তাবলিগের বিদেশিরা মসজিদেই আছেন
৮ এপ্রিল ২০২০বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি আছেন ঢাকার দুটি মসজিদে৷ যদিও করোনার কারণে মসজিদে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞ আরোপ করা হয়েছে৷
তাবলিগের মধ্যে দুটি গ্রুপ৷ দিল্লির মাওলানা সাদ কান্দলভীর অনুসারী বিদেশিরা আছেন কাকরাইল মসজিদে৷ আর সাদবিরোধী বিদেশিরা আছেন যাত্রাবাড়ির মদিনা মসজিদে৷
দুই মসজিদসহ সারাদেশে বিদেশি আছেন মোট ৪৩২ জন৷ আর দেশের বিভিন্ন মসজিদে ২০ হাজারের মত বাংলাদেশি তাবলিগ সদস্য এখনো অবস্থান করছেন৷ তাবলিগ নেতাদের দাবি, ‘‘আমাদের বিদেশি মেহমানরা কেউ করোনায় আক্রান্ত নন৷’’
আর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘‘তাদেরতো আমরা বের করে দিতে পারি না৷ তাদের নিয়ে আমরা কেথায় রাখব৷ তাই তারা মসজিদেই কোয়ারান্টিনে আছেন৷ প্রশাসন তাদের ওপর নজর রাখছে৷ তারা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন তা নিশ্চিত করা হচ্ছে৷’’
বিদেশিরা যেভাবে মসজিদে আছেন
কাকরাইলে এখন দুইশর বেশি বিদেশি আছেন৷ আর মদিনা মসজিদে আছেন ৯১ জন বিদেশি৷ বাকিরা দেশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদে অবস্থান করছেন৷ মাওলানা সাদ অনুসারী গ্রুপের নেতা মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর শেখ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের মারকাজের মোট ৩৪১ জন বিদেশি মেহমান আছেন৷ তার মধ্যে ২১৫ জন আছেন কাকরাইলে৷ বাকিরা বরগুনা ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মসজিদে আছেন৷
‘‘আজ সকালেই মৌলভীবাজার ও সাতক্ষীরা থেকে মোট ১৭ জন বিদেশিকে ছাড়পত্র দিয়ে পুলিশ ঢাকায় নিয়ে এসেছে৷ তাদের কাকরাইল মসজিদেই আলাদা রাখা হয়েছে৷’’
এর বাইরে দেশের বিভিন্ন মসজিদে সাদ অনুসারী তিন হাজারের মত জামাত (একটি জামাতে ৫-৬ জন থাকেন) আছে৷ তারা দেশের বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করছেন বলেও জানান তিনি৷
তারা লকডাউনের আগে চিল্লায় গিয়েছেন৷ মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর নিজেও এখন কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করছেন৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘বিদেশিদের করোনার সামাজিক দূরত্ব মেনেই রাখা হচ্ছে৷ কাকরাইল মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে গেটের নিয়ন্ত্রণ পুলিশকে দেয়া হয়েছে৷ আর দেশের বিভিন্ন মসজিদে যারা আছেন সেখানে স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করছে৷’’
ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ থেকে তাবলিগের কাজে যাওয়া ৬০ জন আটকা পড়ে আছেন বলেও জানান তিনি৷ এরা দিল্লি থেকে কোয়ারান্টিনে নেয়া ৩৫ জনের বাইরে৷
এ বিষয়ে সাদ বিরোধীদের নেতা মাওলানা যোবায়ের আহমেদ কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে জানা গেছে, মদিনা মসজিদে ৯১ জন বিদেশি ছাড়াও বাংলাদেশি নাগরিকরা রয়েছেন৷ আর দেশের বিভিন্ন মসজিদে এখানো তাদের অনুসারী কয়েক হাজার বাংলাদেশি তাবলিগ সদস্য আছেন৷ মসজিদের চারপাশে পুলিশ অবস্থান করছে৷ বিদেশিদের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, মরক্কে, তিউনিসিয়া, ইথিওপিয়া. থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আছেন৷
সারাদেশে তাবলিগ সদস্যদের ওপর নজরদারি
দেশের বিভিন্ন জেলার ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের তাবলিগের সদস্যদের উপর নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ রোববার রাতে মানিকগঞ্জের পুলিশ তাবলিগের ৫৪ জন সদস্যকে আটক করে কোয়ারান্টিনে পাঠিয়েছে৷ তারা কয়েকটি পিকআপ ভ্যানের করে সিংগাইর থেকে মানিকগঞ্জ আসে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার রিফাত হোসেন শামীম৷
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আসলে সবাইকে বুঝিয়ে লকডাউন করতে আমাদের সময় লেগেছে৷ এখানে ধর্মীয় অনুভূতির বিষয় আছে৷ আমরা আগেই মসজিদগুলোতে নামাজ বন্ধ করতে চেয়েছিলাম৷ এখন যারা তাবলিগের বিদেশি ও দেশিরা আছেন তারা মসজিদেই কোয়ারান্টিনে আছেন৷ তাদের এছাড়া আমরা কেথায় রাখব? তাদেরকে তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না৷ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারি না৷’’
কোয়ারান্টিন না মানলে অবস্থা ভয়াবহ হবে
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘তাবলিগের বিদেশিসহ যারা আছেন তাদের কঠোরভাবে কোয়ারান্টিন মানতে হবে৷ সমস্যা হচ্ছে তারা কয়েকজন মিলে এক থালায় খাওয়া দাওয়া করেন৷ এটা করা যাবে না৷ প্রত্যেকতে প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে থাকতে হবে৷ এটা না করলে বড় সংকট হতে পারে৷’’
কোথায় ভাইরাস?
তাবলিগ নেতা মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর মনে করেন বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে৷ মিথ্যাচার করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে অপপ্রচারের কারণে বাংলাদেশের অনেক গরীব মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে৷
‘‘কয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন? তার চেয়ে বেশি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে৷ প্রতারক, ধোঁকাবাজ, মিথ্যাবাদীরা বলছে ভাইরাস, ভাইরাস, ভাইরাস৷ কোথায় ভাইরাস? বাংলাদেশে কয়জন মারা গেছে ভাইরাসে?’’
২০১৮ সালের মার্চের ছবিঘর দেখুন...