ডয়চে ভেলের মুখোমুখি মাক্রোঁ
১০ মে ২০১৮মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে অ্যামেরিকাকে বার করে এনে যখন গোটা বিশ্বে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তখন অনেকেরই নজর ছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দিকে৷ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ওয়াশিংটনে গিয়ে তিনি ট্রাম্পকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন৷ ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বৃহস্পতিবার জার্মানির আখেন শহরে ‘শার্লেমান পুরস্কার’ গ্রহণ করবেন তিনি৷ তার আগে বুধবার ডয়চে ভেলে ও জার্মানির এআরডি নেটওয়ার্কের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমানুয়েল মাক্রোঁ পরমাণু চুক্তিকে ঘিরে বর্তমান সংকট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্কার ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন৷
ইউরোপ চুক্তি থেকে সরতে চায় না
মাক্রোঁ বলেন, মার্কিন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এলেও ইউরোপ এই চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেই স্থিতিশীলতা ইউরোপের মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জরুরি৷ তাঁর মতে, ইরানের সঙ্গে চুক্তির সম্প্রসারণ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বিষয়ও অন্তর্গত করা উচিত৷ তবে বর্তমান চুক্তি ভেঙে সেই পথে এগোনো সম্ভব নয়৷ নতুন পরিস্থিতিতে এই চুক্তির মূল্য কী দাঁড়াবে, আগামী কয়েক সপ্তাহে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করেন মাক্রোঁ৷
ইউরোপের সামনে চ্যালেঞ্জ
শুধু ইরান চুক্তিকে ঘিরে বর্তমান সংকট নয়, অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ, শরণার্থী সংকট, ইউরোপের মধ্যে বিভাজনের মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমূল সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে জার্মানির স্বার্থও গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে৷ ফ্রান্স ও জার্মানি একযোগে সেই প্রক্রিয়া তরান্বিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ মাক্রোঁ মনে করেন, বিশেষ করে অ্যামেরিকার বর্তমান ‘একলা চলা রে’ নীতির হাত থেকে বহুপাক্ষিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বিশ্বব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ইউরোপের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷
জার্মানি ও ফ্রান্সের ঐক্যের অভাব?
ডয়চে ভেলে ও এআরডি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইইউ-র সংস্কারের প্রশ্নে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্যের বিষয়টি উড়িয়ে দেন মাক্রোঁ৷ তাঁর মতে, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই৷ ইউরোপকে আরও সংঘবদ্ধ, কার্যকর ও গণতান্ত্রিক করে তুলতে তিনি যে সব সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন, সেগুলি মোটেই অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে বলে তিনি আশা করেন না৷ তাঁর আশা, ফ্রান্স ও জার্মানি মিলে সমাধানসূত্রগুলি তুলে ধরবে৷
ফ্রান্সে আমূল সংস্কার
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় এক বছর পূর্ণ করছেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ এই সময়কালে তিনি বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক আমূল সংস্কার চালিয়ে নিজের দেশে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন৷ তিনি এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হবার আগেই জার্মানি এমন সংস্কার চালিয়ে আজ অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে এবং অভিন্ন মুদ্রা ইউরো থেকে ফায়দা তুলতে পারছে৷ ফ্রান্স দেরিতে হলেও সেই পথে অগ্রসর হয়ে ইউরোপে সংহতির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে৷ তবে নিজেকে কোনো ‘সুপারহিরো’ বা অতি-মানব হিসেবে তুলে ধরতে চান না তিনি৷