‘বস্তি ফুটবল’
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২দরিদ্র শিশুদের কি বড়লোকদের মতো খেলাধুলা করার কিংবা জীবনকে উপভোগ করার অধিকার আছে? ঠিক এই প্রশ্নটিই ঘুরে বেড়াচ্ছিল অধ্যাপক বিজয় বার্সের মনে৷ নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা প্রশিক্ষক তিনি৷ ২০০১ সালের এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরে তিনি খেয়াল করলেন, একদল বস্তির শিশু কাদার মধ্যে ফুটবল খেলছে৷ তবে বলের জায়গায় তারা ব্যবহার করছে একটি বাক্স, কেননা সত্যিকারের বল কেনার সামর্থ্য এই শিশুদের নেই৷
এই দৃশ্য দেখার পর বিজয় বস্তির শিশুদের জন্য ব্যতিক্রমী কিছু করা চিন্তা করেন৷ ফুটবলের প্রতি ছোট্ট শিশুদের এই ভালোবাসা তাঁকে আকৃষ্ট করে৷ তিনি ভেবে দেখেন, এই শিশুদেরকে কাদা থেকে উঠে আসার একটি সুযোগ দিলে কেমন হয়? এই কাজটি করতে বস্তির শিশুদের জন্য একটি ফুটবল ক্লাব তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি৷ আর সেদিনই তিনি ষোলোটি বস্তি ঘুরে দেখেন৷ বস্তির শিশুদেরকে একসঙ্গে টিম হিসেবে খেলার আমন্ত্রণ জানান এই অধ্যাপক৷ এভাবেই ‘স্লাম সকার' নামক সংস্থাটির জন্ম হয়৷
এই অলাভজনক সংস্থাটি নাগপুর কেন্দ্রিক৷ এদের লক্ষ্য হচ্ছে, বস্তিবাসী এবং গৃহহীনদেরকে ফুটবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা এবং তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো জীবন নিশ্চিত করা৷
‘স্লাম সকার' দলে আট বছরের শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও যোগ দিতে পারে৷ সংস্থাটির প্রধান এবং সেটির প্রতিষ্ঠাতার ছেলে অভিজিত বার্সে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা ফুটবলের ভাষা দিয়ে শুরু করি৷ এরপর তাদেরকে টিম স্পিরিট, সত্যবাদিতা এবং সহখেলোয়াড়দের সঙ্গে বোঝাপড়ার বিষয়াদি গুরুত্ব সহকারে শেখানো হয়৷''
দলের খেলোয়াড়দের মানবৃদ্ধির জন্য নিয়মিত অনুশীলনের আয়োজন করে স্লাম সকার৷ সংস্থার বিভিন্ন দল নিয়মিত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিচ্ছে৷ অক্টোবরে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ‘হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১২'য় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করবে ‘স্লাম সকার'৷
বার্সে শুরুতে ভেবেছিলেন, বস্তির শিশুদেরকে প্রশিক্ষণ এবং তাদেরকে একটু ভালো জীবন প্রদানের কাজটি কঠিন হবে না৷ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন৷ এই কাজ করতে গিয়ে অনেক বার বস্তির নেতাদের বাধার মুখে পড়েছেন তারা৷ কখনো কখনো অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদেরকে৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকে আমাদের জিজ্ঞাসা করেন, বস্তির শিশুদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার কি দরকার? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা ভারতে খেলাধুলাকে বড় ইভেন্ট হিসেবে খুব কমই বিবেচনা করি৷ অনেকে আবার ভাবেন, গরিবের জন্য খেলাধুলা হচ্ছে নিছক সময়ের অপচয়৷''
প্রতিবেদন: দেবারতি মুখার্জি / এআই
সম্পাদনা: জাহিদুল হক