অত্যন্ত শোকাবহ একটা দিন
১৩ আগস্ট ২০১৪সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে তাঁদের৷ চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীকে ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী যৌথভাবে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে৷ তারেক মাসুদের তিনটি চলচ্চিত্র মাটির ময়না, মুক্তির গান ও অন্তর্যাত্রা প্রদর্শিত হবে এই অনুষ্ঠানে৷
সামহয়্যার ইন ব্লগে মির্জা রুহান তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপ বর্ণনা দিয়েছেন৷ যাঁরা তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রের অনুরাগী তাদের অবশ্যই তা ভালো লাগবে৷ এখানে দুটো চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরা হলো৷
রুহান ‘মুক্তির গান' চলচ্চিত্রটি নিয়ে লিখেছেন, ১৯৮৯ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন এটি৷ লিখেছেন, ‘‘এই ‘মুক্তির গান' আপনাকে আমৃত্যু তাড়া করে বেড়িয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধের উপর যে তথ্যচিত্র আপনি করেছেন তা আজতক সিনেজগতের মাস্টারপিস৷''
মাটির ময়না নিয়ে লিখেছেন, ‘‘এটি মুক্তি পায় ২০০২ সালে৷ যে মাদ্রাসা পড়ুয়া বালক নিজ হাতে বোনকে কবরে শুইয়ে দিয়ে ধর্ম-সংস্কারের মাঝে দাঁড়িয়ে নিজেকে এক মহা সত্যের-মহাবিদ্রোহের (১৯৭১) ইতিহাসের একজন হয়ে যায়, আজ সেই ময়না উধাও৷ লাইট ক্যামেরা রেডি....কই শুরু করেন !''
স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে রুহান বলেছেন, ‘‘২০১০-এর নভেম্বর কি ডিসেম্বর হবে, ‘রানওয়ে' চলচ্চিত্রটি নিয়ে সিলেট এসেছিলেন তারেক মাসুদ৷ এই-ই প্রথম তাঁকে সরাসরি দেখলাম, কথা বললাম৷ তারেক মাসুদ বলেছিলেন, ‘‘রানওয়েতে আমি এনজিও গার্মেন্টস জঙ্গিবাদের মতো জাতীয় প্রধান প্রধান ইস্যুতে লেন্স ফেলেছি ঠিকই হয়ত সেইসব জায়গার ক্ষত আমি চিহ্নিত করতে পেড়েছি কিংবা পারিনি৷ আমি যা পারিনি তুমি-তোমরা সেই জায়গায় কাজ করবে৷''
মকসুদ মনি একই ব্লগে লিখেছেন,‘‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি৷ কোনো মৃত্যুই আর ব্যথাতুর করে না আমাকে৷ কোনো হত্যায় আর বিহ্ববল হই না আজ আমি এমনি এক শ্বাপদ রাজ্যে বসবাস আমার৷''
মিশুক মুনীরের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তুষারের৷ ফেসবুক পাতায় এই সংবাদ প্রযোজক লিখেছেন, ‘‘স্যারের কাছ থেকে সাংবাদিকতার অনেক কিছুই শিখেছি৷ তাই তাঁকে ম্যাকগাইভার বলে ডাকতাম৷ যা শুনে তিনি তাঁর মিষ্টি হাসিটা দিতেন৷ তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ এত বড় মাপের মানুষ হয়েও ডেকে পাশে বসিয়ে বুঝাতেন অনেক কিছু৷''
ইমরুল কায়েস রনী লিখেছেন, ‘‘আমার চাকুরী জীবনের প্রথম সিইও মিশুক মুনীরের আজ মৃত্যু বার্ষিকী৷ হে ভালো মানুষ, আমার আকাশ সমান ভালোবাসা নিও৷ যেখানেই থাকো ভালো থেকো, ভালোলাগায়, ভালোবাসায়৷
রিফাত হাসান ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘তারেকের হাত ধরেই বহু বছর ধরে চেপে রাখা আনু, রোকন, রুহুল, আরিফ এবং কাজী সাহেবরা কথা বলা শুরু করেছেন, কথা বলতে বলতে তারা যেন হরবোলা হয়ে ওঠেন৷ বন্ধ জানালার পাকিস্তান থেকে ক্রমশই ‘বাংলাদেশ'৷ ফলে হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়াতে এসে মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে কুশীলব হয়ে পাক-নিপীড়ণের বিরুদ্ধে ভাষা পায় তারা৷ মাটির ময়নাতে যারা ছিল বিহ্বল এবং হতচকিত, কিন্তু উন্মুখ৷ এইভাবে আনু, রোকন, রুহুল, আরিফ, কাজী সাহেব, এবং মৌলভীদের মুখে যে ভাষা এবং বাংলাদেশ বিপ্লবে দ্বিধায় ও সংগ্রামে, বেড়ে ওঠার ইতিহাসে তাদের যে অংশ, তার সাহস তুলে ধরে তারেক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উপর তাদের নৈতিক অধিকার তৈরি করেন৷''
অমৃতা পারভেজ
দেবারতি গুহ