1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দ্রুতগতির ট্রেন গিলে খাবে বনাঞ্চল!‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৩ জুন ২০১৮

শুরু থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছিল৷ ছোট শহরগুলির মধ্যে সস্তার বিমান যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও জাপানের কাছে বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে ৩২০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টার ট্রেনের কী প্রয়োজন?‌ এবার, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের অভিযোগে শোরগোল ভারতে৷

https://p.dw.com/p/2zQxJ
ছবি: imago/imagebroker

শুরু থেকেই বিতর্ক দানা বেঁধেছিল৷ ছোট শহরগুলির মধ্যে সস্তার বিমান যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও জাপানের কাছে বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে ৩২০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টার ট্রেনের কী প্রয়োজন?‌ আর এবার, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের অভিযোগে শোরগোল ভারতে৷

মুম্বই-আমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন নিয়ে চাপানউতোর এখন চরমে উঠেছে৷ দ্রুত গতির এই রেল প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে৷ অধিগ্রহণ শুরু হতেই প্রতিবাদে নেমেছেন কিছু পরিবেশ সচেতন মানুষ৷ কিন্তু কেন?‌ কারণ,নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হলে ধ্বংস হবে সবুজ৷ নিকেশ করতে হবে বহু ম্যানগ্রোভ৷ সংখ্যাটা কম-বেশি প্রায় দেড় লক্ষ৷ তাছাড়া মুম্বইয়ের থানে এলাকায় জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য, এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ আগামী ডিসেম্বরে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের এই বুলেট ট্রেনের জন্য মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মোট ৩১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের জমি দিতে হবে৷ এছাড়াও বন দপ্তর ও রেলের হাতে থাকা ৭,৯৭৪টি জমির অংশ অধিগ্রহণ করবে হাইস্পিড রেল কর্পোরেশন৷ এখানেই আপত্তি তুলেছেন পরিবেশবিদ ও মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলি৷ নানা মহলের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে উদ্ভিদ নিকেশের ঘটনায় শহরের জনজীবনে কুপ্রভাব পড়বে৷ বিশেষত, গাড়ির ধোঁয়া এবং নির্মাণ কার্যের ধুলোয় আরও বিপর্যন্ত হবে জনজীবন, যার প্রভাব পড়বে মানুষের স্বাস্থ্যে৷ সমস্যায় পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম৷ এ জন্য আরও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে৷ সব মিলিয়ে জাপানের সহযোগিতায় ১.‌০৮ লক্ষ কোটির এই রেল প্রকল্প নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে৷

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাস দত্ত অবশ্য পরিবেশ ও উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষার কথা বলছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‌‘‌ভারতে পরিবেশবিদ বা স্বেচ্ছাসেবীসংস্থার নামে হয় রাজনৈতিক স্বার্থ, নতুবা বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষায় কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়৷ বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছুর প্রভাব থাকা অবাস্তব নয়৷ এমনিতে এ দেশে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি বহু ক্ষেত্রেই সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হয়৷ ম্যানগ্রোভের নামে যাঁরা চিৎকার করছেন, দেখতে হবে তাঁদের কেউ স্পনসর করছেন কিনা৷ অতীতে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে তেমনটাই দেখেছি আমরা৷ সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে৷ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও সমীক্ষা করে বিকল্প খুঁজে দেখতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, পরিবেশের নামে উন্নয়ন রুখে দেওয়ার ‘‌চক্রান্ত'‌-‌এর শিকার হচ্ছি না তো!‌'‌'‌

‘খেয়াল রাখতে হবে, পরিবেশের নামে উন্নয়ন রুখে দেওয়ার ‘‌চক্রান্ত’‌-‌এর শিকার হচ্ছি না তো’‌

বিপুল অঙ্কের এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কোথাও পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তাহলে কীভাবে সেটা এড়িয়ে যাওয়া যায় তা খোঁজা উচিত বলেই মনে করেন সুভাস৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এক্ষেত্রে দেখতে হবে, ম্যানগ্রোভ বাঁচিয়ে বুলেট ট্রেন চালানো যায় কিনা সেটা দেখতে হবে৷ কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সমাজের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি৷ পরিবেশের পক্ষেও মঙ্গলজনক৷'‌'

অন্যদিকে, পরিবেশের ক্ষতি রুখতে সরকারকে সাত লক্ষ ম্যানগ্রোভ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ তার জন্য অতিরিক্ত ৯৪ হেক্টর জমি প্রয়োজন৷ বুলেট ট্রেন প্রকল্পের জন্য মহারাষ্ট্রের ৭৭.৪৫ হেক্টর বনভূমি এবং ১৮.৯৮ হেক্টর ম্যানগ্রোভ ভূমি নষ্ট হতে চলেছে বলে অভিযোগ৷ কিন্তু সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ এরই প্রতিবাদে পথে নেমেছেন পরিবেশপ্রেমী মানুষজন৷ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে একাধিক সংগঠন৷

