তুরস্ক, রাশিয়া গ্যাস পাইপলাইন চুক্তি স্বাক্ষর করল
৭ আগস্ট ২০০৯এই চুক্তিকে ভ্লাদিমির পুটিনের সাফল্য বলা চলে৷ কেননা তুরস্কের সঙ্গে বহু বছর ধরে এই নিয়ে আলোচনা চলেছে৷ ‘দক্ষিণ ধারা' পাইপলাইনটির উদ্দেশ্য হল উক্রেইনকে পাশ কাটিয়ে রুশ গ্যাস বুলগেরিয়া হয়ে সরাসরি মধ্য ইউরোপে পাঠানো৷ অপরদিকে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ হিসেবে তুরস্কেরও মান বাড়াবে৷ কাজেই এর্দোয়ান বেশ গর্বের সঙ্গেই জানালেন, যে রাশিয়া কৃষ্ণসাগরের তুর্কী জলাঞ্চলে সাউথ স্ট্রীম পাইপলাইন সংক্রান্ত একটি ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি' বা সম্ভাবনা সমীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছিল৷ তুরস্ক তা'তে সম্মতি দিয়েছে৷ ২০১১ সাল থেকেই পাইপলাইন তৈরী করার কাজ শুরু হবে বলে প্রকাশ৷
সাউথ স্ট্রীম বনান নাবুকো
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ইটালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুস্কোনিও অংশগ্রহণ করেন, কেননা প্রকল্পটিতে ইটালির ইএনআই জ্বালানি সংস্থা রাশিয়ার সুবৃহৎ গ্যাস সংস্থা গাজপ্রমের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে৷ মস্কোর সমর্থনপুষ্ট এই সাউথ স্ট্রীম প্রকল্পটি বস্তুত অপর একটি পরিকল্পিত পাইপলাইনের প্রত্যক্ষ জবাব: ইউরোপ যে নাবুকো পাইপলাইনের মাধ্যমে রুশ গ্যাস সরবরাহের উপর তার নির্ভরশীলতা কমাতে চায়৷ প্রায় একমাস আগে তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন আঙ্কারায় এই নাবুকো পাইপলাইনের চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার বলে কাস্পিয়ান সাগর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস ইরাক এবং তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাঠানো সম্ভব হবে৷
সাউথ স্ট্রীম নির্মাণ ছাড়াও রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যা অনুযায়ী রুশ খনিজ তেল উত্তর তুরস্কের সামসুনে সরবরাহ করা হবে এবং সেখান থেকে পাইপলাইনে করে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী চেইহানে পাঠানো হবে৷ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বসফরাস এবং দার্দানেলিস দিয়ে ট্যাঙ্কার চলাচল কমানোর প্রচেষ্টা করা হবে৷
কে কার বান্ধব, কে কার বৈরী
তাঁদের সাক্ষাতে আঞ্চলিক রাজনীতির প্রশ্নগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে দুই প্রধানমন্ত্রী জানান, যদিও তাঁরা বিশদ করে খুলে কিছু বলেননি৷ তবে তুর্কী টেলিভিশনে বলা হয়, যে রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেডভেদেভ নাকি নাগর্নি-কারাবাখ সংক্রান্ত একটি সমাধানের জন্য সচেষ্ট হবেন৷ আর্মেনিয়া নব্বই-এর দশকের সূচনায় এলাকাটি দখল করে, যদিও আজারবাইজানও এলাকাটি তার নিজের বলে দাবী করে থাকে৷ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য অনুযায়ী মস্কোর সমর্থন এরেভানের প্রতি, অপরদিকে তুরস্কের বাকুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে৷ বিগত কয়েক মাসে তুরস্ক এবং আর্মেনিয়া যে পারষ্পরিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য সচেষ্ট, তা অবশ্যই আজারবাইজানের নজর এড়ায়নি৷
সমাপ্তিতে এর্দোয়ান এবং পুটিন, দু'জনেই উল্লেখ করেন, যে উভয় দেশের সম্পর্ক বর্তমানে অতিশয় শুভ৷ এবং তার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ হল, রাশিয়া আজ তুরস্কের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷ পারষ্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ হল বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার৷ অপরদিকে তুরস্ক রাশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