দ্রাগির দাওয়াইয়ে খুশি ইউরোপ
১১ জুন ২০১৪গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার রেকর্ড মাত্রায় কমানোর ফলে পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে৷ বন্ড বাজারেও গতি এসেছে৷ অর্থাৎ অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতে ইসিবি-র দাওয়াই বেশ কাজ করছে৷ সুদের নিম্ন হারের ফলে বিনিয়োগ বেড়ে যাচ্ছে৷ মার্কিন ডলারের তুলনায় ইউরো-র বিনিময় মূল্যও অনেক কমে গেছে, যা ইউরোপ থেকে রপ্তানির জন্য সহায়ক হতে পারে৷ তবে প্রায় তিন দিন একটানা উন্নতির পর মঙ্গলবার পুঁজিবাজার আবার কিছুটা থমকে গিয়েছিল৷
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপের অর্থনীতি জগতের জন্য এই প্রবণতা কতটা স্থিতিশীল? ইসিবি-র প্রধান মারিও দ্রাগি আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের শুরু থেকেই বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছেন৷ ফলে ইসিবি-র পদক্ষেপ ও মন্তব্য বাজারকে বার বার শান্ত করেছে, ইউরোপের প্রতি আস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে ইউরোপের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিয়ে৷ বাজার যে রকম স্পষ্ট, ধারাবাহিক নীতি দেখতে চায়, প্রত্যাশা অনুযায়ী সেটা ঘটছে না৷ তার উপর গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইইউ-বিরোধী ভোটের মাত্রার কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে চাঙ্গা করতে যে কাঠামোগত অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সদস্য দেশগুলির নীতির মধ্যে যে সমন্বয়ের প্রয়োজন, শীর্ষ নেতারা সেই সব পদক্ষেপ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত তাঁরা অবশ্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন৷ যেমন আর্থিক উদ্ধার তহবিল গঠন, জাতীয় স্তরে আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে আরও কড়া নিয়ম চালু করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করা ইত্যাদি৷ আসলে তাঁরা কিছুটা উভয় সংকটে পড়েছেন৷ একদিকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং জনসমর্থন নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ অন্যদিকে কাঠামোগত নীতির রূপায়ণ করতে হলে ব্রাসেলস-এর হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দিতে হয়৷ এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনাই মূল চ্যালেঞ্জ৷
এই প্রেক্ষাপটে সংকটগ্রস্ত দেশগুলির ভূমিকাও চোখে পড়ার মতো৷ যে সব দেশকে বেলআউট নিতে হয়েছিল, গ্রিস ও সাইপ্রাস ছাড়া বাকি সবাই আবার পুরোপুরি আর্থিক বাজারে প্রবেশ করতে পেরেছে৷ গ্রিসও পাঁচ বছরের বন্ড বাজারে ছেড়েছে৷ সংস্কার ও বাজেট সামলানোর পদক্ষেপের কারণেও বাজারে এই সব দেশের প্রতি আস্থা বাড়ছে৷ শুধু বেকারত্বের মোকাবিলার ক্ষেত্রে কিছু দেশ অগ্রগতি দেখাতে পারছে না৷ বিশেষ করে স্পেন ও গ্রিসের পরিস্থিতি সবচেয়ে কঠিন৷ তাছাড়া এই সব দেশের বিপুল ঋণভার ধীরে ধীরে কমাতে হবে৷ অন্যদিকে বেলআউট-এর প্রয়োজন না হলেও ফ্রান্স ও ইটালিতে সংস্কারের অভাবের কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা৷ ইটালি কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু ফ্রান্সের অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)