1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকা: রাস্তায় জট, পানিতে ময়লা, বাজারে আগুন, চুলা ঠান্ডা

৫ এপ্রিল ২০২২

গ্যাস নাই, যানজট, বিদ্যুতের লোডশেডিং, ওয়াসার ময়লা পানি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগাম ছাড়া দাম৷ আছে শব্দ আর বায়ু দূষণ৷ সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকা কি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে?

https://p.dw.com/p/49UWL
গ্যাস নাই, যানজট, বিদ্যুতের লোডশেডিং, ওয়াসার ময়লা পানি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগাম ছাড়া দাম৷ আছে শব্দ আর বায়ু দূষণ৷ সব মিলিয়ে রাজধানী ঢাকা কি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে?
ছবি: Mortuza Rashed

নগরবিদেরা মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ সবাই মুনাফার পিছনে ছুটছে৷ কথিত উন্নয়ন করছে৷ সরকারের ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই অবস্থা থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে পারে৷

প্রথম রোজা থেকেই রাজধানীতে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে৷ একই সঙ্গে বেড়েছে এলপি গ্যাসের দাম৷ আছে বিদ্যুতের লোড শেডিং৷

এলএনজি সরবরাহে ঘাটতি এবং বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের ছয়টি কূপে গ্যাস উৎপাদনে সমস্যার কারণে এই গ্যাস সংকট বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ৷ গ্যাস ফিল্ড রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে গিয়ে এই সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়৷ এর ফলে ৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন কম উৎপাদন হচ্ছে৷ আরো এক সপ্তাহ এই অবস্থা চলবে৷ আর এই গ্যাস উৎপাদনে সমস্যা হওয়া বিদ্যুতের ওপরও প্রভাব পড়ছে৷ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে৷ যদিও পিডিবি বলছে দেশে কোনো লোডশেডিং নাই৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ কেন রোজার আগে করা হয়নি৷ রোজার শুরুতেই কেন এই কাজ ধরা হলো৷

‘অব্যবস্থাপনার মূলে বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি’

এদিকে তীব্র যানজটের কারণে লোজনকে এখন ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে৷ যানজটের এখন আর সকাল বিকাল বা রাত নেই৷ গভীর রাত এমনকি ভোরেও রাজধানী জুড়ে যানজট৷ ফলে লোকজন ঠিকমত অফিসে বা কাজে যেতে পারছেন না৷ পারছেন না ফিরতে৷ তাদের গাড়িতে বা রাস্তায়ই ইফতার করতে হচ্ছে৷

ঢাকার যাত্রাবাড়ি, মান্ডা, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, আমিনবাজার, কাফরুল, আদাবর, রামপুরা, বনশ্রী, মৌচাক, মগবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মতিঝিল, পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় রান্নার গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে৷ ওই সব এলাকার মানুষের দৈনন্দিন রুটিনই বদলে গেছে গ্যাস সংকটের কারণে৷ গভীর রাতে একবার গ্যাস আসে তখনই রান্না-বান্না করতে হয়৷ মান্ডা এলাকার আব্দুল লতিফ জানান, ‘‘এখন ইফতার সেহরি সবই হোটেল থেকে কিনে খেতে হয়৷ দামও অনেক বেশি৷ কয়দিন কিনে খেতে পারব জানি না৷ আর বিদ্যুৎ আর পানির সমস্যাও আছে৷ মাঝে মঝেই বিদ্যুৎ চলে যায়৷ ওয়াসার পানিও থাকে না৷  আর যখন পাওয়া যায় তখন ময়লা থাকে৷’’

শেওড়া পাড়ার জেসমিন লিপি বলেন, ‘‘কর্মজীবী হওয়ায় এখন চারদিক থেকে বিপদে আছি৷ জ্যামের কারণে ঠিক সময়ে অফিসে যেতে পারি না৷ ফিরতে পারি না৷ বাসায় ফিরে দেখি গ্যাস নাই৷ জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে৷’’ তার কথা বাধ্য হয়ে একটি ইলেট্রিক চুলা কিনেছেন৷ কিন্তু বিদ্যুৎও সব সময় থাকে না৷ আর এই বাড়তি বিদ্যুৎ বিল কে দেবে?

