ভারত-বাংলাদেশ গাঁটছড়া
২৩ আগস্ট ২০১৬নতুন দিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদ সম্পর্কে যাতে ঠিক সময়ে সঠিক তথ্যাদি তুলে ধরা যায়, যাতে গুজব ও মিথ্যা খবর প্রচারে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়, সে জন্যই এ চুক্তি৷ জানা গেছে, উভয় দেশের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান বাড়াতে এই সমঝোতা-পত্রটি স্বাক্ষরিত হবে খুব শীঘ্রই৷
তিনদিনের দিল্লি সফরে এসে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর মধ্যে স্থির হয় যে এই ডেটা বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা-পত্রটি স্বাক্ষরিত হবে৷ এটাই নাকি সন্ত্রাস ও মৌলবাদ মোকাবিলার পাল্টা কৌশল৷ ইনু মনে করেন, এতে মগজ ধোলাইয়ের জন্য প্রচারিত মৌলবাদী ও জঙ্গি মতাদর্শের মোকাবিলা উভয় দেশের পক্ষেই সহজ হবে৷
বাংলাদেশ অবশ্য ইতিমধ্যেই জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে৷ ঢাকা চায়, দিল্লিও অনুরূপ ব্যবস্থা নিক৷ বাংলাদেশের কাছে ইসলামের ইতিহাস অবিকৃত রেখে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বৃত্তান্তকে সংরক্ষিত রাখার যৌথ প্রয়াসে ভারতের অংশগ্রহণ কাম্য, বলেন ইনু৷
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক হিসেবে হাসানুল হক ইনু বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ভুল থেকে আজও পাকিস্তানের শিক্ষা হয়নি৷ তাঁর অভিযোগ, এখনও বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তান মদত দিয়ে চলেছে৷ জামাত আজও পাকিস্তানের মদতে বাংলাদেশে নাশকতা চালাচ্ছে৷ জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে পাকিস্তানের ভূমিকা সম্পর্কে ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থান অভিন্ন৷ তাই যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশ মু্ক্তিযুদ্ধের একটি তথ্যচিত্র তৈরিতে ভারত-বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রীদ্বয় একমত হন৷ নাইডু বলেন, ভারতের ফিল্ম ডিভিশন, দূরদর্শন এবং অন্যান্য মিডিয়া ইউনিটগুলির মহাফেজখানায় সংরক্ষিত দলিলপত্রগুলো তথ্যচিত্রে ব্যবহার করা হবে৷ এই তথ্যচিত্র ‘রিলিজ' করা হবে ২০২১ সালে, ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অর্ধ-শতবার্ষিকীতে৷ এছাড়া দু'দেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হবে বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী এবং তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কাহিনি নিয়ে এক মেগা তথ্যচিত্র৷
ছবিটি রিলিজ হওয়ার কথা ২০২০ সালে মুজিবের জন্ম শতবার্ষিকীতে৷ অডিও-ভিস্যুয়ালের যৌথ প্রযোজনা চুক্তির প্রস্তাবেও সম্মত হয়েছেন উভয় মন্ত্রী৷ সম্মত হয়েছেন ভারতের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের তরুণ ফিল্ম নির্মাতাদের প্রশিক্ষণ দেবার বিষয়েও৷ এছাড়া ভারতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসব এবং বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র উত্সবের বিষয়েও উভয় মন্ত্রী একমত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে ভারতীয় ছায়াছবি প্রদর্শনের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার অনুরোধ জাননো হলে, ইনু বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রেজের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন৷
অন্যদিকে বাংলাদেশে এবং প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষি শ্রোতাদের জন্য আকাশবাণী মৈত্রী চ্যানেল আবার চালু হবার কথা ২৩শে আগস্ট৷ চ্যানেলটির উদ্বোধন করার কথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের৷ এছাড়া ১৬ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে থাকছে মূলত সংবাদ, সংবাদ পর্যালোচনা, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল গীতি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে ভারতের অবস্থানের ওপর সঠিক আলোকপাত৷
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই চ্যানেলটির সূচনা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ট্র্যান্সমিটার' খারাপ হয়ে যাবার কারণে ২০১০ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত বছর ঢাকা সফরে গিয়ে দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গতি আনার প্রতিশ্রুতি দেন৷ আকাশবাণীর মহাপরিলকের সূত্র থেকে বলা হয়, সম্প্রতি এ জন্য কলকাতার কাছে চুঁচুড়ায় বসানো হয়েছে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এক হাজার এলভি-ডিআরএম ট্রান্সমিটার৷ বাংলাদেশের স্থানীয় এফএম চ্যানেলেও অনুষ্ঠানের অংশ বিশেষ প্রচার নিয়ে কথাবার্তা চলছে৷ আকাশবাণীর মহাপরিচালক ফায়াজ শায়েরিয়ার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি, আবেগ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের যে একটা বড় ভূমিকা আছে, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ওয়াকিবহাল করাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য৷ এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সঠিক মূল্যায়ন তুলে ধরাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷
এই সমঝোতাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