ডাটা চচ্চড়ির মহিমা!
৫ জুলাই ২০১৬পরিসংখ্যান কি রান্না করে দেখানো যায়? একে বলে ডাটা কুইজিন, বাংলায় বলা যেতে পারে তথ্যের মুড়িঘণ্ট! কিন্তু বেলজিয়ামের এই রান্নার কোর্সটিতে খাবারের মাধ্যমে কিছু বিশেষ খবরাখবর, সেই সঙ্গে একটি বিশেষ মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবেশন করা হচ্ছে৷ যেমন বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মহিলাদের অনুপাত৷ ‘ডাটা কুইজিন' প্রকল্পটি উদ্ভাবন করেছেন মোরিৎস স্টেফানার ও সুজানে ইয়াশকো৷ দু'দিনের ওয়ার্কশপ৷ গত চার বছর ধরে এই ওয়ার্কশপের আয়োজন করে আসছেন মোরিৎস আর সুজানে৷
শিল্পকলার ইতিহাসের স্নাতক সুজানে ইয়াশকো, ‘‘আমি ভেবেছিলাম, কত ধরনের তথ্য আছে; মানুষজনের যাতে সে সব তথ্যে আগ্রহ জন্মায়, সে জন্য কিছু একটা করা দরকার৷ এগুলো সহজ তথ্য, কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান বা সংখ্যা হিসেবে তা সব মানুষকে বোঝানো যায় না৷ সেই কারণেই আমরা খাবার বা রান্নাবান্নার মতো এমন একটা মাধ্যম খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছি, যা ব্যক্তিগত অথচ আবেগপূর্ণ, যা দিয়ে এই সব তথ্যের মধ্যে অবরুদ্ধ কাহিনিগুলোকে দৃষ্টিগোচর করে তোলা যায়৷''
কোর্সে যারা অংশ নিচ্ছেন,তারাই ঠিক করবেন, তারা ঠিক কোন পরিসংখ্যান ‘রান্না' করবেন৷ যে সব তথ্য তাদের নিজেদের কাছে অর্থপূর্ণ, আবার তাদের পারিপার্শ্বিক থেকেই এসেছে৷ এগুলোকে বলে স্থানীয় তথ্য৷ ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রাসেলসের কাছে জেমব্লু-তে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মার্ট গ্যাস্ট্রনমি ল্যাবে সর্বাধুনিক কিচেন রেঞ্জ ও অন্যান্য সাজসরঞ্জাম রাখা আছে, এমনকি চকোলেট দিয়ে প্রিন্ট করার থ্রি-ডি প্রিন্টার পর্যন্ত৷ ডাটা কুইজিন কোর্সে অংশগ্রহণকারী আর্লেনের প্রিয় যন্ত্র এটি৷
ডিজাইনার আর্লেনে, ‘‘বেলজিয়ামের ‘প্রেলিন' চকোলেটটার মজা হলো, ওর ভেতরে কী আছে, তা কেউ জানে না৷ তাই আমরা চকোলেট দিয়ে এই ছোট ছোট কফিনগুলো তৈরি করে নানা ধরনের পুর দিয়ে সেগুলো ভর্তি করি৷ এর পিছনে পরিসংখ্যান হলো, বেলজিয়ামে মানুষ কতরকমভাবে মারা যায়৷''
‘মুখরোচক' পরিসংখ্যান?
এখন সেই কাজই চলেছে৷ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে এক শেফ তাদের সাহায্য করছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন, তথ্য মিষ্টান্ন কীভাবে সত্যিই মুখরোচক হয়৷ আর্লেনে চার ধরনের পুর তৈরি করেছেন,যা চার ধরনের মৃত্যুর কারণ দেখাচ্ছে৷ অ্যান্টওয়ার্প থেকে আসা আর্লেনে মেপে মেপে, হিসেব করে করে কফিনগুলোকে ভরেছেন ছ'ঘণ্টা সময় ধরে, যাতে বেলজিয়ামে মানুষের মৃত্যুর কারণের যে বাস্তব পরিসংখ্যান, তার সঠিক প্রতিফলন ঘটে৷ এখন শুধু ফটোগ্রাফারের ছবি তোলা বাকি৷ কেননা খাবার আগে তথ্য মিষ্টান্নের ছবি তুলে রাখা হয়৷
রান্না করা অন্যান্য পরিসংখ্যানগুলোও কিছু কম যায় না: বেলজিয়ামের শ্রমজীবীদের কাজের উৎসাহ থেকে শুরু করে পরমাণু শক্তি, সব বিষয় নিয়েই পরিসংখ্যান আছে, আবার রান্নাও আছে৷ এপ্রিল মাসের ক্যালেন্ডারটা দেখতে এইরকম৷
ডাটা ডিজাইনার মোরিৎস স্টেফানার বলেন, ‘‘তথ্য পরিবেশন করার জন্য আমরা সাধারণত খাবারদাবার ব্যবহার করি না৷ এই পন্থায় তথ্য নিখুঁতভাবে পরিবেশন করাও সম্ভব নয়৷ যেমন বলা সম্ভব নয়, এটায় দ্বিগুণ মিষ্টি দেওয়া হয়েছে না তিনগুণ৷ অপরদিকে এটা স্বাভাবিক যে, এভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে তুলতে পারলে, লোকজন তথ্য সম্পর্কে অন্যরকম করে ভাবে৷''
ডাটা কুইজিন বা তথ্য রান্নার লক্ষ্যই হলো তাই৷ স্বাদ-গন্ধের মাধ্যমে তথ্য বাস্তবিক ‘অন্তরে প্রবেশ করবে'৷ যে কারণে তথ্যের মুড়িঘণ্ট শেষমেষ চেখেও দেখা হয়, যাতে তথ্যের পিছনে যে কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে, তা বেরিয়ে আসতে পারে৷