আশা-দুরাশার ১৬ বছর
২০ মার্চ ২০১৭২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ প্রতিপক্ষ ছিল ভারত৷ শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ৪০০ রান করেছিল টাইগাররা৷ বাংলাদেশের পক্ষে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেছিলেন ১৪৫ রান৷ প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসের সেই সাফল্য চমকে দিয়েছিল সবাইকে৷ কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সাফল্য ধরে রাখা যায়নি৷ ফলে মাত্র ৯১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল দুর্জয় বাহিনী৷
তারপর থেকে গত ১৬ বছরে ১০০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ৷ শ্রীলঙ্কায় কলম্বোর পি সারা ওভালের টেস্টটি ছিল টাইগারদের শততম টেস্ট৷ হিসেবে অভিষেকের ১৬ বছর ৪ মাস ৬ দিন পর বাংলাদেশ শততম টেস্ট খেলতে নেমেছিল৷ ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো-র দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, টাইগাররাই সবচেয়ে কম সময়ে শততম টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে৷ শ্রীলঙ্কার সময় লেগেছিল ১৮ বছর তিন মাস ২৯ দিন৷
এখন পর্যন্ত খেলা ১০০টি টেস্টের ন’টিতে জিতেছে বাংলাদেশ৷ এক্ষেত্রে একমাত্র নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে টাইগাররা৷ কারণ একই সংখ্যক টেস্ট খেলে কিউইরা জিতেছিল মাত্র সাতটি টেস্টে৷ ভারত জিতেছিল ১০টি, আর জিম্বাবোয়ে ১১টিতে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল৷ তবে পরাজয়ের হিসেবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ৷ ১০০টি টেস্টের মধ্যে ৭৬টিতে হেরেছে তারা৷
এদিকে, সদ্য সমাপ্ত শততম টেস্টকে ঘিরে বাংলাদেশের টেস্ট অতীত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে কেন এখনও বাংলাদেশ আশানুরূপ ফল পায়নি তার কারণ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ টেস্ট ক্রিকেটকে ‘রিয়েল ক্রিকেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর উন্নয়নে ‘অনেক বড় পরিকল্পনা দরকার’ বলে মনে করছেন৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন টেস্টে ‘মোটামুটি’ খেলছে৷ এই পর্যায় থেকে উপরে যেতে গেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান উন্নয়ন করতে হবে বলে জানান তিনি৷
‘‘লংগার ভার্সন ক্রিকেটটা যতটা কম্পিটিটিভ হওয়া দরকার, আমি বলতে চাচ্ছি, যত ভালো কন্ডিশনে খেলা দরকার, ততটা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন ফারুক আহমেদ৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে উইকেটগুলো খুবই ‘ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি' করে তৈরি করা হয়, সেখানে বোলারদের জন্য কিছুই থাকে না, বিশেষ করে পেস বোলারদের জন্য৷ এছাড়া পর্যাপ্ত মাঠের অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি৷
বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উন্নতির কথা বললেন৷ ‘‘আমাদের লঙ্গার ভার্সনকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷ এটাকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করলে আমরা আরো ভালো করব৷ আমাদের বুঝতে হবে লঙ্গার ভার্সন ভালো খেললেই আমরা শর্ট ভার্সনে ভালো খেলব৷ টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেললে কিন্তু লংগার ভার্সনে ভালো খেলার স্কোপ নেই,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দুর্জয়৷ এছাড়া ফারুক আহমেদের মতো দুর্জয়ও টেস্ট উপযোগী উইকেট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন৷
এই দুই সাবেক ক্রিকেটারই বেশি বেশি টেস্ট খেলার উপর গুরুত্ব আরোপ করলেও বিভিন্ন কারণে অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট খেলতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন৷ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘ক্রিকেটিং নেশন হিসেবে আপনি যদি ছোট হন, তাহলে বড় দেশগুলো আপনার সঙ্গে অত বেশি খেলতে চায় না৷ এখানে একটা আর্থিক ব্যাপার থেকে যায়৷ ধরুন, অস্ট্রেলিয়া যদি বাংলাদেশের সঙ্গে খেলে তাহলে টিভিস্বত্ত্ব বলেন, দর্শক সংখ্যা বলেন, এগুলো বেশি আসে না৷’’ তবে তিনি আশা করছেন বাংলাদেশ ভবিষ্যতে টেস্টে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে এই সমস্যার সমাধান হবে৷
টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকটি রেকর্ড
- সোহাগ গাজী: বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পাশাপাশি হ্যাট্রিকও করেছেন৷ ২০১৩ সালে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে এই সাফল্য পান তিনি৷
- আবুল হাসান: ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে নিজের অভিষেকে এক ইনিংসে ১১৩ রান করেন৷ ইতিহাসে এমন ব্যাটসম্যান আছেন আর মাত্র একজন৷
- মোহাম্মদ আশরাফুল: সবচেয়ে কম বয়সি টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান৷ ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক করতে নেমে এই সাফল্য (১১৪ রান) পান তিনি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন৷
- মেহেদী হাসান মিরাজ: ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে অভিষেক করতে নেমে ১৯ উইকেট নেন৷ এর চেয়ে বেশি উইকেট নেয়া (অভিষেকে ও দুই টেস্টের সিরিজে) আর কোনো ক্রিকেটার বিশ্বে নেই৷
- এনামুল হক জুনিয়র: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে মাত্র ১৮ বছর ৪০ দিন বয়সে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই বা-হাতি বোলার৷ এত কম বয়সে ১০ উইকেট নেয়ার সাফল্য বিশ্বে আর কারও নেই৷
টেস্টে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম
- প্রথম টেস্ট ম্যাচ: ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ অধিনায়ক ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷
- প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি: প্রথম টেস্ট ম্যাচেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল ১৪৫ রান করেছিলেন৷
- প্রথম টেস্ট জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৬ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ৷
- প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়: ২০০৫ সালে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ জিতেছিল ১-০তে৷
- বিদেশে একমাত্র সিরিজ জয়: ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ২-০তে জয়৷
- সর্বোচ্চ রান: ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬৩৮ রান৷
- প্রথম দ্বিশতক: ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০ রান করেছিলেন মুশফিক রহিম৷
- সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট: ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে এই সাফল্য পান৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