1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারাদের কথা

২২ ডিসেম্বর ২০২০

আমাদের নক্ষত্রজগতে ২০০ বিলিয়ন তারার মধ্যে মাত্র ২১টিকে বেছে নিয়ে বই লিখলেন কেন? ডিডাব্লিউয়ের প্রশ্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাইলস স্প্যারোকে।

https://p.dw.com/p/3n24U
তারাভরা আকাশ এবং উল্কাপাত। ছবি: picture-alliance/dpa/V. Timkiv

ডিডাব্লিউঃ একেবারে বেসিক থেকে শুরু করা যাক। আমরা হামেশাই রাতের আকাশের তারা নিয়ে এমনভাবে কথা বলি, যেন আমরা ইচ্ছে করলেই সেগুলিকে ছুঁয়ে দেখতে পারি। কিন্তু আমাদের সব চেয়ে কাছের তারাও আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে। আকাশগঙ্গা আমাদের সৌরমণ্ডলে। কিন্তু সেই তারাও অনেক অনেক দূরে। যখন আপনি 'আ হিস্টরি অফ ইউনিভার্স ইন ২১ স্টারস'(অ্যান্ড থ্রি ইমপস্টারস) লিখলেন তখন কি সাধারণ মানুষদের কথা মনে রেখেছিলেন?

জাইলস স্প্যারোঃ আমাদের বুঝে নেয়া দরকার, মহাবিশ্বে আলো সব চেয়ে দ্রুতগতিতে চলে। সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার। তাই চাঁদের আলো পৃথিবীতে আসতে সময় নেয় দেড় সেকেন্ডের মতো। আমরা যখন চাঁদে মহাকাশচারী পাঠাই, তাঁরা যে রেডিও সিগন্যাল পাঠান, সেটাও দ্রুত বিশ্বে পৌঁছে যায়। কিন্তু যা আমাদের সৌরমণ্ডলের একেবারে ধারে আছে, সেখান থেকে আলো আসতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। আমাদের সব চেয়ে কাছের তারা প্রক্সিমা সেন্টৌরি থেকে আলো আসতে চার বছর তিন মাস সময় লাগে।

তাই, আমি মনে করি, এর থেকে দূরত্বের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। বাকি মহাবিশ্বে, মিল্কি ওয়ের ভিতরে থাকা তারার আলো পৃথিবীতে আসতে কয়েক হাজার বছর লেগে যায়। আর যদি বহু দূরের গ্যালাক্সির তারাদের ধরি, তা হলে তার আলো পৌঁছতে লাখ লাখ বছর সময় লাগে। 

আমরা মনে করি, দূরের গ্রহে, বা সূর্যের কাছে মানুষকে পাঠানো কতটা কঠিন। অথচ, দূরের তারাগুলি পৃথিবীতে আমাদের জীবন প্রভাবিত করে। এটা কি একটা অসাধারণ বিষয় নয়? বিশেষ করে এই দূরত্বের বিষয়টি?

সত্যিই এটা অসাধারণ বিষয়। বিজ্ঞানের অন্য শাখার মতো, আপনি যা নিয়ে পরীক্ষা করছেন, তাকে কেটে দেখতে পারছেন না। একটাই জিনিস আমরা মাঝেমধ্যে দেখতে পাই, তা হলো উল্কাপাত। তাছাড়া আমাদের হাতে আছে, আলো ও রেডিয়েশন, যা আমাদের স্পেসে ঢুকে পড়ে।

আর আমাদের হাতে আছে একটা টেলিস্কোপ। পৃথিবীতে বসে টেলিস্কোপে চোখ রেখে আপনি তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তাও এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

এখানেই একটি প্রশ্ন আসে। তারাদের নিয়ে আমাদের বিজ্ঞান কতটা নির্ভরযোগ্য? কোটি কোটি তারাদের মধ্যে আপনার বইয়ে উল্লিখিত ২১টি তারা নিয়ে আমরা কথা বলব...

আকাশগঙ্গায় ২০০ বিলিয়ান তারা আছে। আর মহাবিশ্বে এরকম অনেক গ্যালাক্সি আছে। এ হলো সেই এলাকা, যেখানে বিগ ব্যাংয়ের পর থেকে তারার আলো এসে পৌঁছেছে। সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব সম্ভবত আরো অনেক অনেক বড় এবং তা প্রসারিত হচ্ছে। 

যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এখন কাজ হচ্ছে, তা উন্নত। অনেক সময় এমন তথ্য হাতে আসছে, আবিষ্কার হচ্ছে, যা পুরনো সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণিত করছে। যেমন আইনস্টাইনের তত্ত্ব করেছিল গত শতকে। হ্যাঁ, এখনো প্রচুর প্রশ্ন আছে, যার জবাব নেই। কিন্তু মনে হয়, আমরা সাধারণ নীতিটা ধরতে পেরেছি। আমরা তা নিউক্লিয়ার ফিউশন ও পরীক্ষা দিয়ে প্রদর্শন করতে পেরেছি।

আপনি এই কোটি কোটি তারা থেকে ২১টি বেছে নিয়েছেন। কেন?

