শিশুরাও হামলার শিকার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪তায়াকম ইয়োস উবন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘সবার কাছে আমি হাত জোড় করে বলছি, এসব বন্ধ করুন, আমার সন্তানই যেন হয় এমন নিষ্ঠুর ঘটনার শেষ দৃষ্টান্ত, থাইল্যান্ডের মাটিতে এমন যেন আর না ঘটে৷'' ৩৩ বছর বয়সি তায়াকমের দুটি সন্তান মারা গেছে গ্রেনেড হামলায়৷ ৪ আর ৫ বছরের দুটি শিশু৷ প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে অংশ নিতে যায়নি, সরকার সমর্থকদের মিছিলেও ছিল না তারা৷ খালার সঙ্গে ব্যাংককের একটি মলে গিয়েছিল খাওয়া-দাওয়া করতে৷ কেএফসিতে খেয়ে তিন চাকার অটোরিক্সা ‘টুকটুক-' এ করে ফেরার পথেই গ্রেনেড হামলা৷ হামলায় আহত শিশু দুটো আর বাঁচতে পারেনি!
তায়াকমের সন্তান দুটোকে নিয়ে টুকটুক তখন সরকারবিরোধীদের এক সমাবেশস্থলের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল৷ আগের দিন, অর্থাৎ শনিবারও সরকারবিরোধীদের এক মিছিলে হামলা হলে কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ বছর বয়সি এক শিশু মারা যায়৷ থাইল্যান্ডে সরকারপন্থি এবং বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ একেবারে নতুন কিছু নয়৷ চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং ৭০০-র মতো মানুষ আহত হয়েছে৷ কিন্তু হামলায় শিশু নিহত হবার মতো ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি৷
রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় ইংলাক সিনাওয়াত্রাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ সরকার এবং বিরোধীদলের মধ্যে আলোচনা হওয়াটা জরুরি – এই মত প্রকাশ করে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখনই আমাদের আলোচনার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ দু'পক্ষকে অবশ্যই পরস্পরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বন্ধ করতে হবে৷''
কিন্তু ইংলাকের পদত্যাগ ছাড়া সংকট নিরসন সম্ভব বলে আপাতত মনে হচ্ছেনা৷ আট বছর আগে তাঁর বড় ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যূত করে সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালে শুরু হয় গণআন্দোলন৷ থাকসিন সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসায় প্রায় দু'মাস অচল ছিল ব্যংককের জনজীবন৷ তখন সহিংসতায় কমপক্ষে ৯০ জন মারা যায়৷
তিন বছর আগের সেই আন্দোলনের কারণেই নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন ইংলাক৷ কিন্তু ক্ষমত্যাচ্যূত হবার পর দেশান্তরী হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন আর ফিরতে পারেননি৷ দেশে ফেরানোর জন্য তাঁকে সব অভিযোগ থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল ইংলাক সরকার৷ এর প্রতিবাদেই কয়েকমাস ধরে চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন৷
বিরোধীদের দাবি, ইংলাকের পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন৷ দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সহিংসতা বেড়েই চলেছে৷ এ পরিস্থিতিতে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মনেই উঁকি দিচ্ছিল সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা৷ তবে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল প্রায়ুথ চান-ওচা জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনী দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না৷ সংকট নিরসনের জন্য দু'পক্ষের আলোচনার ওপরই জোর দিয়েছেন তিনি৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)