ফেটেলের কিছু মনে থাকেনি
২৫ মার্চ ২০১৩এই কাজ অথবা অকাজটা হয়ত ফেটেল করতেন না, যদি তিনি জানতেন, এর প্রতিক্রিয়া কতোটা তীব্র হবে – এবং শুধু মার্ক ওয়েবারের তরফ থেকেই নয়৷ এককালে অ্যালাঁ প্রোস্ত আর আয়ারটন সেন্নার মধ্যে নাকি এইরকম হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, বলছেন পণ্ডিতরা৷ প্রোস্ত এবং সেন্না-ও ছিলেন দলীয় সতীর্থ৷
যাই হোক, সেপাং-এ জিতে ফেটেল বেশীক্ষণ উল্লাস করার সুযোগ পাননি৷ রেসের পরে যে টিম ফটো তোলার কথা ছিল, সেটাও বাতিল করে দেওয়া হয়৷ ওয়েবার তো প্রকাশ্যেই রাগারাগি করেন৷ ফেটেলকেও যা হোক একটা ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয়, অন্তত বিবৃতি হিসেবে৷ আর দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান হর্নারও তাঁর মন্তব্যে বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করেননি৷
দলীয় স্ট্র্যাটেজি
দু'টি করে গাড়ি এবং দু'জন করে ড্রাইভার নিয়ে প্রতিটি দল রেসে নামে৷ কাজেই একটি দলের দু'জন ড্রাইভার যেমন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী, তেমন আবার সহযোগীও বটে৷ এখানেই দলীয় স্ট্র্যাটেজির প্রশ্ন ওঠে৷
রবিবার রেড বুলের স্ট্র্যাটেজি ছিল, প্রথম স্থানটি দখল করতে হবে, তা ফেটেলই করুন আর ওয়েবারই করুন৷ দু'জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলবে শেষ পিট স্টপ অবধি৷ তারপর রেসের শেষ দশ ল্যাপে কেউ আর কাউকে ওভারটেক করার চেষ্টা করতে গিয়ে ঝুঁকি বাড়াবে না৷
জেতার নেশা
ওয়েবার তাঁর শেষ পিট স্টপ থেকে ট্র্যাকে ফেরেন ফেটেলের ঠিক আগে – এবং ইঞ্জিন বাঁচানোর জন্য কিছুটা ধীরে চালাতে শুরু করেন, যেমন তাঁকে বলা হয়েছিল৷ এক্ষেত্রে ফেটেলের সুবোধ বালকের মতো ওয়েবারের পিছনে থাকার কথা৷ ওয়েবার নাকি চমকে যান যখন তিনি আর দুল্যাপ পরেই দেখেন, ফেটেল তাঁকে ‘আক্রমণ' করছেন৷ শুধু তাই নয়, ফেটেল ওয়েবারকে অবলীলাক্রমে পাশ কাটিয়ে শেষমেষ রেস জেতেন৷ অর্থাৎ ওয়েবারের দশম গ্রঁ প্রি জয়ের পরিবর্তে ঘটনাটা হয়ে দাঁড়ায় ফেটেলের ২৭তম গ্রঁ প্রি জয়৷
‘‘আমি ইঞ্জিনের গতি কমিয়ে দিলাম৷ আমাকে (রেডিও-য়) দু'বার আশ্বাস দেওয়া হলো যে, আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে রেস দেবো না৷ দুঃখের কথা, কোনো রিওয়াইন্ড বাটন ছিল না,'' বর্ণনা করেছেন ওয়েবার৷ তিন সপ্তাহ পরে পরের রেস, চীনে৷ তার আগে ওয়েবার নাকি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সমুদ্রে সার্ফিং করে মাথা ঠাণ্ডা করবেন৷
আর দলীয় প্রধান হর্নার বলেছেন, ‘‘সেবাস্টিয়ান ব্যাপারটা নিজের হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়৷ দলের জন্য মোট ৪৩টা পয়েন্ট সুরক্ষিত করার চেয়ে ওর জেতার নেশাটাই বড় ছিল৷''
ফেটেল দুঃখিত
ফেটেল বলেছেন, তিনি যে ভুল করেছেন, সেটা নাকি রেস শেষ হওয়ার আগে তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়নি৷ ‘‘আমি গুবলেট করেছি৷ একটা ভালো অজুহাত কি ভালো কাহিনি শোনাতে পারলে আমিই খুশি হতাম, কিন্তু তা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ আমি গুবলেট করেছি, সেটাই হল সত্য৷ মার্ক যে হতাশ এবং দলও যে অখুশি, সেটা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি৷''
বুঝতে পারারও সময় হয়েছে৷ জার্মানির স্যুডডয়েচে সাইটুং পত্রিকা লিখেছে: ‘‘তিনি যে ট্র্যাকে অত্যন্ত স্বার্থপর, ফেটেল এ অভিযোগ এই প্রথম শুনছেন না৷'' এক্ষেত্রে ২০০৯ সালে টার্কিশ গ্রঁ প্রি-তে ফেটেল আর ওয়েবারের কলিশনের কথা স্মরণ করা যেতে পারে৷
অমোঘ যুক্তি
তবে শেষমেষ ফেটেলের বিরুদ্ধে দলের তরফ থেকে কোনোরকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি মনে কেন না, এমন আভাস দিলেন ওয়েবার স্বয়ং৷ ‘‘ও যথারীতি প্রোটেকশন পাবে,'' বলেছেন ওয়েবার৷ একে তো ফেটেলের বয়স ওয়েবারের চেয়ে অনেক কম, তায় ফেটেল দলের হয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন৷ এ অমোঘ যুক্তি ওয়েবারের কাছেও বোধগম্য৷
এছাড়া ফেটেল তো রেসের মাঝপথেই রেডিও মারফত দলকে জানিয়েছিলেন: ‘‘মার্ক বড়ই স্লো৷ ওকে আমার পথ থেকে সরাও৷'' তবুও ফেটেল যখন নিজের গরজে ওয়েবারকে ওভারটেক করলেন, তখন ক্রিস্টিয়ান হর্নারকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘এটা একটা বোকামো৷''
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এপি)