জয় শ্রী রাম কেন রণহুঙ্কার?
২৬ জুলাই ২০১৯প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যাঁরা চিঠি লিখেছেন, তাঁদের অনেকেই দেশের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী৷ শ্যাম বেনেগাল, আদুর গোপালকৃষ্ণন, গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন–এর মতো বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকেরা যেমন সেই তালিকায় আছেন, তেমনই আছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ, সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী, ধ্রুপদী সঙ্গীত গায়িকা শুভা মুদগল, লেখক অমিত চৌধুরি, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, গায়ক অনুপম রায়৷ লক্ষণীয়, যে এই ৪৯ জন বুদ্ধিজীবীর অনেকেই বাঙালি এবং কেউ কেউ সরাসরি বাংলা থেকেই৷
ফলে ‘জয় শ্রী রাম' কেন আজকাল রণহুঙ্কারের মতো শোনায়, কেন এই ধর্মীয় জিগির তুলে দেশের সংখ্যালঘু মুসলিম এবং দলিতদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, কেন দেশে বিরোধিতার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, কেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটির বিরোধিতাকে দেশ বিরোধিতার সঙ্গে এক করে দেখা হচ্ছে, কেন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই মাওবাদী, বা ‘আর্বান নক্সাল' বলে দাগিয়ে দিয়ে ধরপাকড়, হেনস্থা হচ্ছে— প্রধানমন্ত্রীকে করা অস্বস্তিকর এইসব প্রশ্নের জন্য মোদিভক্তদের রাগ অনেকাংশেই এসে পড়ছে বাংলা এবং বাঙালিদের ওপর৷
বাংলার নাট্যকর্মী এবং অভিনেতা কৌশিক সেনকে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উত্যক্ত করার জন্য৷ ডয়চে ভেলে–কে কৌশিক জানিয়েছেন, যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি বাংলাতেই কথা বলছিলেন৷ বিজেপি কর্মী নয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির ভক্ত এবং হিন্দুত্ববাদের রাজনীতির সমর্থক বলে তিনি নিজেকে দাবি করেন৷ কৌশিককে তিনি ধমকেছেন, যে মুসলিমরা যখন অত্যাচার করে, তখন আপনারা কেন কিছু বলেন না? ‘তৃণমূলের পয়সা খেয়েছেন!' কৌশিককে বলেছেন সেই লোক৷
বাংলায় বিজেপি ঠিক এই ভাষাতেই বিদ্বজ্জনেদের এই প্রতিবাদের মোকাবিলা করছেন৷ যে ওরা টাকা পেয়ে যেমন অভিনয় করেন, তেমনই টাকা পেয়েই এই সাজানো প্রতিবাদ করছেন৷ ‘এরা বুদ্ধিজীবী নয়, এরা হচ্ছে মমতাজীবী!' ডয়চে ভেলেকে বললেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা৷ উল্টে তিনি বলছেন, ‘বাংলায় ‘জয় শ্রী রাম' ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মমতা ব্যানার্জির৷ তার পর অমর্ত্য সেন৷ তার পর এই জাতীয় চুনোপুঁটিদের৷' কিন্তু রাহুল সিন্হার দাবি, লোকে এদের কথার কোনও গুরুত্বই দেয় না৷
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সরকারপন্থী অংশও একইভাবে বুদ্ধিজীবীদের এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে পাল্টা তর্ক তুলেছে৷ ধর্মীয় সন্ত্রাস এবং গণপিটুনির রাজনীতি নিয়ে কলকাতায় সদ্য এক সাংবাদিক সম্মেলনে চিত্রপরিচালক অপর্ণা সেন এবং অন্যান্যদের সামনে বার বার একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে যখন হিন্দুরা আক্রান্ত হয়, তখন কেন আপনাদের কারও প্রতিবাদ শোনা যায় না?
এদিকে বুদ্ধ্বিজীবীদের ওই চিঠির পালটা ৬১ জনের স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করা হলো শুক্রবার, যাতে প্রশ্ন তোলা হলো দেশের কিছু বুদ্ধিজীবীর সুবিধেবাদী নীতি এবং বেছে বেছে প্রতিবাদ জানানোর অপসংস্কৃতি নিয়ে। বলা বাহুল্য, যে এঁরা সেটাই বললেন, যেটা বিজেপি বলছে। অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত, নৃত্যশিল্পী সোনাল মান সিং, বাদ্যযন্ত্রী বিশ্বমোহন ভাট, চিত্র পরিচালক মধুর ভান্ডারকরের মতো ভারতবিখ্যাতদের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেরও বেশ কয়েকজন আছেন স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে।