ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে
২৫ এপ্রিল ২০১৯হামলার প্রক্রিয়াটি বিশ্লেষণ করলে এটিকে মূলত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উপর হামলাই বলতে হবে৷ খ্রিষ্টানদের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে ধর্মানুরাগীতে পূর্ণ তিনটি চার্চে হামলা, বিলাসবহুল হোটেলে হামলা, যে হোটেলগুলোতে সাধারণত পশ্চিমের লোকজনই বেশি যাতায়াত করে থাকেন, এমন ঘটনাকে তা ছাড়া আর কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন আপনি?
তবে অনেক বিষয়ই এখনও সন্দেহের মাঝে রয়ে গেছে৷ যেমন ঘটনার তিন দিন পর জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোতে চোখ ফেললে দেখা যায়, যে হামলাগুলোতে আইএস-এর সম্পৃক্ততা ছিল, দেরিতে নয়, হামলার ঘটনার পরপরই তারা ঘটনার দায় স্বীকার করেছে৷ আবার কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, হামলার ঘটনার কয়েকদিন পর আইএস ঘটনার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে শ্রীলঙ্কা সরকার মনে করছে যে, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে শ্রীলঙ্কায় চার্চে হামলা চালানো হয়েছে৷
প্রতিশোধ কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে
শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনাটিকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা৷ শ্রীলঙ্কায় যে পদ্ধতিতে হামলা চালানো হয়েছে, হামলাটি যতটা সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত ছিল তা বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, এ ধরণের একটি সন্ত্রাসী হামলা চালাতে যথেষ্ট সময়ের দরকার৷ আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় নিউজিল্যান্ডে হামলার পরে এ সময়টুকু তাঁদের ছিল না৷ এদিকে শ্রীলঙ্কায় চার্চের উপর হামলার ঘটনাটিকে নিউজিল্যান্ড্যের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ হিসেব অত সহজে মিলানো যায় না৷ শ্রীলঙ্কাতে খ্রিষ্টানদের দ্বারা মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার কোনো ইতিহাস নেই৷ এদিকে সংখ্যালঘু হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মুসলিমরাও নির্যাতিত হচ্ছে এমন কোনো ইতিহাস নেই৷ এখান থেকেই বের করা যেতে পারে শ্রীলঙ্কায় হামলার উদ্দেশ্য৷ বোমা হামলা করে মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীরা আসলে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চায়৷
দুঃখ, প্রার্থনা আর নজরদারি
সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের কোনো নৈতিক যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে না৷ যে কারণে, সন্ত্রাসীদের সাথে আপনার আলোচনায় বসারও প্রয়োজন নেই৷ তাঁরা বিশ্বকে দেখে বন্ধু আর শত্রু এ দুই বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে৷ আপনি কোনোভাবেই তাদের এ খেলায় যুক্ত হতে পারেন না৷ তাদের জন্য শুধুই দুঃখ করতে পারি আমরা৷ পোপ নিজেও তাঁদের কথা শুনতে আগ্রহী নন৷ সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের জন্য আমাদের প্রার্থনা থাকবে৷ ধর্মীয় পোশাকের আবরণে তারা প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে, আর প্রতিশোধের নামে তারা তাদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে চায়৷ কেউ তাদের সহযোগিতা করবে না৷ পুলিশি নজরদারি আর গোয়েন্দা জালেই আটকানো হবে তাদের৷ তবে দুঃখজনক হলো কীভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ফেলিক্স স্টাইনার/আরআর