1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকা পেয়েও নিতে চায় না ধনী দেশের অনেকে!

৮ জানুয়ারি ২০২২

সারা বিশ্বে আবারো করোনার ঊর্ধ্বগতি৷ জার্মানির করোনা পরিস্থিতিও খুব খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কিছু মানুষ এখনো টিকা নিতে চায় না৷ তারা নানাভাবে টিকার বিরোধিতা করছে, এমন কি সংঘর্ষে জড়িয়ে পুলিশকে পর্যন্ত ধরে পেটাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/45IFy
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA Press/picture alliance

করোনা ভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছে দুবছর আগে৷ তারপর থেকেই বিশ্ব জুড়ে সকলেরই এক প্রশ্ন, কবে বের হবে করোনার প্রতিষেধক? নানা জল্পনা কল্পনা, গবেষণা আর দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যখন টিকা এলো তখন কেউ কেউ টিকা নেবেন না, শোনা যাচ্ছিল৷ প্রথমদিকে বিষয়টা আমার তেমন বিশ্বাসই হচ্ছিল না৷

করোনার বিধিনিষেধে মানুষ ঘরবন্দি থাকতে চায়নি, বিরক্ত হয়ে নিয়মকানুন মানার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে, বিরোধিতা করেছে জার্মানির অনেক মানুষ৷ শুধু জার্মানি নয়, অন্যান্য অনেক দেশেই হয়েছে এমনটা৷ ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আমরা অনেকেই পাগলপ্রায় কাজেই কিছুটা হলেও বুঝতে পারি৷ কিন্তু করোনার টিকা না নেওয়ার যুক্তি বোঝা বেশ দায়৷ বিশেষ করে শিক্ষার হারে এগিয়ে থাকা জার্মানির মতো উন্নত একটি দেশে

মহামারি সংক্রমণ ঠেকাতে জার্মানিতে নতুন বিধিনিষেধ ও টিকা বাধ্যতামূলক করায় মানুষ আবারো বিক্ষোভ করেছে, বিশেষ করে জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে৷ স্যাক্সনির বিক্ষোভে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হওয়ায় বেশ কয়েকজন পুলিশ আহতও হয়েছেন৷ বলাই বাহুল্য যে এসব বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই টিকা বিরোধিরা বিক্ষোভ করছে৷ সব বিক্ষোভে না হলেও বেশ কয়েকটিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে , এমন কি এক ঘটনায় আদালতে কয়েকজনকে শাস্তি পর্যন্ত  দেওয়া হয়েছে৷ এসব নিয়ে মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটা৷ কোনো কোনো বিক্ষোভে ভাঙচুর হয়েছে , ঘটেছে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও৷

জার্মানিতে করোনার নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

এসব ঘটনা শুধু জার্মানিতে নয়, করোনার বিধিনিষেধ বা টিকা বিরোধী বিক্ষোভ জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, স্পেনসহ ইউরোপের নানা দেশেই হয়েছে৷ আমেরিকাও এর বাইরে নয়! এমন উন্নত দেশেও এরকম ঘটনা! ঠিক যেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার মতো! অথচ জার্মানিতে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চত করে সরকার৷  মানুষের খাওয়াপরার কষ্ট নেই, প্রতিটি নাগরিকেরই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ আর তারাই কিনা টিকা নিতে চায় না! উল্টো টিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আর বিক্ষোভে পুলিশ বাধা দেয়ার তাদের ধরে পেটায়!

আর বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের মানুষ এখনো করোনা ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই পায়নি, বাংলাদেশে বুস্টার কেবল দেয়া শুরু হয়েছে৷ আফ্রিকায় প্রতি চারজন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে তিনজনই টিকা নেয়ার সুযোগই পাননি৷

অথচ জার্মানিতে সুযোগ পেয়েও অনেক মানুষ করোনা টিকা নিচ্ছে না৷ এর কারণ কি সরকারের প্রতি অবিশ্বাস, রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে হতাশা  নাকি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আস্থা নেই? টিকা বিরোধীদের কেউ কেউ  বলছেন, কড়া বিধিনিষেধ বা টিকা বাধ্যতামূলক করে নাকি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে৷ তবে বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চল ভেদে বিক্ষোভের কারণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷

নুরুন্নাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলে
নুরুন্নাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

এ বিষয়ে বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির বিক্ষোভের মূলে বামপন্থি আন্দোলন, আর পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ কট্টর ডানপন্থি দলের সদস্য ৷ অন্যদিকে জার্মানির জিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ইয়োহানেস কিস জানিয়েছেন, হতাশা থেকেই নাকি এসব বিক্ষোভ৷  আর এই হতাশা কেবল করোনা নীতি নিয়েই নয়, তাদের মধ্যে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিয়েও রয়েছে হতাশা ৷

মহামারি করোনায় জার্মানিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১১৪.০০০ মানুষ৷ আর সারা বিশ্বে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৫,৪৭ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ৷ এতেও কি আমাদের টনক নড়েনি!  আশার কথা করোনার টিকা পাওয়ার পর বিশ্বে মৃত্যুহার কমেছে এবং টিকা নেওয়ার পরেও যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা সহজেই সেরে উঠেছেন৷ 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা এ পর্যন্ত মারা গেছেন তাদের একটি বড় অংশের টিকা দেয়া ছিল না৷ জার্মানিতে সংক্রমণের ঊর্ধগতির একটা বড় কারণ, মানুষের টিকার প্রতি অনীহা৷ পশ্চিম ইউরোপে টিকা নেয়ায় পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে একটি জার্মনি৷ জার্মানিসহ তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর কিছু মানুষ টিকা না নিয়ে ইচ্ছেমতো করোনা ছড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে৷ আর কিছুদিন পরপরই আসছে করোনার নতুন নতুন সংস্করণ৷

সত্যিই, কত গরিব দেশের মানুষ টিকা চেয়েও পায়না, আর ধনী দেশের মানুষেরা টিকা পেয়েও নিতে চায়না৷ হায়রে পৃথিবী!