ইন্টারনেট সম্মেলন
১৫ ডিসেম্বর ২০১২গত সোমবার শুরু হওয়া আইটিইউ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর কারণে ব্যর্থ হয়েছে৷ ১৯৩টি দেশের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়ে শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলেছে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত৷ যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি দেশ বৃহস্পতিবার জানায় যে, সম্মেলনে প্রস্তাবিত নীতিমালায় জাতিসংঘ সহ কিছু সংস্থাকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে - তাই এমন নীতিমালায় সম্মতি জানাতে তারা অপারগ৷
অথচ সম্মেলনের আগে আইটিইউ-এর প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে আশার কথাই শোনা যাচ্ছিল৷ আইটিইউ-এর মহাসচিব হামাদুন টুর তখনও অবশ্য আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ইন্টারনেট এখনো ধনী দেশগুলোর করায়ত্তে৷ একই সময় সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে - এমন আশঙ্কার কথাও বলেছেন কেউ কেউ৷ গুগল তো সতর্ক করে বলেছিল, এ আয়োজন মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও সম্মেলনের পক্ষে ছিল না৷ ইউরোপের অধিকাংশ দেশই মনে করে, এখন যেভাবে ইন্টারনেট পরিচালিত হচ্ছে তা-ই ভালো৷ তবে আইটিইউ শুরু থেকেই সবাইকে আশ্বস্ত করে আসছে এই বলে যে, সম্মেলনে ক্ষতিকর কিছু হবার সম্ভাবনা নেই৷ ইন্টারনেটে বিনিয়োগ ও এতে বেশি মানুষের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছিল তারা৷
কিন্তু বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং আরো কয়েকটি দেশ সরে দাঁড়ানোয় সেই লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি টেরি ক্র্যামার চুক্তিতে তাঁর দেশ স্বাক্ষর করবে না জানানোর পর রাশিয়ার আন্দ্রেই মুখানভ তাই হতাশ হয়ে বললেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা হয়তো ছোট একটা অংশকে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার পেতে দেখব৷ সেটা খুবই খারাপ হবে৷ আশা করি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সহকর্মীরা একটা গঠনমূলক সিদ্ধান্তের দিকে যাবেন৷ ''
সেই সম্ভাবনা আপাতত শেষ৷ যুক্তরাষ্ট্র যতই মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলুক ইন্টারনেটে অবাধ তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি যে উদার নয় তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় উইকিলিকসের কথা৷ অবশ্য আইটিইউ সম্মেলনের আগে থেকেই ইন্টারনেটে তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টির সুযোগ অনেকটাই উন্মুক্ত৷ অনভিপ্রেত ই-মেইল, অর্থাৎ ‘স্প্যাম' ঠেকাতে গিয়ে অনেক দেশই রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে তথ্য বিনিময়ও রোধ করছে অনেক ক্ষেত্রে৷ এ অভিযোগ যেনতেন কারো নয়৷ খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ক্র্যামারই বলেছেন এ কথা৷ দুবাইয়ের সম্মেলনে যে চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা সেখানেও অবশ্য অনাকাঙ্খিত মেইল প্রতিরোধের ধারাটি রয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং সমমনা আরো কিছু দেশ সরে দাঁড়ালেও শুক্রবার সম্মেলন শেষ হবার আগে বাকি দেশগুলোর ঠিকই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার কথা৷ সেটা যে আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে বেশি কিছু নয় তা সম্মেলনে অংশ নেয়া সবাই বুঝতে পারছেন৷ আইটিইউ-এর মহাসচিব হামাদুন টুর যে আক্ষেপ সম্মেলন শুরুর আগে করছিলেন সেটা তো দূর হচ্ছে না৷ ইন্টারনেট ধনী দেশগুলোর করায়ত্তে থাকছেই৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি তারিক আল আওয়াধি তাই খুব দুঃখ করে বলছিলেন, ‘‘আমরা সবই দিলাম, কিন্তু বিনিময়ে কিছু পেলাম না৷''
এসিবি / জেডএইচ (রয়টার্স)