ক্ষমা চাইলেন আশরাফুল
৪ জুন ২০১৩আইসিসি-র চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবি৷ মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে স্থান করে নেয়া আশরাফুল বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক স্বপ্নের ধন৷ ১৭ থেকে ২৯ – এই ১২ বছর বা এক যুগে আশরাফুল তাঁর ক্রিকেট দিয়ে জাতিকে মাতিয়েছেন৷ তৈরি করেছেন অনেক রেকর্ড৷ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান৷ আর তা করেছেন সেই অভিষেকের মুহূর্তেই৷
কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার মতো মহাপরাক্রমশালী দলকে বধের নায়ক তিনিই৷ আবার ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ক্রিকেট প্রেমী বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনিই৷ সেই আশরাফুলকে মঙ্গলবার জাতীয় ক্রিকেট দল থেকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি৷ অভিযোগ তিনি বিপিএল-এ স্পট ফিক্সিং-এ জড়িয়েছেন৷
আইসিসি-র তদন্তে তিনটি ম্যাচের কথা বলা হয়েছে৷ আর তা হলো ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকা- চট্টগ্রাম, ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা- খুলনা এবং ১২ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা-বরিশাল বিপিএল ম্যাচ৷ বিসিবি-র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইসিসি-র দুর্নীতি দমন বিভাগ আকসুর তদন্ত কমিটির কাছে আশরাফুল নিজেই তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন৷ সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশিতও হয়েছে৷ আশরাফুল তার প্রতিবাদ করেননি৷ তাই তাঁকে প্রাথমিকভাবে জাতীয় ক্রিকেট দলসহ সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি৷ আকসুর চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ জানা গেছে, তাতে আশরাফুলকে পাঁচ বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে৷ বিসিবি সভাপতি জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে যদি আরো কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
বিসিবি আশরাফুলকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পর তিনি সংবাদ মাধ্যমেকে বলেন, দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে তিনি সব দায় স্বীকার করে নিচ্ছেন৷ তিনি তাঁর এই অপরাধের জন্য দেশের মানুষ, ক্রিকেট প্রেমী, ভক্ত এবং অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন৷ তিনি বিবেকের দংশনে আকসুর কাছে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানান৷ আর বিসিবি-র দেয়া সব শাস্তি তিনি মেনে নেবেন বলেও জানিয়েছেন আশরাফুল৷
এদিকে জাতীয় ক্রিকেট দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বিসিবি-র সিদ্ধান্তকে সময়োচিত এবং যথার্থ বলে মনে করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেক বলেন, অনেক দিন ধরেই এই কেলেঙ্কারির কথা শোনা যাচ্ছিল৷ তাই এই শস্তিমূলক ব্যবস্থার পর বাংলাদেশের ক্রিকেট কলঙ্ককে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে৷ এখন যাঁরা খেলছেন এবং ভবিষ্যতে যাঁরা খেলবেন তাঁদের জন্য সতর্ক বার্তা হয়ে থাকবে এটি৷ সাবাই জানবে, খেলোয়াড়দের কাজ খেলা, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না৷ তিনি মনে করেন, শুরুতেই ধরা পড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেল৷ বলা বাহুল্য, এ ধরনের বিপর্যয় বহুবার দেখা গেছে প্রতিবেশী দেশে৷
তাঁর মতে, আইসিসি-র চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আরো যাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হবে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তবে তার আগে বিসিবি যেন ঐ তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখে৷ কারণ যাঁরা শস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা আমাদের জাতীয় বীর৷ তাঁরা যেন ন্যায়বিচার পান৷
রকিবুল হাসান বলেন, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং দোষ স্বীকার করে আশরাফুল বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন৷ কেউ অপরাধ করলে সে অপরাধী – একথা সত্য৷ কিন্তু অপরাধ স্বীকারে এবং ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যে যে মহত্ব আছে, তা যেন আমরা ভুলে না যাই৷