1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জো বাইডেনের বিজয়ে জার্মানরাও উচ্ছ্বসিত

১১ নভেম্বর ২০২০

মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৭৫ মিলিয়ন ভোট পেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন জো বাইডেন৷ ট্রাম্পের পতন দেখায় জার্মানদের যতটা আগ্রহ দেখলাম নিজের দেশের নির্বাচন নিয়ে কিন্তু তেমন উৎসাহ দেখিনি৷

https://p.dw.com/p/3l7kv
ছবি: Jonathan Ernst/REUTERS

যে কোনো সচেতন নাগরিকই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ অ্যামেরিকার নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হলেও খোঁজখবর রাখেন৷ আর অ্যামেরিকার সাথে কোনো সম্পৃক্ততা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের আগ্রহ বেশি থাকে৷ তারপরও মার্কিন নির্বাচন নিয়ে আমার জার্মান বন্ধুবান্ধবের আগ্রহ আমাকে কিছুটা হলেও বিস্মিত করেছে৷

জো বাইডেন অ্যামেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় খুশি ৪০ বছর বয়সি করডুলা ম্যুলার৷ কারণ ডনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবৈষম্যমূলক মনোভাব তার মোটেই পছন্দ নয়৷ অ্যামেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তাঁর আচরণের সমালোচনা করে করডুলা বলেন, ‘‘অ্যামেরিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ইউরোপেও৷ আমার বিশ্বাস, জো বাইডেন কিছুটা হলেও এসব কমিয়ে আনতে পারবেন৷’’ চাকরি সূত্রে করডুলা কয়েক বছর স্পেনের মাদ্রিদে কাটিয়েছেন৷

জার্মানরা এমনিতেই বেশ পরিবেশ সচেতন, ছোট বড় কাজের মধ্য দিয়ে তাদের অনেকেই পরিবেশ সুরক্ষায় নিজেদের অবদান রাখার চেষ্টা করে থাকেন৷ পরিবেশ দূষণ সারা বিশ্বে যেভাবে বাড়ছে সেখানে অ্যামেরিকার মতো একটি দেশ জলবায়ু চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাওয়া কোনো দেশের জন্যই সুখকর নয় বলে মনে করেন আমাদের প্রতিবেশি হেলগা গেটেন্স ও তাঁর স্বামী মার্টিন৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, বলেন তাঁরা৷ জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে জলবায়ু চুক্তিতে আবার ফিরে আসবেন সেকথা তিনি আগেই বলেছেন, কাজেই জো বাইডেনের বিজয়ে তাঁরা আনন্দিত৷

‘‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বিদেশি মেয়েদের যে আশার বাণী শুনিয়েছেন তা অনেকটা আমাদের মনের কথা৷ সেতাঙ্গ নয়, এমন অ্যামেরিকানদেরও যে ‘পলিটিক্যাল ভয়েস’ আছে, সে আশ্বাসই তিনি দিয়েছেন৷ আশা করা যায়, শুধু ত্বকের রঙের কারণে কাউকে আর দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক ভাবতে হবেনা৷ জন্মভূমি জার্মানিতে ফিরে আসার আগে অ্যামেরিকায় আমার স্থায়ী ঠিকানা ছিলো পেনসিলভেনিয়া, সেখানেই আমি পোস্টাল ভোট দিয়েছি৷ জো বাইডেনের বিজয়ে ভরসা পাচ্ছি, কারণ অ্যামেরিকার ডেমোক্র্যাসি সঠিকভাবে চললে জার্মানিতেও তার প্রতিফলন হবে,’’ জানালেন সাংবাদিক নাদিয়া৷ জার্মানি এবং অ্যামেরিকা দুই দেশেই তার ভোট দেয়ার অধিকার রয়েছে৷ তার জন্ম, বেড়ে ওঠা জার্মানিতে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, প্রথম চাকুরির অভিজ্ঞতা অ্যামেরিকায়৷

জন্ম থেকেই লুইডিয়াকে চিনি৷ ওর কথা বলতে গেলে ওর মা-বাবার বিয়ের কথা মনে পড়ে যায়৷ ‘পল্টার আবেন্ড’ বলে বিয়ের একটা রীতি রয়েছে জার্মানদের, বিয়ের দুই একদিন আগেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ সেখানে কাচের থালা বাসন বাটি ইত্যাদি আছড়ে আছড়ে মাটিতে ফেলে ভাঙা হয়, যত বেশি জিনিস ভাঙা হবে তত বেশি নাকি সুখী হবে নব দম্পতি৷ সে এক ভীষণ মজার খেলা! আগে থেকেই আশেপাশের বাড়ি বা পরিচিতদের কাছ থেকে কাপ, প্লেট, বাটি কত কী জোগাড় করে রেখেছিলাম, সেগুলো মনের আনন্দে ‘পল্টার আবেন্ড’-এ ভেঙেছি৷ এত বছর পরেও সে আনন্দের রেশ যেন কিছুটা হলেও রয়ে গেছে! তবে এসব অনুষ্ঠান আজকাল হয় না বললেই চলে! ও হ্যাঁ, বলছিলাম মার্কিন নির্বাচনের কথা, অ্যামেরিকার ইতিহাসে জো বাইডেন সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় খুশি বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুইডিয়া হালিৎসকি৷ ‘‘পরিবেশ দূষণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যেমন কোনো ভাবনা নেই, তেমনি জনগণের স্বাস্থ্য নিয়েও তিনি ভাবেননি৷ যার প্রমাণ তিনি দেখিয়েছেন করোনা মহামারির সময়ে৷ তাছাড়া তিনি বিদেশি ছাত্রদের বিপক্ষে ছিলেন,’’ মন্তব্য লুইডিয়ার৷ 

