তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি
২০ আগস্ট ২০১৯২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় হয় গত বছরের ১০ অক্টোবর৷ রায়ে মোট জীবিত ৪৯ জন আসামির মধ্যে ১৯ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ বাকি ১১জনের স্বল্প মেয়াদে কারাদণ্ড হয়৷ মামলার রায়ের সময় ২৩ জন কারাগারে ছিলেন৷ পলাতক ছিলেন ১৮ জন৷ জামিনে ছিলেন আট জন৷ যারা কারাগারে ছিলেন তাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি শহিদুল হক এবং আশরাফুল হুদা গত ২১ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷
আর দু'জন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান এবং সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান রায়ের পর এই বছরের জানুয়ারি মাসে আত্মসমর্পণ করেন বলে জানান পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর(এনসিবি) এআইজি মহিউল ইসলাম৷
এই মামলায় মোট আসামি ৫২ জন৷ রায়ের আগেই বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলমের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়৷
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে পলাতক দেখনো হয়েছে৷ তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন৷ পলাতক বাকি ১৫ জনের কে কোথায় আছেন সে ব্যাপারে একটি ধারণা পাওয়া যায় পুলিশ সদর দপ্তরের নথি থেকে৷ তারা ইন্টারপোলসহ বিভিন্ন দেশের পুলিশের সঙ্গে পলাতকদের ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ করছে৷ সেই যোগাযোগের তথ্য ধরে জানা যায়, মাওলানা তাজউদ্দিন সাউথ আফ্রিকায়, বিএনপির সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ আরব আমিরাতে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ ভারতে, দুই ভাই আনিসুল মোরসালিন এবং মুহিবুল মুক্তাকিন ভারতের কারাগারে, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে এবং লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায় অবস্থান করছেন৷ এছাড়া জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও ইকবাল এই সাত জন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন৷৷ হারিস চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না৷
পলাতক আসামিদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও হারিস চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করেছে গত বছর৷ তবে সেই নোটিশে তাদের অবস্থানের কথা বলা নেই৷
তারেক রহমানকে ফেরত আনার জন্য ২০১৪ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যকে চিঠি দেয় ৷ কিন্তু এরপর নতুন কোনো চিঠি বা সরকারি যোগাযোগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে৷ তিনি ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আটক হয়ে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে গিয়ে আর ফিরে আসেননি৷
এই মামলার প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে পলাতক আসামিদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু একমাত্র তারেক ছাড়া পলাতকেরা এক জায়গায় অবস্থান করে না৷ ফলে তাদের অবস্থান সুনির্দষ্ট না হওয়ায় এখনো তাদের কাউকে ফেরত আনা যায়নি৷ এছাড়া তাদের ফেরত আনতে হলে ওইসব দেশে তারা আটক হলেই হবে না৷ তাদের সাথে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকতে হবে৷ সেটা না থাকায়ও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে৷''
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘আমরা পলাতকদের ফিরিয়ে আনার সব ধরণের চেষ্টা করছি৷ আইনি পথে চেষ্টা করছি৷ কূটনৈতিকভাবেও চেষ্টা করছি৷ এইটুকু আমি বলতে পারি৷'' আর তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতির খবর জানতে পারেননি আইনমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘অগ্রগতির কোনো খবর আমার জানা নেই৷''
এদিকে গ্রেনেড মামলায় কারাগারে আটক এবং জামিনপ্রাপ্তরা সবাই আপিল করেছেন৷ আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে৷ পলাতকেরা আত্মসমর্পণ না করলে আপিল করতে পারবেন না৷ রায়ের পর বলা হয়েছিল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সাজা বাড়ানোর আবেদন করা হবে৷ কারণ তাকেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘‘রায়ের সময় পর এই প্রশ্ন উঠেছিল৷ আপিল শুনানি শুরু হলে সেটা আমরা দেখব৷ কারুর সাজা আমাদের বিবেচনায় কম হলে তা বাড়ানোর আবেদন করব৷ তারেক রহমানের বিষয়টিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি৷''
তবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি তারেক রহমানের সাজা বাড়ানোর আবেদন করা হবে এমন কথা তখন বলিনি৷ আমি বলেছি বিষয়টি আমরা দেখব৷ অন্য কেউ হয়তো বলে থাকতে পারেন৷''
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ তিনি গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন৷ আহত হন দুই শতাধিক৷