দৈহিক নিগ্রহের শিকার আফগান মেয়ে এখনও হাসপাতালে
১৩ জানুয়ারি ২০১২সাহার গুল হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানে নারীদের অধিকারের এক রক্তাক্ত মুখচ্ছবি৷ বিয়ের পরই তার ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার৷ তাকে পতিতা হিসেবে কাজ করাতে চায় শ্বশুর-শাশুড়ি৷ সাহার গুল কিছুতেই রাজি হয়নি৷ মারধোর করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা৷ সাহারকে প্রায় ছয় মাস একটি টয়লেটে আটকে রাখ হয়৷ গরম ইস্ত্রি দিয়ে সাহারের গা পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ তার আঙুলের নখ তুলে ফেলা হয়৷ কয়েকটি আঙুল ভেঙেও ফেলেন তারা৷ তার স্বামী কখনোই তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি৷
সাহার গুলের অবস্থা জানিয়ে তার চাচা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ উদ্ধার করা হয় সাহারকে৷ তাকে পাঠানো হয় ওয়াজির আকবর খান হাসপাতালে৷ সেখানে তার চিকিৎসা এখনো চলছে৷ নার্স লতিফা মির্জাদ জানান, ‘‘সাহার এখন খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে৷ সে এতদিন বিছানায় পড়ে ছিল৷ সে অল্প অল্প করে খাবার খাচ্ছে৷ কথা বলে অত্যন্ত দুর্বল কন্ঠে৷ এবং যখনই সে কথা বলে তখনই তার ওপর কোন ধরণের অত্যাচার চালাতো শ্বশুর-শাশুড়ি সেই কথাই উঠে আসে৷ সারাক্ষণই সে বিড়বিড় করে বলছে আমারা শশুর-শাশুড়ি আমাকে মেরেছে৷''
সাত মাস আগে সাহার গুলকে হুইল চেয়ারে করে হাসাপাতলে নিয়ে আসা হয়৷ তার সারা মুখ ছিল ফোলা৷ চোখের কোনে রক্ত জমে আছে৷ অথচ সাতমাস আগেই তার বিয়ে হয়েছে৷
সাহার গুলের কথা সরাসরি প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে জানানো হয়৷ বুধবার আফগান নারী সংস্থার একটি প্রতিনিধি বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন৷ প্রেসিডেন্ট কারজাই হস্তক্ষেপ করেন৷ কাপুরুষের মত যারা এধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন তিনি৷ পুলিশ ইতিমধ্যেই সাহার গুলের শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তারা পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছে৷ সাহারের স্বামী আফগান সেনাবাহিনীতে কর্মরত৷ তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে৷
অক্সফাম ইন্টারন্যশনাল গত বছরের অক্টোবর মাসে একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিবাহিত আফগান মেয়েদের শতকরা ৮৭ শতাংশই বিভিন্ন ধরণের মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারের সম্মুখীন হয়৷ এবং এদের সবাইকেই জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় আরেক সংস্থা ‘দ্যা আফগান ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইট্স কমিশন' ২০০১ সালের প্রথম ছয় মাসেই এক হাজার ২৬টি গৃহ নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে৷ ২০১০ সালে ঘটে প্রায় দুই হাজার সাতশো ঘটনা৷
সাংসদ ফওজিয়া কোফি আক্ষেপের সঙ্গে জানান, এই ঘটনা যদি কয়েক বছর আগেও ঘটতো তাহলে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না৷ কারণ তখনও পরিবারের মধ্যে এসব ঘটনার কথা গোপন রাখা হত৷ বাড়ির মেয়ে বা বউয়ের ওপর কোন ধরণের অত্যাচার চালানো হয়েছে তা কখনোই বাইরের মানুষরা জানতে পারতো না৷ তবে আশ্বাস প্রদান করে তিনি বলেন, দিন পাল্টাচ্ছে৷ মেয়েরা মুখ খুলছে৷ নিজেদের অধিকারের দাবিতে মেয়েরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক