ধরে নিয়ে যাওয়ার পরের ঘটনায় আসামি শহিদুল?
৩১ জুলাই ২০২০গত বুধবার (২৯ জুলাই) ভোর রাত ৫টার দিকে পল্লবী থানায় বিস্ফোরণে চারজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ জন আহত হন৷ শুরুতে থানা কম্পাউন্ডে পরিত্যক্ত অবস্থায় বোমা বিস্ফোরণের কথা বলা হয়৷ পরে জাননো হয়, একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি ওজন মাপার স্কেলের ছিল চারটি ককটেল৷ সেগুলোসহ তিনজন ‘সন্ত্রাসীকে' আটক করে থানায় আনার পর ককটেলগুলো ডিফিউজ করতে গিয়ে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়৷
আটক তিনজনকে বৃহস্পতিবার ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম (৪০), শহিদুল ইসলাম (২৩) ও মোশাররফ হোসেন (২৬)৷
শহিদুল ইসলামের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তার ভাইকে ঘটনার দুই দিন আগেই (সোমবার, ২৭ জুলাই) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মিরপুর ১১ নাম্বার সেকশনের বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে যায়৷ তাদের বাসাও ওই এলাকায়৷ শহিদুল তিতাস পারিবহণের বাস চালক৷
রফিকুল বলেন,‘‘ডিবি'র পোশাক ও জ্যাকেট পরা চার-পাঁচ জন একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে নিয়ে যায়৷ তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল৷'' শফিকুলকে নিয়ে যাচ্ছে খবর পেয়ে তার বাবা সবজি বিক্রেতা আব্দুল কাদের ছুটে গেলেও ততক্ষনে ম্যাক্রোবাসটি চলে যায় বলেও দাবি করেন রফিকুল৷ ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের রেকর্ড আছে বলে দাবি করা হয়েছে৷
রফিকুলের দাবি, এরপর ডিবি ও র্যাবের সাথে যোগাযোগ করেও শফিকুলের কোনো খোঁজ না পেয়ে ২৭ জুলাই রাত ১২ টার আগে পল্লবী থানায় মা পিয়ারী বেগম নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷
২৯ জুলাই দুপুরের পর টেলিভিশনের খবরে পল্লবীতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আটকদের দেখানো হয়৷ সেখানে শহিদুলকে দেখে পরিচিতরা তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেন৷ পরে তারাও টেলিভিশনে দেখেন৷ কিন্তু এরপর তারা চেষ্টা করেও ডিবির সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি বলে পরিবারের দাবি৷
বৃহস্পতিবার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে ঘটনা জানিয়ে ও জিডির কপি দিয়ে জামিনের আবেদন করলেও আদালত শহিদুলকে জামিন না দিয়ে ১৪ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে দেয়৷
রফিকুলের দাবি, থানায় জিডি করার পাশাপাশি মিরপুর র্যাব-৪ এ যোগাযোগ করে সেখানেও শফিকুলকে তুলে নেয়ার ব্যাপারে একটি অভিযোগ করা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইকে তুলে নেয়ার আধাঘণ্টা পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল৷ কিন্তু বুধবার দিবাগত রাত ২টার পর তার ফোন থেকে একটা মিসড কল আসে৷ আমি কল ব্যাক করলে প্রথমবার কেউ ফোন ধরেনি৷ দ্বিতীয়বার ফোন করলে একজন ফোন ধরে বলেন, আমরা অভিযানে ব্যস্ত আছি৷ পরে ফোন করেন৷''
শহিদুলসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়েছে৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন (মিডিয়া) বলেন, ‘‘শহিদুলসহ তিন জনকে অস্ত্র এবং বিস্ফোরকসহ আটক করা হয় বড় ধরনের অপরাধের প্রস্তুতিকালে৷ তাদের কারণেই পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ আমরা ধারণা করছি, তারা গুরুত্বপূর্ণ কাউকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল৷ এখন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে৷''
শহিদুলকে পল্লবী থানার বিস্ফোরণের দুইদিন আগেই আটকের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তারা তো অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ঘটনার রাতে আটক হয়েছে৷ তারপরও শহিদুলের পরিবারের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷''
শহিদুলের বিরুদ্ধে থানায় এর আগে কোনো অভিযোগ ছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ তবে রফিকুল দাবি, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আগে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই৷
তবে শহিদুলকে তুলে নেয়ার ঘটনায় থানায় নিখোঁজের যে জিডি করা হয়, তার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার সাব ইন্সপেক্টর অনয় কুমার দাবি করেন, ‘‘শহিদুলের বিরুদ্ধে এর আগেও থানায় একাধিক মামলা আছে৷ আর জিডির পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে তাকে ২৭ জুলাই কেউ তুলে নিয়ে গেছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারিনি৷'' তবে কী ধরনের মামলা, কতটি মামলা তা তিনি জানাতে পারেননি৷
এদিকে এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ কিন্তু উপ-পুলিশ কমিশনার ওয়ালিদ বলেন, ‘‘এটি একটি ভুয়া দাবি৷ এই বিস্ফোরণের সাথে আমরা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিক তদন্তে খুঁজে পাইনি৷ যারা জড়িত, তারা পেশাদার অপরাধী৷ কিন্তু আমরা সব দিকেই তদন্ত করছি৷''