1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাঙ্গাইল শাড়ি, ফজলি আম ও সুন্দরবনের মধুর গল্প

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিতর্কের পর বোঝা যাচ্ছে, শেক্সপিয়র ভুল বলেছিলেন, নামে সত্যিই অনেক কিছু এসে যায়।

https://p.dw.com/p/4cU48
বাগান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে একটি ‘আম স্পেশাল ট্রেন’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কম খরচে ঢাকায় আম পরিবহণ করছে
ভারতে ফজলি আম বলতে মালদহের ফজলিই বোঝায়। তাকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ ফজলিকে রাজশাহী-চাঁপাই ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি দিয়েছেছবি: Monowar Jewel

টাঙ্গাইল শাড়ি তুমি কার, ভারত না বাংলাদেশের? টাঙ্গাইল জায়গাটা যে বাংলাদেশে তা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এখানে বিষয়টি হলো টাঙ্গাইল শাড়ি। অর্থাৎ, জায়গা নয়, একটা বিশেষ ধরনের শাড়ি। যে শাড়ি বোনা টাঙ্গাইলে শুরু হয়, কিন্তু যে তাঁতিরা বুনতেন, তার সিংহভাগ দেশভাগের পর চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে।

তারা এপারে এসেও সেই একই ধরনের শাড়ি তারা বুনতে শুরু করেন। সেই শাড়ির নামও একই থাকে, টাঙ্গাইল শাড়ি। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই সারা ভারতে টাঙ্গাইল শাড়ি যথেষ্ট জনপ্রিয়। আর সেগুলি বাংলাদেশ থেকে আসে না। আসে মূলত পশ্চিমবঙ্গের দুইটি জেলা পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়া থেকে। খুব বেশি হলে বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল শাড়ি।

ভারতেও জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বাক্যবন্ধের উল্লেখই করা হয়েছে, 'টাঙ্গাইল শাড়ি অফ বেঙ্গল'।  এরপর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এক্স-এ লিখেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিনটি হ্যান্ডলুম শাড়িকে জিআই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সেগুলি হলো, নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের টাঙ্গাইল, মুর্শিদাবাদের কোরিয়াল ও বীরভূমের গরদ।'' এখানেও টাঙ্গাইল কথাটা বিশেষ ধরনের শাড়িকেই বুঝিয়েছে। জায়গাকে নয়।

এমনও নয়, এই প্রথম এরকম হলো। এর জলজ্য়ান্ত উদাহরণ আছে ফজলি আমের ক্ষেত্রে। ফজলি আম বলতে ভারতে মালদহের ফজলিই বোঝায়। তাকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ এরপর তাদের ফজলিকে রাজশাহী-চাঁপাই ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাসমতি চালের জিআই স্বীকৃতি ভারত প্রথমে দেয়। অনেক পরে পাকিস্তানও বাসমতি চালকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে। সুন্দরবনের মধু নিয়েও একই কথা। ভারত ও বাংলাদেশ দুই ভূখণ্ডেই সুন্দরবন আছে। সেখানে মধু সংগ্রহ করা হয়। সুন্দরবনের মধুকেও জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ দিলেও তো অসুবিধার কিছু নেই। ভারতের সুন্দরবনের মধু ও বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু-র তো মধুর সহাবস্থান করতেই পারে।

ভারতের মধ্যেও তো রসগোল্লার জিআই ট্যাগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা লড়ে গিয়েছিল। পরে দুই রাজ্যই স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে রসগোল্লার জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও নবীন পট্টনায়েকের রাজ্যের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ওড়িশার রসগোল্লা। দিল্লিতে তো এখন বাটার চিকেবের আবিষ্কর্তা কে, তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলছে। মোতিমহল বলছে তারা, কুন্দন লাল গুজরালের দাবি তারা এই পদ প্রথম বানান।

তবে টাঙ্গাইল শাড়ির বিতর্কটা একটু আলাদা। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশভাগ। জড়িয়ে গেছে তাঁতিদের স্থানান্তর। টাঙ্গাইলে এই বিশেষ ধরনের শাড়ি তৈরির কাজটা করেছিলেন বসাকরা। তারাই এই শাড়ির এতিহ্য দীর্ঘদিন ধরে বহন করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর টাঙ্গাইলের বসাক তাঁতিরা বেশিরভাগই চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। তারা তাদের চিরাচরিত পেশা থেকে সরেননি। মূলত তারা পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়ায় চলে যান, সেখানেই তাঁতে টাঙ্গাইল শাড়ি বুনতে থাকেন। ফলে ভারতেও টাঙ্গাইল শাড়ির একটা ঐতিহ্য আছে এবং তা প্রায় ৭৫ বছরের পুরনো। ফলে এই ঐতিহ্য, শাড়ি তৈরির বিশেষ পদ্ধতি সবই দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত হচ্ছে।

আসলে মুশকিলটা হয়েছে, বিশ্ববাণিজ্য নিয়ে চরম প্রতিযোগিতায় দুনিয়ায় সব দেশ একে অপরকে টেক্কা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে দেরি করা মানে অনেক পিছিয়ে পড়া। এই বিতর্কের সার তো এটাই, সময়ে কাজ করতে হয়, নাহলে পিছিয়ে পড়তে হয়।

আবার অন্যদিক থেকে দেখলে, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা দুই রসগোল্লাই তো নিজের মতো করে রাজত্ব করে যাচ্ছে।  মালদহ হোক বা রাজশাহী-চাঁপাই-এর, ফজলি তো নিজগুণেই সমান আকর্ষক। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল ও পশ্চিমবঙ্গের টাঙ্গাইল দুজনেই সমানভাবে রাজ্যপাট চালাতে পারে। এই সব বিতর্ক থেকে ভাবাবেগ উসকে যায়, জেনে, না জেনে বা অর্ধেক জেনে প্রচুর মানুষ প্রচুর কথা বলেন। বিশ্বে আর যারই অভাব থাকুক না কেন, যুক্তির কোনো অভাব নেই। এর জন্য তো কোনো পয়সা খরচ করতে হয় না। তাই যুক্তির তুফান উঠবে, উঠবেই। তার মধ্যে বারবার মনে হতে থাকবে, নাম অতি বিষম বস্তু।রস

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য