাচ্ছে৷

কথা বলে, ‘সুযোগ পেলে মানুষ চোর হয়ে ওঠে'৷ দেখা যাচ্ছে, শুধু চোর নয় – সুযোগ পেলে মানুষ হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, নিপীড়নকারীও হয়ে উঠতে পারে৷ তারা অপরাধী হয়ে উঠছে, কারণ ধর্মের মোড়কে তাদের ভয়ংকর অপরাধ ঢেকে ফেলা হচ্ছে৷ আইএস তাই শুধু এক সামরিক নয়, আদর্শগত চ্যালেঞ্জও বটে৷ এই অবস্থায় সুন্নি ধর্মীয় নেতাদের কাঁধে বিশেষ দায়িত্ব এসে পড়ছে৷ তাঁদের আইএস-এর ঈশ্বরহীন কেন্দ্রবিন্দুকে দূর করতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য