1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি সংশয়ে

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

চলতি বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ ধরা হলেও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বলছে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি হতে পারে সর্বোচ্চ ৬.৬ শতাংশ৷ এটাকে অবশ্য এডিবি ভালো প্রবৃদ্ধি মনে করে৷

https://p.dw.com/p/4HDQI
Bangladesch | Hutfabrik in Dhaka
বাংলাদেশে জিডিপির প্রধান তিনটি খাত কৃষি, শিল্প এবং সেবা ঝুঁকির মধ্যে আছে (প্রতীকী ফাইল ফটো)ছবি: Habibur Rahman/Zuma/picture alliance

অবশ্য বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করছেন এডিবি যে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলছে তাও অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে৷ সেটা করা গেলে সাফল্যই বলা যাবে৷
এডিবি এ চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে৷ তাদের কথা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়  মূল্যস্ফীতি বাড়ছে ৷ গত  দুই মাসে ধরেই বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের বেশি৷
এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুক বলছে, স্থানীয় ভোগ চাহিদা কমে যাওয়া, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ গতির কারণে কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে কম হবে৷ গত অর্থ বছরে অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২ শতাংশ৷
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং মনে করেন,"সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং জ্বালানি সংকটের কারণে এ বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ হবে না৷  সরকারি বিনিয়োগেও ধীরগতি দেখা দেবে ৷ এ অবস্থায় সরকারকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে৷ তাই দেশের ভিতর থেকেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বেসরকারি খাতের বিকাশ ঘটাতে হবে৷ বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ে বৈচিত্র্য আসছে৷ বিশেষ করে ওষুধ ও কৃষি খাতে বছরে ১০০ কোটি ডলারের রপ্তানি হচ্ছে৷ এই বৈচিত্র্য আরো বাড়ানো প্রয়োজন৷ প্রবাসী আয়ও আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ এই ধারা ধরে রাখতে হবে৷”
তিনটি প্রধান খাতই সংকটে
বাংলাদেশে জিডিপির প্রধান তিনটি খাত কৃষি, শিল্প এবং সেবা ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ এই তিন খাতেই কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি আসবে না বলে জানান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর৷ তিনি বলেন,"এডিবি তারপরও ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলছে৷ কিন্তু আমার কাছে সেটাও আকাশ কুসুম মনে হয়৷ এটা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়৷ যদি হয় সেটাকে অনেক বড় সাফল্য বলে ধরে নিতে হবে৷”
তার কথা,"অর্থনীতি নানামুখী চাপে আছে৷  মানুষের ভোগ ব্যয় কমে গেছে৷ তাদের হাতে টাকা নেই৷ আমরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছি৷ রপ্তানিও কমছে৷ গ্যাস , বিদু্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন কমে যাচ্ছে৷ কোনো কোনো শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এবার বেরো এবং আমন দুইটি ফসলই মার খেয়েছে৷ পাটও নষ্ট হয়েছে৷”
তিনি বলেন,"আবাসন শিল্প ও গৃহায়নে খারাপ অবস্থা৷ রড আর সিমেন্টের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ এর প্রভাব পুরো নির্মাণ শিল্পে পড়ছে৷”
মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন৷ তার কথা ,"ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷”

‘বৈশ্বিক কারণেই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রিভাইজ করা হচ্ছে’

বিশ্ববাজারের প্রভাবসহ অভ্যন্তরীণ এই ধরনের ক্রাইসিসে ইকনোমিক ম্যাজেমেন্ট দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেয়া যায়৷ কিন্তু এটার প্লেয়ার যে কে তাই তো বোঝা যাচ্ছেনা৷ লিডারশিপটা দেখা যাচ্ছেনা৷ অর্থমন্ত্রী আছেন কী নেই তাই তো স্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ৷
অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে সংকট
সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন," বিশ্বে নানা অনিশ্চয়তার  কারণেই এখন উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রিভাইজ করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশও তার বাইরে নেই৷ যদি বাস্তবে এবার ৬ শতাংশও প্রবৃদ্ধি হয় সেটাও অনেক ভালো বলতে হবে৷”
তার মতে,"অর্থনীতির এই অবস্থার পিছনে এখন নেগেটিভ চেইন এফেক্ট কাজ বরছে৷ বাইরে থেকে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে৷ এখন অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু তার সম্ভাবনাও কম৷ রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এই দুইটি আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলছে৷ এই ধরনের পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে রপ্তানিমূখী খাতে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না৷ আর বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন শুধু বাধাগ্রস্ত হয় না, নতুন বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হয়৷”
তার কথা," এখন বিনিয়োগ বাড়াতে স্বল্প মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা না নিয়ে কমপক্ষে মধ্য মেয়াদে নিতে হবে৷ আর সেটা হলো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীল করতে হবে৷”
তিনি বলেন,"মূল্যস্ফীতি,  নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে বাজার ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষকে খাদ্য এবং অর্থ সহায়তার আওতায় আনতে হবে৷ এটা  ভোগ বাড়ালে অভ্যন্তরীণ বাজারে গতি আনবে৷”
আর বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের ঋণ সহায়তা বাংলাদেশের জন্য জরুরি৷ এটা বাজেট বাস্তবায়ন সহজ করবে এবং অর্থনীতির ওপর চাপ কমাবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ৷ যা খারাপ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহায়তা করবে৷