প্রসঙ্গত, মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুর্লা সংলগ্ন এলাকা থেকে গুজরাটের আমেদাবাদ পর্যন্ত চালু হবে বুলেট ট্রেন৷ শীঘ্রই কাজ শুরু হবে মুম্বইয়ে৷ প্রাথমিকভাবে ঘোষিত হয়েছিল, এই দ্রুত গতির রেল প্রকল্পের জন্য থানের (‌মুম্বই)‌ সামুদ্রিক খাড়ি এলাকার ম্যানগ্রোভের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই চালু হবে রেল প্রকল্প৷ পরে জানানো হয়, ভারতে প্রথম দ্রুত গতির এই রেল প্রকল্পের বলি হবে দেড় লক্ষ ম্যানগ্রোভ৷ স্থানীয় উল্লাস, বেতরনা হয়ে গুজরাতের নর্মদা নদী ঘেঁষা এলাকা দিয়ে এই ট্রেন ছুটবে৷ প্রতি ট্রেনে ৭৫০ যাত্রী বহনকারী দ্রুত গতির এই ট্রেনের গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ৩২০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার, যা মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাটের বর্তমান ৮ ঘণ্টার দীর্ঘ সফরের সময়সীমা নামিয়ে আনবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায়৷ আগামী সাত বছরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে৷

পরিবেশপ্রেমীরা আদালতের দ্বারস্থ হন৷ এক নির্দেশে সরকারকে আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, যদি ম্যানগ্রোভ নিধন করা ছাড়া আর কোনো উপায় না থাকে তবে, যে সংখ্যক ম্যানগ্রোভ কাটা পড়বে তার পাঁচগুণ ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে৷ আদাতের এই রায়ের পর সরকারের তরফে কোনো উচ্চবাচ্চ নেই৷ আসলে এই বিপুল সংখ্যক গাছ লাগাতে হলে রেল প্রকল্পের জন্য গৃহিত জমি ছাড়াও অতিরিক্ত ৯৪ হেক্টর জমি প্রয়োজন হবে৷ এদিকে, যেমন তেমন জমিতে ম্যানগ্রোভ লাগানো যায় না৷ এর জন্য প্রয়োজন সামুদ্রিক খাড়ি অঞ্চল৷ থানে এলেকায় কিছু জমি চিহ্নিত হলেও কাজ এগোয়নি৷ সূত্রের খবর, রেল প্রকল্প যাতে থমকে না যায়, সেজন্য ম্যানগ্রোভ লাগানোর জমি খোঁজা চলছে৷ ইতিমধ্যেই নবি মুম্বই, ভিবন্ডি, কল্যাণ, ডেম্বিবলি, পালঘর জেলায় ম্যানগ্রোভ লাগানোর জমির কেনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে রেল কর্তৃপক্ষ৷ ‘‌ন্যাশনাল হাইস্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড'‌ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিআরজেড বা ‘‌কোস্টাল রেগুলেশন জোন'‌ এলাকায় কোনোরকম স্থায়ী নির্মাণ করার নিয়ম নেই৷ ফলে ওই অঞ্চলে ভূতল দিয়ে রেল করিডোর তৈরি হবে৷ তা সত্ত্বেও পালঘর ও থানে জেলায় মোট ৭৭ হেক্টর জমি কিনে সেখানে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হবে৷ তার আগে বান্দ্রা-‌কুর্লা কমপ্লেক্স থেকে থানে পর্যন্ত বিশেষ করিডোরে ‌সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের কাছে আন্ডারগ্রাউন্ড পাস তৈরি করবে রেল কর্তৃপক্ষ৷ যদিও সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যানের মুখ্য বন আধিকারিক আনোয়ার আহমেদ রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন কোনো প্রস্তাব পাননি বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন৷

পরিবেশপ্রেমী তথামহারাষ্ট্র মুসলিম পুরোগামী সংগঠনের সভাপতি আসাদ চাউস রয়েছেন আন্দোলনের সামনের সারিতে৷ তাঁর কথায়, ‘‘‌কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার, রেল কর্তৃপক্ষ, এমনকি ভারতীয় ম্যানগ্রোভ রক্ষাকারী সংস্থাগুলিও (‌সরকার অনুমোদিত)‌ আশ্চর্যজনকভাবে মুখ বন্ধ করে রয়েছে৷'‌'‌ একই বক্তব্য পরিবেশবিদ দীনেশ মিশ্রর৷ অপর এক পরিবেশবিদ গোপাল ঝাবেরির কথায়, ‘‌‘‌প্রথমত মু্ম্বই-‌আমেদাবাদের মধ্যে কোনো বুলেট ট্রেনের প্রয়োজন নেই৷ ইতিমধ্যেই এই দুই শহরের মধ্যে সহজ বিমান পরিষেবা চালু আছে৷ ঘোডবন্দর থেকে দাহানু অঞ্চলে সবুজ বন ধ্বংস হলে এলাকার পরিবেশ ও স্থানীয় মানুষের ওপর তার কুরভাব পড়বেই৷ নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য