২১টি তারা বাছা হয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকের কথা চিন্তা করে। এই তারাগুলি জ্যোর্তিবিদ্যা ও তার ইতিহাস বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  যেমন ধরুন ৬১ সিগনি। নক্ষত্রমণ্ডলের একটি অস্পষ্ট তারা। আমরা প্রথমে এই তারার দূরত্ব বের করার চেষ্টা করেছি। কোনো জিনিসের অবস্থান  বা দিক সামান্য বদলে দিলে তার চেহারার পরিবর্তন হয়। এক চোখে দেখলে একরকম লাগে, দুই চোখে দেখলে অন্যরকম। পৃথিবী যদি সূর্যের চারপাশে ঘোরে, তার মানে অবস্থানের পরিবর্তন হয়। তা হলে তারাগুলিকে আমরা বিভিন্ন অবস্থান থেকে কেন দেখব না?

এখন টেলিস্কোপ ও দূরত্ব মাপার প্রযুক্তি অনেক আধুনিক হয়েছে। এটা দিয়ে আমরা দূরত্ব মাপতে পারছি। তার থেকে বুঝতে পারছি, আমরা যা ভেবেছিলাম, তারাগুলি তার থেকেও অনেক দূরের।

আমরা সাম্প্রতিক সময়ে একটা তারা পেয়েছি, যার নাম হেলভেটিওস। এই তারার আটটি গ্রহ আছে, যা তার চারপাশে পাক দিচ্ছে।

এবং থ্রি ইমপস্টারস, তাদের বিষয়টা কী?

এই গল্পটা বলতে গেলে আমাদের তারার বাইরে যেতে হবে। এই ইমপস্টারদের প্রথমে তারা ভাবা হয়েছিল।

যেমন ওমেগা সেন্টৌরি যা হলো একটা বিশাল গ্লোবাল ক্লাস্টার, তারাদের গোলাকার বল, যা আকাশগঙ্গার চারদিকে ঘোরে। প্রথমে তাকে তারা বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অ্যান্ড্রোমেডা নক্ষত্রপুঞ্জকেও তারা বলা হয়েছিল।

তারপর প্রথম কোয়েসার। এটা হলো আধা নক্ষত্র। এরা এমন রেডিও সিগন্যাল দিচ্ছিল যাতে মনে হচ্ছিল তা কাছে আছে। তারপর বোঝা গেল, এটা অনেক দূরের গ্যালাক্সির। কয়েকশ কোটি আলোকবর্ষ দূরের। তাও তার এমন আলো, যে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ওই অত দূরের তারায় যেতে পারার ভাবনাটা কেমন? এরকম ভাবনার কোনো মূল্য আছে?

একেবারে বৈজ্ঞানিক দিক থেকে বলতে গেলে, অবশ্যই আছে। কিন্তু আপনি যদি তারার দিকে চেয়ে থাকেন, তা হলে আপনার সমস্যা হবে। যেটা সৌরমণ্ডল নিয়েও হয়। কবে আমরা সূর্যের কাছে পৌঁছতে পারব? আপনি তো সূর্যের কয়েক লাখ কিলোমিটার দূরেও পৌঁছতে পারবেন না। গেলে মহাকাশযান পুড়ে যাবে।

অন্যদিকে আমরা জানি, যেমন ধরুন প্রক্সিমা সেন্টৌরি হলো পৃথিবীর সব চেয়ে কাছের তারা। অন্তত একটা গ্রহ তার চারপাশে ঘুরছে। এই গ্রহ বসবাসযোগ্য বলে কেউ মনে করেন। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রক্সিমায় নক্ষত্রের দ্যুতি বসবাস করার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

কিন্তু নক্ষত্রমণ্ডল নিয়ে অনুসন্ধানের কাজটা খুবই উত্তেজনাকর। আমরা রোবোট স্পেস পরীক্ষার মাধ্যমেও জানতে পারি। তবে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা কোনো না কোনো পথ পাব।

জাইলস স্প্যারোর লেখা আ হিস্টরি অফ দ্য ইউনিভার্স ইন ২১ স্টারস(অ্যান্ড ৩ ইমপস্টারস) বইটি ২০২০ সালে ওয়েলবেক থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক উইনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন এবং ইম্পিরিয়াল কলেজের সায়েন্স কমিউনিকেশনে জ্যোতির্বিদ্যা পড়েছেন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখেন। 

জুলফিকার আব্বানি/জিএইত