টিকার আয়নায় দেখা গেল জার্মানরা কেমন
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১এক সময় জার্মানিকে দক্ষতা এবং আস্থাশীলতার স্বর্গ মনে করা হতো৷ বলা হতো, জার্মানদের রসবোধের ঘাটতি থাকতে পারে, তবে তারা খুব সময়ানুবর্তী এবং সংগঠিত৷
কিন্তু মহামারি এসে বুঝিয়ে দিলো পরিবর্তন এসেছে৷ আসলে পরিবর্তন এসেছে আগেই৷ স্টুটগার্টে নতুন রেলস্টেশন তৈরির বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা বিরোধ এবং বার্লিনের নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কাজের দীর্ঘসূত্রতায় তার পরিষ্কার ইঙ্গিত ছিল৷
সমাজের সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হয়েছিল৷ জার্মানরা যখন যা করে, মিলেমিশেই করে৷ কিন্তু এর ফলে অনেক সময় রান্নাঘরে রাঁধুনী বেশি হয়ে হওয়ার কুফলও ভোগ করতে হয়৷ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার, বড় শহর, ছোট শহর, নাগরিক উদ্যোগ এবং বিশেষজ্ঞদের কমিটি- সবাই মিলেও তাই সমস্যার দ্রুত সমাধান দিতে পারেনি৷
বার্লিন বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়েছিল বড় বড় আশার কথা শুনিয়ে৷ যেমন বলা হয়েছিল, সেখানে ধোঁয়া সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া এত ভালো হবে যা বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ বাস্তবে তা হয়নি৷ বরং রাজনীতিবিদরা বারবার নতুন কিছু যোগ করার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসে মূল কাজ দিয়েছেন পিছিয়ে, ব্যয়ও বাড়িয়েছেন অনেক৷ অঙ্গীকার করা সময়ের চেয়ে কয়েক বছর পরে, প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি খরচ করে মাত্র কিছুদিন আগে হলো বিমানবন্দরটির উদ্বোধন৷
জার্মানিতে সব কাজ যে ঠিকভাবে হয় না তা ফোল্কসভাগেন কাণ্ডেও বোঝা গিয়েছিল৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠানটি তো ঠিকই কার্বন নিঃসরণের নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখার কথা বলে ইচ্ছে করে ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে পেরেছিল৷ জার্মানরা দেখাতে চেয়েছিল ‘দেখো, আমরা কত ভালো পারি', কিন্তু দেখানো হলো উল্টো৷
করোনাকাল: হাল ছেড়ে ম্যার্কেল...
কেউ কি বলতে পারবেন কোন রাজ্যের স্কুল কখন খুলেছে বা খুলবে? চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল খুব চেষ্টা করেছিলেন সব এক নিয়মে রাখার৷ শেষে তা যে সম্ভব নয় বুঝতে পেরে বাধ্য হয়ে দৃশ্যত হালই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি৷
করোনাকাল: তালিকা আছে, টিকা নেই
আমরা সবাই মিলে ভ্যাকসিন কাদের আগে পাওয়া উচিত তা ঠিক করায় খুব ব্যস্ত ছিলাম৷ একেবারে জার্মান কায়দায় একটা তালিকাও কিন্তু হয়ে গেছে৷ খুব সহজ, ছোট বিষয় থেকে শুরু করে দুর্বোধ্য এবং বড় বড় বিষয়েরও উল্লেখ আছে সেখানে৷ কিন্তু এই কাজটা ভালোভাবে করতে গিয়ে আমরা পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন অর্ডার করতেই ভুলে গেছি৷
আবার দেখুন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়ে মিডিয়ায় এত লেখালেখি হলো যে এখন জার্মানির মানুষ সেটা নিতেই চায় না৷ অথচ অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিন্তু ভীষণ কার্যকর টিকা৷
করোনাকাল: শুরুর বিপরীত...
করোনা সংকটের শুরুতে, অর্থাৎ এক বছর আগে মনে হয়েছিল মহামারিকেও খুব সফলভাবে সামাল দেবে জার্মানি৷ অতীতে বিশ্বমন্দা সামাল দেয়া গেছে, শরণার্থী সংকট সামাল দেয়া গেছে- করোনা সামলানো যাবে না কেন? এক ধরণের আত্মতুষ্টি হয়ত সাফল্য সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিন্ত রেখেছিল৷ আগাম আত্মতুষ্টিতে যা হয় আখেরে তা-ই হচ্ছে৷