সাইবার ‘যোদ্ধা’
১ অক্টোবর ২০১২দিন দিন প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের আশঙ্কা৷ এমনকি পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধটা হতে পারে ভার্চুয়াল জগতে - এমন কথাও বলা হচ্ছে অনেক দিন থেকে৷ ফলে বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করছে৷ অ্যামেরিকা যে এতে পিছিয়ে থাকতে চাইবে না সেটাই তো স্বাভাবিক৷
না, তারা পিছিয়েও নেই৷ বরং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আজ থেকে ১০ বছর আগেই তারা সাইবার অপরাধ দমাতে সক্ষম এমন বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে৷ এই প্রকল্পের নাম ‘সাইবারকর্পস'৷ এর আওতায় প্রতি বছর প্রায় দেড়শো শিক্ষার্থীকে বিনা পয়সায় লেখাপড়া করানো ছাড়াও তাদের মাসিক খরচের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হচ্ছে৷ মোট ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে৷
তবে পুরোপুরি শর্তহীন নয় এই বৃত্তি৷ এর ফলে শিক্ষার্থীরা যতমাসের জন্য বৃত্তি পাবি ততমাস সরকারি কোনো চাকরিতে বাধ্যতামূলক কাজ করতে হবে৷ তবে কেউ সেটা করতে না চাইলে তাকে বৃত্তির পুরো টাকাটা ফেরত দিতে হবে৷
এই প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিশেষজ্ঞ বেরিয়েছে৷ প্রকল্পের সমর্থক অ্যালান পেলার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল গড়ে তুলতে এই প্রকল্প সহায়তা করছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে সাইবার অপরাধ দমনে সহায়তা করে থাকে অ্যালান পেলার৷ তিনি বলেন, ‘‘সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে লেখা বা বলার জন্য অনেক লোক আছে আমাদের৷ কিন্তু এই অপরাধ মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত লোকের অভাব রয়েছে৷''
পেলার বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ শুধু সরকার নয়, বিভিন্ন কোম্পানিও তাদের কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত করতে চাইছে৷ ফলে বৃত্তি নিয়ে যারা সাইবার যোদ্ধা হয়ে উঠছেন তাঁদেরকে নিয়োগ দিতে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে৷
প্রকল্প পরিচালক ভিক্টোর পিয়োত্রোভস্কি বলেন, এমনিতেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়া করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম৷ তার উপর সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন বাড়তি যোগ্যতার৷ যেমন কারও বিরুদ্ধে অতীতে আইনি অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ থাকলে সে আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতে পারবে না৷
তবে প্রকল্পের আওতায় যতজন শিক্ষার্থী বের হচ্ছেন সে সংখ্যাটা চীনের তুলনায় একেবারেই নগন্য বলে জানান প্রকল্প পরিচালক৷ তিনি বলেন, চীন থেকে প্রতি বছর এ বিষয়ে দক্ষ হাজার হাজার শিক্ষার্থী বের হচ্ছে৷
প্রকল্পের আওতায় জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন প্যাট্রিক কেলি৷ বর্তমানে তিনি সেখানেই শিক্ষকতা করছেন৷ কেলি বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়৷ এজন্য সাইবার হামলার বাস্তব পরিবেশ গড়ে তোলা হয়৷ এবং সেটা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসতে হবে সেটা শেখানো হয়৷ তবে কেলি বলছেন, যারা সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারাও বেশ মেধাবী৷ ফলে প্রতিনিয়ত তারা নতুন নতুন উপায় বের করে ফেলে৷ যেটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাটা বেশ কষ্টকরই বলা যায়৷
বাংলাদেশও সাইবার অপরাধ দমনে স্বল্প পরিসরে হলেও কাজ করে যাচ্ছে৷ এজন্য গঠন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপনস টিম' বা সিএসআইআরটি নামে একটি বিশেষ দল৷ তাদের রয়েছে একটি ওয়েবসাইট, যার ঠিকানা http://www.csirt.gov.bd ৷ সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে রাত-দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিতে এই ওয়েবসাইটটি চালু করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বিটিআরসির উদ্যোগে এই ওয়েবসাইটটি চালু হওয়ার পরই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে সবাইকে সে বিষয়ে অবগত করা হয়েছে৷
ডিডিওএস হামলা প্রতিরোধে ফায়ার ওয়াল ব্যবহার, জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার ও তা মনে রাখা এবং এসএসএল ও এনক্রিপশন ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ওয়েবসাইটে৷ এছাড়া নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার নিরাপত্তা বিষয়ক ১০টি টিপস এবং ওয়েব নিরাপত্তা বিষয়ক পাঁচটি নির্দেশনা রয়েছে সেখানে৷ এছাড়া আছে কোনো বিষয়ে অভিযোগ জানানো ও সতর্ক করার বিভিন্ন সুবিধা৷
জেডএইচ / এএইচ (এএফপি)