যাত্রাবাড়ির জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখন তো দিনের সাত-আট ঘন্টাই রাস্তায় থাকতে হয়৷ রাস্তাই এখন ঘরবাড়ি৷’’

ঢাকায় এখন একটি নতুন কথা চালু হয়েছে যে, ‘‘জীবনে এত বেশি পড়াশোনা করেছি যে দিনের অধিকাংশ সময়ই এখন গাড়িতে থাকতে হয়৷’’

ঢাকা ওয়াসার পানিতে ময়লার কারণে  জুরাইনসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ মঙ্গলবার পানির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন৷ বিক্ষোভকারীরা জানান, রোজায় পানির কষ্ট আরো বেড়েছে৷ জুরাইনের মুরাদপুর রোডের রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, ‘‘পানিতে, ময়লা, কেঁচোসহ নানা দুষিত পদার্থ থাকে৷ আমরা  খাওয়া তো দূরের কথা ওজু গোসলও করতে পারিনা৷ আর এই পানিও ঠিকমত পাওয়া যায় না৷’’

ওই এলাকার আরেকজন বাসিন্দা মিজানুর রহমান  জানান, ‘‘এলাকার মানুষ  খাবার পানি কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আমাদের এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০টি গভীর নলকুপ বসানো হয়েছে৷ সেখান থেকে মানুষ  খাবার পানি কিনে খান৷’’

‘নাগরিকদের গুরুত্ব দেয়া হয় না বলেই যা খুশি তাই করা হচ্ছে’

ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পানি সমস্যার কথা স্বীকার করে নগরবাসীকে ফুটিয়ে পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ আর পানিতে দুর্গন্ধের জন্য তিনি শীতলক্ষ্যার পানিকে দায়ী করেছেন৷ তার কথা ওই নদীর পানি এত দূষিত যে শোধন করলেও দূর হয় না৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সাধারণ সম্পাদক নগরবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘‘বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হবে৷ কিন্তু তা রোজার মধ্যে কেন? আগে পরে করা যেত৷ নাগরিকদের কোনো নোটিসও দেয়া হয়নি৷ নাগরিকদের গুরুত্ব দেয়া হয় না বলেই এভাবে যা খুশি তাই করা হচ্ছে৷’’

তার কথা, ‘‘উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে৷ উন্নয়ন কার জন্য সেটা বিবেচনা করা হয়নি৷ ফলে এটা এখন সবচেয়ে দূষিত নগরী৷ আমার বিবেচনায় এই নগরী এখন ধ্বংসের শেষ সীমায় চলে এসেছে৷

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘‘অব্যবস্থাপনা, অবহেলা এবং রমজানকে সামনে রেখে সত্যিকারের কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ঢাকা অচল হয়ে গেছে৷ একারণেই গ্যাস নেই, সেই কারণে বিদ্যুতের সমস্যা৷ অথচ সাধারন মানুষের টাকায় ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে৷ রোজায় স্কুল কলেজ, অফিস আদালত, শপিং মল একসাথে খোলা রাখা হয়েছে৷ কিন্তু এটার একটা সময় ভাগ করে ব্যবস্থাপনা করা যেত৷ করা হলে মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় থকতে হতো না৷ এই অব্যবস্থাপনার মূলে আছে বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি৷ সবাই পকেট কাটতে চায়৷ যার ফল আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি৷’’নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মনে করেন, উন্নয়ন বা নানা ধরনের  যে কাজ হচ্ছে তা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের জন্য হচ্ছে না৷ যার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মোট্রোরেল বানানো হচ্ছে আবার শত শত বাস আমদানি করা হচ্ছে৷ রাস্তার ওপরে মন্ত্রী ভবন বানাচ্ছেন৷ কোনো কোনো সংস্থা সরকারি জায়গা দখল করে ভবন বানিয়ে রাখছে যা কোনো কাজে আসছে না৷ ইচ্ছেমত প্রাইভেট কারের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে৷ মটর সাইকেলকে গণপরিবহন বানানো হয়েছে৷ এর পিছনে আছে ব্যক্তি আর গোষ্ঠীর লাভের স্বার্থ৷ ফলে নগরী মরে যাচ্ছে৷ বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে৷ সরকার যদি চায় তাহলে নাগরিক বান্ধব পরিকল্পনা করে ঢাকাকে পাঁচ বছরের মধ্যে একটি আধুনিক শহর করা সম্ভব৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান