দূষণ থেকে রেহাই নেই দিল্লির
প্রতি শীতেই ঘুরেফিরে শিরোনামে উঠে আসে বিষাক্ত দিল্লির বাতাস৷ কেন বদলাচ্ছে না বাস্তবতা, জানুন ছবিঘরে...
কতটা দূষিত দিল্লি?
দিল্লির বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া আর দিনে ২৫টা সিগারেট খাওয়ার প্রভাব ফুসফুসের ওপর সমান৷ এতটাই দূষিত ভারতের রাজধানীর বাতাস যে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম বিপজ্জনক বাতাসের মানের চেয়ে ২০ গুণ খারাপ৷ ভারতের কেন্ত্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রক সিপিসিবি জানাচ্ছে, বাতাসের মানের মাপকাঠিতে সবচেয়ে বেশি দূষণের মাত্রা হয় ৫০০৷ দিল্লির বাতাস সেই মাপকাঠিতে কখনোই ৪৫০ থেকে নামে না ও প্রায়ই ৫০০ ছুঁয়ে থাকে
দূষণের স্থানীয় কারণ
নিকটবর্তী হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কৃষিবর্জ্য পোড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত যানচলাচল দিল্লির বাতাসকে নিশ্বাসের অযোগ্য করে তুলেছে৷ এছাড়া, ভারতের অন্যান্য শহরের চেয়ে তুলনায় দিল্লিতে বেশি শীতের আবহাওয়া থাকায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে ও বিভিন্ন দূষকের কণা বাতাসে আটকে থাকে৷
ভৌগলিক কারণ
ক্লিন এয়ার এশিয়ার ভারত অঞ্চলের প্রধান প্রার্থনা বরা ডয়চে ভেলেকে জানান, অবস্থানগত কারণের জন্য দিল্লির এই সমস্যা গুরুতর হচ্ছে৷ আশেপাশে কোনো জলাধার না থাকায় ও আবহাওয়ার ধাঁচ শীতপ্রধান ও শুষ্ক হওয়ায় দূষিত বাতাস পালাবার জায়গা পায় না৷ এছাড়া, তীব্র বেগে চলা বাতাস প্রায়ই সাথে করে আরো বাড়তি ধুরো নিয়ে আসে, যা আরো খারাপ করে পরিস্থিতি৷
প্রভাব
সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রতি শীতেই আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিশ্বাসজনিত ও হৃদরোগ-সম্পর্কিত রোগীদের বাড়ন্ত দেখতে পাই৷ দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকাশ রোধ করে৷ দিল্লিতে বর্তমানে প্রতি তিনজনে একজন শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ বহু শিশুর ফুসফুস সম্পূর্ণ বেড়ে ওঠে না ও সেখানে রক্তক্ষরণও হয়=তে থাকে৷’’
কোভিড, উৎসব ও দূষণ
নিকৃষ্ট বাতাসের মান দিল্লির বাসিন্দাদের সবল ফুসফুসকে বিকল করছে৷ এরসাথে উৎসবের মরসুমে আতশবাজির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকে এই মান আরো নিচে নামাতে থাকে৷ অসমর্থ্য ফুসফুস কোভিড সংক্রমণ টেকাতে পারছে না, ফলে হু হু করে বাড়ছে দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ, মনে করছেন অনেকে৷ সোমবার দিল্লিতে একদিনে সাত হাজার ৭৪৫টি নতুন সংক্রমণ দেখা যায়৷
কর্তৃপক্ষের অভিমত
২০১৯ সালে কৃষিবর্জ্য পোড়ানো থামাতে আইনী নির্দেশ এলেও, তার বাস্তবায়ন এখনও হয়নি৷ জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনাল নভেম্বর মাসে আতশবাজি পোড়ানো বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ‘গ্রিন অ্যাপ’ চালু করেছেন, যাতে করে দুষণবিষয়ক নাগরিক নালিশ নথিভুক্ত করা যায়৷
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অনুমিতা রায়চৌধুরীর মতে, অবিলম্বে শহরে বিকল্প গণপরিবহণের কথা ভাবতে হবে, বাড়াতে হবে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যানচলাচল৷ পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন ও শিল্পক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার চালু করতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি৷ তবে এসবের কিছুই সরকারী তৎপরতা ছাড়া সম্ভব নয়, মনে করেন রায়চৌধুরী৷