আমাদের জার্মান বন্ধু গাড়ি ব্যবসায়ী আন্দ্রেয়াস লাউবাখ অ্যামেরিকার খুটিনাটি সব খবরই রাখেন৷ আর নির্বাচনের মতো এতবড় একটি বিষয় নিয়ে তো তার আগ্রহ থাকারই কথা৷ মার্কিন নির্বাচনের কটা দিন আমাদের বন্ধুদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে মেসেজ পাঠিয়ে পাগল করে ফেলেছে সে! একটু পরপরই ভোটের আপডেট আর মাঝে মাঝেই ট্রাম্পকে নিয়ে তৈরি হাসির নানা ভিডিও পোস্ট করেছে৷ জার্মানির নির্বাচন নিয়ে কিন্তু ওদের মধ্যে এত উত্তেজনা কখনো দেখিনি৷ নির্বাচনে আমরা ভোট দিয়েছি কিনা সেটাই কেবল জানতে চেয়েছে, এর বেশি কিছু নয়৷ যাক, তবে বাইডেনের বিজয়ে আন্দ্রেয়াসসহ গ্রুপের সবাই খুব খুশি৷

মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কে আন্দ্রেয়াস তার মতামত জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘শুধু অ্যামেরিকা নয়, সারা বিশ্বের জন্যই এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিলো৷ ডনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি বাতিল করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে যাওয়ার মতো কিছু বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অভিবাসী এবং মুসলিমদের ইমেজও নষ্ট করেছেন তিনি৷ কোনো কিছু না ভেবেই বলা যায়, বাইডেনের বিজয় বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে৷’’

মুসলিম কমিউনিটি এবং সকলেই একসাথে মিলেমিশে থাকার কথা জানিয়ে জো বাইডেন হাদিসের বাণী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে এক বার্তা দিয়েছেন৷ সেই বার্তার ভিডিও ক্লিপটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই রিটা জুন্ডাকেম্পার আমাদের গ্রুপে পোস্ট করেছেন৷ এবং নিজে মন্তব্য করেছেন, ‘‘এমনটাই চাই আমরা, মানব ধর্মই হোক সকলের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্ম৷’’ রিটার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন হোয়াট অ্যাপ গ্রুপের অন্যরাও৷

Nurunnahar Sattar, DW-Mitarbeiterin Bengali Programm
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/A. Islam

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে সাধারণ রাজনীতিকদের মতো নন তা প্রায় সকলেরই জানা৷ কিন্তু তারপরও নির্বাচনে কোনোভাবেই পরাজয় মেনে না নেওয়া, ভোটে কারচুপির অভিযোগ কিংবা প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়তে না চাওয়া, কথায় কথায় আইনি লড়াইয়ের হুমকি দেওয়ার মতো উদ্ভট কান্ডগুলো কেন করছেন তিনি? প্রশ্ন রেখেছিলাম মার্সেল শ্রায়াররের কাছে৷ একটি বীমা কোম্পানিতে চাকরিরত মার্সেলের ঝটপট উত্তর, ‘‘আমি অবশ্য ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অন্য কিছু আশা করিনি৷ স্থান কাল না ভেবে তিনি নিজেকে সবসময় ‘বস' ভাবেন, ছাড় দেয়া বা পরাজয় স্বীকার তিনি চেনেন না৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট যদি জোকার সেজে বিশ্বকে আনন্দ দেয়, আমরা তা উপভোগ করতেই পারি৷’’

আসলে মার্কিন নির্বাচন অনেকের কাছেই বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিলো৷ নির্বাচনের দিন, পরের দিন, বিশেষ করে ভোট গণনায় যখন বাইডেনের ভোটের পাল্লা ভারি হচ্ছিলো তখন থেকে আমার মোবাইলে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে বাংলা, ইংরেজি, জার্মান, হিন্দি ভাষায় হাস্যরসে ভরপুর নানা জোকস, কার্টুন, ছোট ছোট ভিডিও শেয়ার করেছে নানা প্রান্ত থেকে বন্ধুরা, ভাইবোনেরা ৷ যার প্রায় সবই ছিলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার গল্প নিয়ে৷ টাম্পকে মানুষ এতটা অপছন্দ করে? কিন্তু তারপরও তো তিনি ভোট পেয়েছেন সাত কোটি, কম নয়!  যাই হোক, বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে উপহাস করা মজার মজার ভিডিওগুলো কিন্তু করোনাকালে আমার কাছে প্রচণ্ড গরমে এক পশলা বৃষ্টির মতো মনে হয়েছে! আমি ভাবছি, খনিকের আনন্দের জন্য এসব ভিডিও ,কার্টুন তৈরি করতে গিয়ে কতই না বুদ্ধি আর সময় খরচ হয়েছে৷ ইশ, এসব সুক্ষ্ম বুদ্ধি আর সময় যদি অন্য কাজে লাগানো হতো!