পেয়ার স্টাইনব্রুক
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩স্টাইনব্রুক নানা সাক্ষাৎকারে বারংবার বলেছেন, গণতান্ত্রিক দলগুলির পরস্পরের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত৷ কিন্তু তার একটি ব্যতিক্রম করেছেন স্টাইনব্রুক নিজে৷ বলেছেন, তাঁর নিজের শুধু একটিই বিকল্প আছে এবং সেটি হল, সবুজদের সঙ্গে জোট সরকারে চ্যান্সেলর হওয়া৷
নাছোড়বান্দা
জনমত সমীক্ষায় কী বেরলো অথবা না বেরলো, তা নিয়ে কোনোদিনই বিশেষ মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি ৬৬ বছর বয়সি অর্থনীতিবিদ স্টাইনব্রুককে৷ তাঁর নানা ভুলভ্রান্তি কিংবা অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে মন্তব্যই করা হোক না কেন, স্টাইনব্রুক তাঁর নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে গেছেন৷ অবশ্য স্টাইনব্রুক কিশোর বয়সেই প্রমাণ করে দেন যে, তিনি সহজে ছাড়বার পাত্র নন৷ অঙ্কে খারাপ ছিলেন বলে স্কুলে দু'টি বছর নষ্ট করতে হয় তাঁকে৷ তবুও শেষমেষ নিজের পথ নিজেই করে নিয়েছেন: চ্যান্সেলরের দপ্তরে সহকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নানা পদ, তারপর নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, অবশেষে সিডিইউ-এসপিডি দলের বৃহৎ জোটে ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী৷
পারস্পরিক
মহাজোটের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ম্যার্কেলের সঙ্গে একযোগে আর্থিক সংকটের বিরুদ্ধে লড়েছেন স্টাইনব্রুক৷ দলীয় বিভাজন ছাড়িয়ে উভয়ে উভয়ের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন৷ ২০০৯ সালে আর্থিক সংকট যখন চরমে উঠতে চলেছে, তখন জার্মানিতেও ‘ব্যাংক রান'-এর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল৷ সে সময় ম্যার্কেল এবং স্টাইনব্রুক একত্রে দাঁড়িয়ে আমানতকারীদের আশ্বাস দেন, জার্মানির ব্যাংকগুলিতে তাদের সঞ্চিত অর্থ নিশ্চিত ও নিরাপদ৷ কিন্তু এবারকার নির্বাচনি প্রচারে স্টাইনব্রুক স্পষ্ট বলেছেন, তিনি ঐ সহযোগিতা আর চান না: ‘‘আমরা অপরের সুবিধার জন্য বোকা সাজতে রাজি নই৷''
রক্ষণশীল সামাজিক গণতন্ত্রী
রাজনীতিক হিসেবে স্টাইনব্রুকের আচার-আচরণ কিছুটা পাণ্ডিত্য আর কিছুটা অসৌজন্যের সংমিশ্রণ, অর্থাৎ কূটনীতিক সুলভ নয়৷ যা ভাবেন, সরাসরি তাই বলে দেন৷ কিছুটা অধৈর্যও বটে, বলেন সহযোগীরা৷ তাঁকে রক্ষণশীল সামাজিক গণতন্ত্রী বললে ভুল করা হবে না৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই স্টাইনব্রুক সাবেক চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডারের তথাকথিত ‘‘২০১০'এর কর্মসূচি'' সমর্থন করেছিলেন৷ শ্র্যোডারের লক্ষ্য ছিল, শ্রমবাজারের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে বেকারত্ব কমানো৷ বাস্তবে ঘটেও তাই৷ অপরদিকে মালিকপক্ষ নতুন নিয়মাবলীর সুযোগ নিয়ে কাজের শর্ত, পরিবেশ ও পারিশ্রমিক কমায় – যার একটি ফলশ্রুতি: জার্মানির ২০ শতাংশ শ্রমিক-চাকুরিজীবী আজ তাদের বেতন-পারিশ্রমিক থেকে জীবনধারণ করতে অক্ষম৷
হামবুর্গের একটি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান স্টাইনব্রুক পুঁজিবাদের সুযোগ ও সুবিধাগুলোকে ভালোভাবেই চেনেন৷ স্কুলে থাকতেই বাকি পড়ুয়াদের সাইকেলের ওপর নজর রাখা থেকে শুরু করে স্কুলের পার্কিং লটে গাড়ির ওপর নজর রাখায় উন্নীত হন৷
রাজনীতিতে তাঁর আদর্শ হল উইলি ব্রান্ট৷ ব্রান্ডের তথাকথিত ‘পূর্ব রাজনীতি' তাঁকে মুগ্ধ করেছিল৷ ব্রান্ট-এর একটি মন্তব্যকে স্টাইনব্রুক তাঁর বীজমন্ত্র করে নিয়েছেন: ‘তোমাকে সব কিছুর জন্য লড়তে হবে৷ কোনো কিছুই পড়ে পাওয়া নয়৷''