1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ...

১৯ জুলাই ২০১৯

নামি দামি সব প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত তরল দুধে ভেজাল আবিষ্কারের পরই শঙ্কা জেগেছিলো, অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এই ঝড় সামাল দিতে পারবেন তো! সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হলো।

https://p.dw.com/p/3MJqq
Pakistan verdorbene Milch
ছবি: DW/D. Baber

গত কয়েকদিনের পত্রিকার শিরোনামগুলোতে চোখ বুলালেই ঠাহর মেলে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে...‘দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও দুধে অ্যান্টিবায়োটিক: অধ্যাপক আ ব ম ফারুক', ‘আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে মন্ত্রণালয়, ‘দুধের মান পরীক্ষা: বিপন্ন বোধ করছেন অধ্যাপক ফারুক', ‘অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে আজই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে'!, ‘৬৬ শিক্ষকের বিবৃতি: অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য'৷ এমনি সব শিরোনামের পাশাপাশি গত কয়েক দিনে নেটিজেনরাও সরব আধ্যাপক ফারুকের ইস্যুতে৷

ঘটনার সূত্রপাত বাজারে বিক্রি হওয়া পাস্তুরিত তরল দুধ নিয়ে একটি গবেষণার ফল প্রকাশের পর৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে বাজার থেকে সাতটি ব্র্যান্ডের দুধের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে দুই দফা পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে৷ এসব গবেষণার ফল প্রকাশ করার পর বিপাকে পড়েছেন অধ্যাপক ফারুক ও তাঁর সহযোগী গবেষকরা৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা' নেওয়ার হুমকি দিয়ে বসলেন সরকারের সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব৷

অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা' নেয়ার কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো মহল থেকেই আমরা শুনতে পাইনি, যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেজাল বা ক্ষতিকর দুধ বাজারজাত করছেন তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে (হাইকোর্ট অবশ্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ‘কঠোর' হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে)৷ এর আগে ডাকাসাইটে সব প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং খাদ্যপণ্যকে ভেজাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ আদালতের নির্দেশে বাজার থেকে এগুলো তুলে নেয়া হয়েছে৷ এতেই কী ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়? দিনের পর দিন যারা বিজ্ঞাপনের নামে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের ভেজাল পণ্য গিলিয়েছে তাদের অপরাধ কী শাস্তিযোগ্য নয়?

এর উল্টো চিত্রটাই বরং দেখেছি আমরা৷ রোজার ঈদের আগে পাঞ্জাবির দাম বাড়িয়ে দেয়ায় আড়ংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সরকারি কর্মকর্তাকে রাতারাতি বদলি করা হয়েছিলো৷ অবশ্য পরে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এই সিদ্ধান্ত রদ করা হয়৷

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রমজানে তিনি যখন দেশের বাইরে ছিলেন তখন বেশ কিছু বড় বড় জায়গায় একজন কর্মকর্তা হাত দিয়েছিলেন বলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হঠাৎ একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ এটা তার (প্রধানমন্ত্রীর) কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না৷

তার বক্তব্য, ‘‘আমি আজকেও বলে দিচ্ছি, তাকে (ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার) আবার ওই দায়িত্বেই দিতে হবে৷ খুব নামী দামি জায়গা, তাদের যে খারাপ কিছু হবে না বা থাকবে না, যারা ওগুলোর মালিক তারা তো সেই গ্যারান্টি দিতে পারবেন না৷’’

শেখ হাসিনা সেদিন ভেজাল বা দুর্নীতির প্রসঙ্গে তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, সাধারণ ছোটখাট প্রতিষ্ঠান হলে ধরা যাবে আর বড় অর্থশালী হলে তাদের ধরা যাবে না, এটা হয় না৷ অপরাধী অপরাধীই৷

জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সেদিন তিনি আরেকটি মারাত্মক কথাও বলেছিলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন বা খাদ্য নিরাপত্তা এমন এমন বড় বড় জায়গা আছে, যেখানে হাত দিলে মনে হয় যেন হাতটা পুড়ে যাচ্ছে৷ আর যারা এ কাজটি করতে যান, তারাই অপরাধী হয়ে যান৷’’

Bangladesch Golam Kibria
গোলাম কিবরিয়া, সাংবাদিকছবি: Privat

প্রধানমন্ত্রীর শেষ বক্তব্যটি যদি আমরা একটু খেয়াল করে দেখি, তাহলে অধ্যাপক ফারুকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় না? এ ক্ষেত্রেওকি আমলাতন্ত্রের ক্ষমতার আগুনে অধ্যাপক ফারুকের মতো গবেষকরা পুড়ছেন না? ভেজালের মতো অপরাধ ধরতে গিয়ে তিনি নিজেই অপরাধী বনে যাচ্ছেন না? নয়তো তার বিরুদ্ধে কেন ‘ব্যবস্থা' নেয়ার হুঙ্কার?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবকিছুতেই যদি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই নজর দিতে হয়, তাহলে তাহলে জনস্বার্থে গবেষণা পরিচালনাকারী গবেষক, আমজনতা বা ভোক্তাদের রক্ষা করবে কে? সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীই শেষ ভরসা? যারা আমাদের ঠকাচ্ছে, ভেজাল খাদ্য সরবরাহ করছে তারা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে আর হুমকির শিকার হবেন গবেষকরা?

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে৷ স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা বেড়েছে, কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ৷ কিন্তু আমাদের গবেষকরা মেধা খাটিয়ে এবং নিরন্তর পরিশ্রম করে উদ্ভাবন করেছেন উচ্চ ফলনশীল জাতের কৃষি পণ্য৷ পাশাপাশি কৃষিতে এনেছেন যুগোপযোগী আধুনিকায়ন৷ তবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কৃতিত্বের সিংহভাগ আমাদের কৃষকদের প্রাপ্য৷ তাদের কঠোর শ্রম ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। সর্বোপরি সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পলিসি এই অসম যুদ্ধে আমাদের জয়ী করেছে৷

দেশের মানুষের সম্মিলিত এই অর্জন এখন গুটিকয় মুনাফালোভীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে৷ খাদ্যের নিরাপত্তার পুরো বিষয়টিই অর্থহীন হয়ে পড়ে, যদি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না করা যায়৷ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের এই অর্জন যেন কোনোভাবেই অসৎ মুনাফালোভীদের খপ্পরে পড়ে অর্থহীন হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা নজর দেবেন আশা করি৷